চাঁদপুরে দরিদ্র শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ‘আলোর দিশারী’ স্কুল

রিফাত কান্তি সেন
Published : 27 Nov 2017, 08:09 AM
Updated : 27 Nov 2017, 08:09 AM

চাঁদপুরে ছিন্নমূলে বেড়ে উঠা শিশুদের স্বাক্ষরতার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে আলোর দিশারী নামক একটি ভ্রাম্যমান বিদ্যাপীঠ। দারিদ্রতা অনেক শিশুকে করেছে ঘর ছাড়া, আবার দারিদ্রতাকে জয় করে পৃথিবীতে অনেকে হয়েছেন বিখ্যাত। আর এই সব কিছুর সাথে শিক্ষা ছিল মিশে। শিক্ষা গ্রহণ করতে সকালবেলা যখন মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত শ্রেণির শিশুরা বইয়ের ব্যাগ নিয়ে ছুটে চলেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে; ঠিক তখন সুবিধা বঞ্চিত কিছু শিশু তা অবলীলায় দেখে শুধু তাকিয়ে থাকে। অবিরত চোখে অশ্রু ঝড়লেও কিছু বলার নেই। তেমন কিছু শিশুদের প্রতিনিয়ত শিক্ষা গ্রহনের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণী। পূজা, ফারিয়া এবং দীপংকর সহ কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া তরুণ-তরুণী শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে দরিদ্র শিশুদের মাঝে।

চাঁদপুর সদরের বড়স্টেশন মোলহেডের পাশেই তাঁদের স্কুল। ২০১৬ সাল থেকে শুরু হয় খোলা আকাশের নিচে পাঠক্রম। একসময় রেলওয়ে কোয়াটার এর সামনে বিদ্যাপীঠটির কার্যক্রম পরিচালিত হত। বর্তমানে বড়স্টেশন রক্ত ধারার পাশে প্রতিদিন বিকাল বেলা চলে পাঠকার্যক্রম। ভ্রাম্যমান এই বিদ্যালয়টি আজও এগিয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। এখনো খোলা আকাশের নিচেই ক্লাস করে এখানকার কোমলমতী শিশুরা। বিদ্যালয়টিতে যারা শিক্ষা গ্রহন করে তারা সবাই দরিদ্র ঘরের সন্তান। লেখাপড়া চালিয়ে নেয়ার মত সামর্থ্য নেই তাদের পরিবারগুলোর। আবার অনেকে শিক্ষার প্রতি অনুরাগীও না। তাই এসব শিশুদের শিক্ষার প্রতি অনুরাগী করে গড়ে তোলার নিমিত্তে বিদ্যাপীঠটি স্থাপন করা হয়।

নিরক্ষর শিশুদের অক্ষর জ্ঞান শিখান:


অক্ষর-জ্ঞান হীন শিশুদের সাক্ষরতা দানে ২০১৬ সাল থেকে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে "আলোর দিশারী" নামক ভ্রাম্যমান বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়টির শিক্ষিকা ফারিয়া বলেন, 'আমরা সেইসব শিশুদের আমাদের পাঠশালায় অন্তর্ভুক্ত করি যাদের পরিবার পড়ালেখার খরচ বহনে অক্ষম। আমরা তাদের শিক্ষার প্রাথমিক ধারণা, স্কুলে ভর্তি উপযোগী করার জন্য যা যা শেখানো প্রয়োজন তা-ই শিক্ষা দিয়ে থাকি।' এখানে বই, খাতা, কলম সবই আমাদের পক্ষ থেকে দিয়ে থাকি। মাঝে মাঝে পথচারীরাও আমাদের শিক্ষার্থীদের বই, খাতা কেনার জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

ওরা শিখছে খোলা আকাশের নিচে:-


খোলা আকাশের নিচে শিখছে শিশু- এযেনো একটি প্রবাদ বাক্য। কিন্তু না বাস্তবতা বলছে মাটিতে বসেই এসব দরিদ্র শিশু তাঁদের পাঠ কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছে। শত অভিমান তবু যেনো শেখার নেশা তাঁদের পেয়ে বসেছে। এক সময় বড় স্টেশন রেলওয়ে কোর্ট সংলগ্ন একটি ভবনের বারান্দায় পাঠক্রম চালালেও এখন বড় স্টেশন মোলহেডের, রক্তধারার পাশেই খোলা আকাশের নিচে চলে পাঠক্রম। প্রায় ৩০ এর মত শিশু এখানে প্রতিদিন বিকেল বেলা শিক্ষাগ্রহণ করতে আসেন। হাসি-খুশি আর আনন্দের মধ্যে দিয়ে চলে পাঠদান। অ, আ থেকে শুরু করে ক,খ-া,-ি১,২ সহ শিক্ষার প্রাথমিক বিষয়গুলো এখানে শেখানো হয়। বিশেষ করে নিজের নাম লেখা, বাবা-মায়ের নাম লেখা সহ স্কুল উপযোগী করে তাদের গড়ে তোলা হচ্ছে।

ওরা স্বপ্ন দেখে বড় হওয়ার:-


স্বপ্ন আছে বলেই মানুষ বেঁচে আছে। স্বপ্ন দেখে না এমন মানুষ দুনিয়ায় খুঁজে পাওয়া দুস্করও প্রায়। তারেক 'আলোর দিশারী স্কুলের শিক্ষার্থী, সে স্বপ্ন দেখে একদিন বড় কিছু হবে। স্কুল থেকে কী শিখেছো জানতে চাইলে সে বলে, 'অ-আ-া ,ি১,২ সহ নিজের নামটি এখন লিখতে পারি। আমার খুব ভাল লাগছে পড়ালেখা করতে পেরে। একদিন পুলিশ অফিসার হমু।'  এমন করেই ছোট্ট শিশুটি তার স্বপ্নের কথা শুনিয়েছে। তারেকের মত প্রতিটি শিশুই শিক্ষার আলো পেয়ে উজ্জীবিত।

বিদ্যাপীঠটির ভবিষৎ কী?


২০১৬ সাল থেকে ফারিয়া, পূজা, দীপংকররা যে বিদ্যাপীঠটি এগিয়ে নিতে নিরলস পরিশ্রম করছে এর ভবিষৎ জানতে চাইলে ফারিয়া বলেন, 'আমরা শিক্ষার্থী, পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষার আলো দেওয়ার নিমিত্তে আমরা বিদ্যাপীঠটির কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছি। পথচারী এবং আমরা নিজেরা নিজেদের পকেটের টাকা খরচ করে বিদ্যালয়টি পরিচালনা করি। রৌদ্র-বৃষ্টিতে পোহাতে হয় বিড়ম্বনা। কেউই উল্লেখযোগ্য ভাবে আমাদের পাশে এসে সাহায্যের হাত বাড়ায়নি। কোন সুহৃদয়বান ব্যক্তি যদি আমাদের স্কুলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, আমাদের একটি স্থায়ী যায়গায় যদি পাঠদানের ব্যবস্থা করে দেয় প্রশাসন, তবেই আমাদের বিদ্যাপীঠটির ভবিষৎ উজ্জল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।