সুযোগ আর মূল্যায়নে মেলে প্রতিভা

রিফাত কান্তি সেন
Published : 31 Oct 2017, 11:50 AM
Updated : 31 Oct 2017, 11:50 AM

সুযোগ আর মূল্যায়নে মেলে প্রতিভা। বলছিলাম যোগ্যতার মূল্যায়নের কথা। পৃথিবীতে সবাই শিক্ষিত। যে যার মত করে তাঁর শিক্ষাকে বিস্তার করে সমাজে। আমি তাই কাউকে মূর্খ বলতে নারাজ।

বলছিলাম এক ক্ষুদে শিশুর কথা। ক'দিন আগে আমাদের এলাকায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। যার মূল উদ্যেক্তা এলাকার শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব প্রনবানন্দ মজুমদার ও তার ছেলে তন্ময় মজুমদার। ওনারা আমার কাছে কিছু শিল্পীর সন্ধান চাইলো। আমি দিলাম। তবে তারা কেউই মূল ধারার সংগীত শিল্পী নয়। কেউ শখের বসে আবার কেউ শিল্পী হতে চেষ্টা চালাচ্ছে। বেশ ক'জনই যন্ত্র বাজিয়ে গান গাইতে জানে। তবে তার মধ্যে দুটি শিশু যন্ত্র (হারমোনিয়াম) বাজাতে জানে না। তাই আয়োজকরা অনেকটা দো-টানায় পড়ে গেলো।ভাগ্যিস মিউজিক, বাদ্যকর ছিলেন।

এরা কিন্তু সবাই ছিলো স্থানীয় শিল্পী। বিশেষ করে আমি যে বিদ্যালয়ে পার্টাইম জব করি, সে বিদ্যালয়েরও কয়েকজন ছিল। বড় কথা হলো সেই ইনস্ট্রুমেন্টস (Instruments) না বাজাতে পারা দু'জনও ছিল। আমি খুব চিন্তায় ছিলাম। কারণ ওখানে অনেকে ছিলো গানের শিক্ষকের কাছে পরীক্ষিত শিল্পী। আর ওরা তো গানই শিখে না। তবে কন্ঠ যে ভাল ছিল তা নিয়ে ছিলাম নিঃসংশয়।  যাক অনুষ্ঠান হলো, কোন একটা কারণে অপমানিতও হলাম। সর্বশেষ ওরা দুজন ভাল গানও গাইলো।

হঠাৎ আজ (২৯-১০-১৭) তারিখ আমি স্কুলে পৌঁছে যখন অফিসে প্রবেশ করছিলাম। ঠিক তখন পিছনে থেকে দৌড়ে এসে একটি মেয়ে বলে উঠলো, 'স্যর আমার কাকু আমাকে গান শিখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এমন কি সংগীত শেখার জন্য শিক্ষক এবং হারমোনিয়াম ও কিনে দিয়েছে। আর এ সবই সেদিন আমি গান গেয়েছি বলে সম্ভব হয়েছে। তারা আমার গানে সন্তুষ্ট হয়েছে।'

শুনে আমি অনেক খুশি হলাম। আর মনে মনে চিন্তা করলাম, কোন একটা কারণে যদিও অপমানিত হয়েছি তবু আমি একটা ভাল কাজের অংশীদারী ছিলাম বলে নিজের কাছে অনুপ্রাণিত বোধ করছি। আমি সব সময় ভাল কাজ করার চেষ্টা করি। সর্বদা হয়ে উঠে না সময়। আবার ভাল কাজ করতে গিয়ে অপমানিত হয়েছি বহুবার।

এখন প্রশ্ন হলো এ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আজ সেই মেয়েটা প্রতিভা দেখাতে পেরে নিজের শখের তরীতে উঠতে পেরেছে। নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ মিলেছে তার। সে স্টেজে গান গেয়েছে বলেই তার গান শেখার জন্য শিক্ষকও মিলেছে। মিলেছে শখের হারমোনিয়াম। মেয়েটির বাবা কয়েক বছর আগে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। দেখলেন তো সুযোগ পেলেই মানুষ তার নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। বড় হয়ে মেয়েটি বড় সংগীত শিল্পী হউক- এটাই প্রত্যাশা।