বাড়ছে ধর্ষণ…

রিফাত কান্তি সেন
Published : 7 Sept 2017, 06:42 PM
Updated : 7 Sept 2017, 06:42 PM


মানবতা আজ অসুস্থ মানুসিকতায় পরিনত হয়েছে।পত্রিকার পাতা গুলোতে তাকালেই ধর্ষণ,লুটতরাজ,হত্যা,অপমৃত্যুু সহ সামাজিক নানা অপরাধের চিত্রগুলো দেখছি আমরা।যদি দেশের অভ্যন্তরীন কথা চিন্তা করি; তবে যে অমানবিক দিকটির কথা চিন্তা করতে হয়, তা হলো নারী ধর্ষণ,শিশু ধর্ষণ।আর দেশের বাইরের কথা চিন্তাা করলে-করতে হবে পার্শবর্তী দেশ মায়ানমারের, আরাকান রাজ্যের মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর বার্মা সেনাদের বর্বরোচিত হামলার কথা।শিশু,কিশোর,বয়-বৃদ্ধ,নারী-পুরুষ কেউই বাদ পরেনি বার্মা সেনাদের নির্যাতনের কবল থেকে।"জীব হত্যা মহাপাপ" গৌতম বৌদ্ধ বলে গেলেও শিষ্যরা যেনো বিধর্মীদের হত্যার মধ্যে দিয়ে পূণ্যের কাজ করে বেড়াচ্ছেন।অসুস্থ মানুসিকতা উভয় ক্ষেত্রেই বিদ্যমান।


যদিও আমরা আবেগপ্রবন এক জাতি,কিন্তু স্বার্থের কাছে ইহা প্রতিবারই বিসর্জিত।মানবিকতা অনেকটাই নিচে নেমে গেছে;তাইতো প্রাইমারী পড়ুয়া নারী শিশুদের থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষিত কেউই বিশাক্ত সাপ এর ছোবল থেকে রক্ষা পায় না।অসুস্থ মানুসিকতার বলি হচ্ছে তাঁরা।তনু থেকে শুরু করে রূপা কেউই রক্ষা পায়নি বিশাক্ত এসব সাপদের ছোবল থেকে।এমনকি ছোট্ট শিশুর্ওা। কয়েকদিন আগে কুমিল্লায় ধর্ষণের শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছিলো তনুর।ঠিক এর ক'দিন পরই টাঙ্গাইলে আবার ও বাসে গনধর্ষণের শিকার রুপা। এছাড়া প্রতিদিনই কোন না কোন ধর্ষণ, হত্যা, লুন্ঠনের খবর আমরা শুনতে পাই।

কেউ, কেউ বলবে,'নারী কেনো ঘরের বাইরে যাবে? এত রাতে ঘরের বাইরে কী? একা-একা রান্তায় চলা ঠিক নয়।'
এসবই বলবে কিছু সুশীল সমাজের লোকেরা। তাইলে প্রশ্ন হচ্ছে এটা কী নারী স্বাধীনতার পরিপন্থী? স্বাধীন দেশে নারী কেনো ভয়ে পরাধীন থাকবে? তথ্য বলছে, চাঁদপুরে দু'মাসে ২৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের শিকার ৬ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশু। ১০ই জুলাই থেকে ২৪শে আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সী নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের রেজিস্টার্ড খাতা ও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে।
চাঁদপুর জেলা শহরের হাজীগঞ্জ উপজেলা, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ, হাইমচর ও চাঁদপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।৬ই আগস্ট ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা গ্রামের (৬) বছর বয়সী শিশু,১৬ই আগস্ট ফরিদগঞ্জের দক্ষিণ ধানুয়া গ্রামের (৯) বছর বয়সী শিশু ২৩শে আগস্ট দুপুরে ফরিদগঞ্জে (১৫) বছর বয়সী এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয় । ১৯শে আগস্ট হাজীগঞ্জ উপজেলার সুদিয়াপূর্ব কাজী বাড়ি গ্রামের (১১) বছর বয়সী শিশু,১৩ই আগস্ট চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৭ বছর বয়সী শিশু, ৯ই আগস্ট মতলব উত্তর একলাসপুর গ্রামের (১০) বছর বয়সী শিশু, ওই দিন শাহরাস্তি উপজেলার বাতনতলা গ্রামের (৯) বছর বয়সী শিশু, ১৭ই জুলাই উত্তর তারাবুনিয়া সখিপুর গ্রাামে (১০) বছর বয়সী শিশু, ১৬ই জুলাই চাঁদপুর তেঁতুলতলা গ্রামের (১৩) বছর বয়সী শিশু, ৮ই জুলাই কচুয়া উপজেলার নওগাঁও গ্রামের (১৩) বছর বয়সী শিশু ধর্ষণের শিকার হয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এছাড়াও দুইমাসে জেলার বিভিন্নস্থানে সর্বমোট ১২ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এসব শিশুদের বয়স ৬ থেকে ১২/১৩ বছর বয়সী। এসব ধর্ষণের ঘটনায় বিভিন্ন উপজেলায় বেশ কয়েকজন ধর্ষণকারীকে আটক করা হয়েছে। আর বাকি ঘটনায় ধর্ষণকারীরা পলাতক কিংবা মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।


দিনের পর দিন শুধু এই অপকর্মগুলো বেড়েই চলেছে।মানবিক দৃষ্টি যেনো নূইয়ে পড়েছে।দয়া-মায়া যেনো বিসর্জন দিয়ে ফেলেছে কিছু মানুষ। প্রতিবাধ হচ্ছে কিন্তু তা আবার অন্য ঘটনায় ঢাকা-চাপা খেয়ে যাচ্ছে।এমতবস্থায় কিছু মানুষের মানুসিকতা হীনমন্যতায় রুপ নিয়েছে।কেনো মানুষের এই মূল্যবোধের অবক্ষয়? কেনো মানুষ অমানুষে রুপান্তর হচ্ছে? যেনো এটি এখন প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে।অমানুষ এসব নরপশুদের হাত থেকে বাদ যাচ্ছে না কোমলমতী শিক্ষার্থীর্ওা। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ধর্ষকদের আইনের কাছে সোপর্দ করা হলে ্ও ;আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে ঠিকই এরা জামিনে বেড় হয়ে যাচ্ছে।ফলস্বরুপ আবার অপকর্মে জড়ানোর সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। জামিনে মুক্তির কারণে আত্মবিশ্বাস বাড়ছে অন্য নরপশুদের।আইনজীবিদের প্রতি অনুরোধ জানাবো ধর্ষকদের পক্ষ হয়ে আইনি লড়াইয়ে আপনারা যাবেন না। কঠিন শাস্তি হলেই আর কেউ এমন অনাকঙ্খিত ঘটনা, ঘটাতে সাহস পাবে না।


লেখক:
পার্টাইম শিক্ষক : কড়ৈতলী উচ্চ বিদ্যালয়
সহ-সম্পাদক:কড়ৈতলী রামকৃষ্ণ আশ্রম।
নাগরিক সাংবাদিক, সংবাদকর্মী