কেমন চলছে চাঁদপুরের সিনেমা হলগুলো?

রিফাত কান্তি সেন
Published : 26 August 2017, 06:35 PM
Updated : 26 August 2017, 06:35 PM

বাঙালির রয়েছে নিজস্ব সত্তা ও সংস্কৃতি। এ সংস্কৃতি পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। 'সিনেমা' দেখে না এমন মানুষ সমাজে খুঁজে পাওয়া দুস্কর।সিনেমা ছাড়া যেনো, মনে আসে বিষাদের বান। বিনোদনপ্রেমীদের তো সিনেমা ছাড়া কথাই নেই। সিনেমা দেখে না এমন মানুষ হয়তো হাতে গোনা দু-একজনও খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর সে সিনেমা যদি সিনেমা হলে গিয়ে দেখা না হয় তবে ভাতই তো হজম হওয়ার কথা নয়! এগুলো সে-কালের কথা।বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন।এক সময় সিনেমা হল গুলোতে দর্শকের উপচে পরা ভিড় থাকলে ও, বর্তমানে হল মানুষকে টানে না।অনেকেই বলেন,'আধুনিক প্রযুক্তি,তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশ,সিনেমা এর মান নিয়ে ও প্রশ্ন,ইন্টারনেটে সহজেই ছবি দেখা যায়- এছাড়া ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত চলচ্চিত্রে কালো থাবা, অশ্লীলতা,সাংস্কৃতিক আগ্রাসন সহ বিভিন্ন প্রতিকূলতার জন্য জনগন সিনেমা হল থেকে মুখ সরিয়ে নেয়।

বর্তমানে চলচ্চিত্রে নগ্নতা না থাকলেও বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে বাঙালি দর্শকরা ঝুঁকছেন বিদেশি চ্যানেলের দিকে। এতে করে হলে গিয়ে ছবি দেখার প্রবনতা কমেছে। একসময় খুব দর্শক মুখর ছিলো হলগুলো। বাবা- মা, ভাই-বোন, পরিবার-পরিজন সকলকে নিয়েই ছবি দেখতে মানুষ সিনেমা হলে যেতো। আবহমান কাল থেকে বাঙালির সংস্কৃতির এক বিশেষ দিক ছিলো সিনেমা। বাঙলা সিনেমা দেখার জন্য উৎসুক জনতা অপেক্ষার প্রহর গুনতো। বিশেষ করে বড় পর্দায় চলচ্চিত্রের শোগুলো দেখতেই দর্শকদের যত বাহানা ছিলো।

তবে সেই চিত্র হারিয়ে যেতে বসেছে।এক সময় চাঁদপুর জেলায় মোট নয়টি সিনেমা হল ছিলো। যার মধ্যে সদরে তিনটি এবং বাকী ছয়'টি উপজেলা শহরগুলোতে। সদরের সিনেমা হলগুলো হলো – কোহিনুর, -ছায়াবানী,  চিত্রলেখা। সদরে তিনটি সিনেমা হলের মধ্যে টিকে আছে মাত্র ১ খানা। চিত্রলেখা এবং ছায়াবানী; উভয়ের অস্থিত্ব এখন আর নেই। দুটি'ই বন্ধ হয়ে এখন সে স্থানে মার্কেট তৈরি হয়েছে।

এবার উপজেলার শহরগুলোর দিকে ফিরে তাকাই। মতলব দক্ষিনের 'কাজলী' সিনেমা হল,'রাজমহল' সিনেমা হল। 'কাজলী' চললে ও 'রাজমহল' বন্ধ। ফরিদগঞ্জের 'মনিহার' যা কিনা দর্শক স্বল্পতায় বন্ধ।এমনকি অস্থিত্ব ও নেই এখন। হাজীগঞ্জের 'সান্তনা' সিনেমা হল চললেও; বন্ধ আছে রাণী সিনেমা হল। আর এসব তথ্যই আমরা পেয়েছি জেলা তথ্য অফিস থেকে।


চাঁদপুর জেলা তথ্য অফিসের কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, 'আগে নয়টি সিনেমা হল থাকলেও এখন জেলায় মাত্র তিনটি সিনেমা হল রয়েছে। দর্শক ভেড়াতে না পারার কারণে দর্শকরা সিনেমা হলমুখী হচ্ছে না। তিনি বলেন, '২০০১-২০০৬ সিনেমা জগতে অশ্লীলতার কারণে এবং বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনের কারণে দর্শক খড়ায় পরেছে সিনেমা হলগুলো। তাই লোকসান না গুণে সেসব সিনেমা হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিক পক্ষ। বর্তমানে সেই অশ্লীলতার ধাক্কা কাটিয়ে উঠলেও আধুনিক প্রযুক্তির কাছে মার খেয়ে যাচ্ছে সিনেমা হলের ব্যবসা।'

প্রযুক্তির আধুনিকতা, পাইরেসি, সিনেমা স্বল্পতা, ভিনদেশী ছবির কপিরাইট, টিভি চ্যানেল বেড়ে যাওয়া, স্বল্প ছবির রিলিজের কারণে সিনেমা হলগুলোতে ভিড়ছে না দর্শক। আর এতে করে সিনেমা হলগুলো বন্ধ না করে উপায় খুঁজে পাচ্ছে না মালিকপক্ষ। আশি এবং নব্বইর দশকের দর্শক ঝর্ণা মিত্র। বাংলা সিনেমায় যখন রাজ্জাক, ববিতা, কবরী, সালমান শাহ, প্রবীর মিত্রদের জয়-জয়কার ঠিক তখন সিনেমা হলগুলোর বর্ননা আমাদের দিয়েছেন। তখন তাঁরা সিনেমা হলগুলোতে টিকেট কেটে ছবি দেখতে ভিড় জমাতেন। অনেক সময় টিকেট ফুল হয়ে সিনেমা না দেখেই ফিরে আসতে হতো। চাপা কষ্ট নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। কেননা তখন ছবি দেখার জন্য সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে উৎসাহ কাজ করতো।

আর এখনকার পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখন আর হলে গিয়ে ছবি দেখা হয়ে উঠে না। আর চাঁদপুরে তো এখন হল নেই বললেই চলে। ছায়াবানী আর চিত্রলেখা সিনেমা হলে বেশি সিনেমা দেখেছি। সিনেমা হলগুলো শুনলাম দর্শক খরায় এখন বিলুপ্ত। পুরাণবাজারের কোহিনুর সিনেমা হল যদিও টিকে আছে তবু 'ঈদ' ছাড়া তেমন জমে না।

তবে চাঁদপুরের বড় দুটি সিনেমা হল না থাকলেও সেসব সিনেমা হলের নামানুসারে স্থানগুলোর নাম এখনো মানুষের কাছে পরিচিত। এখনো চিত্রলেখা মোড় এবং ছায়াবানীর মোড় নামেই স্থানগুলো বাঁচিয়ে রেখেছে সিনেমা হলগুলোর নাম। নইলে হয়তো নতুন প্রজন্মের অনেকেই জানতোই না চাঁদপুরেও দুটি বড় সিনেমা হল ছিলো।