অট্টালিকার জানালা দিয়ে কখনো সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের দেখেছেন? সংকীর্ন এই জানালা দিয়ে কতটুকুই বা দেখা যায়। আজ এই দেশেরই কেউ চিকিৎসা করাতে সিঙ্গাপুর যাচ্ছে আবার কারো সন্তান অজ্ঞতা আর সামর্থের অভাবে সামান্য ডায়রিয়ায় মারা যাচ্ছে। অথচ সামান্য একটু সাহায্য, একটু সচেতনাই পারে এসব মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন করে দিতে। সেই উপলব্ধি থেকেই ফরাসী লেখক ডমিনিক লা পিয়েরে লিখেছিলেন "City of joy"। কলকাতার আনন্দনগর বস্তিবাসীর মানবেতর জীবনযাপনের চিত্র তুলে ধরেছিলেন সেই বইতে আর সেই বই থেকে প্রাপ্ত অর্থের অর্ধেক দিয়ে লেখক গঠন করে দেন "City of joy foundation" যা আনন্দনগর বস্তির অবস্থা আমূল পরিবর্তন করে দেয়। সংগঠনটি এখনো কাজ করছে সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য। এই গল্প বলছিলেন বুয়েট ছাত্র বেন জামান। লা পিয়েরের অনুপ্রেরনায় উদ্দীপ্ত হয়ে গত ১৯ মে বেন একক প্রচেষ্টায় ফেইসবুকে "U-aid" নামে একটি গ্রুপ তৈরী করেন এবং এই গ্রুপের কয়েকজন মিলে ঢাকার কয়েকটি বস্তি এলাকায় তারা জরিপ পরিচালনা করেন। এলাকাগুলো ছিল কমলাপুর টিটিপাড়া কলোনী, কাওরানবাজার রেললাইন সংলগ্ন বস্তি এবং রায়েরবাজার টিলাবাড়ী মোড়ের নামাই বস্তি। দেখা যায় নামাই বস্তির অবস্থাই সবচেয়ে খারাপ। ময়লা আর ওয়াসার নোংরা পানির উপর বাশের ঘর করে বসবাস করছে এসব মানুষ। ডায়রিয়া, কৃমি এসব তাদের নিত্যসঙ্গী। এসব মানুষদের সাহায্য করার লক্ষ্যে বেন এবং তার বন্ধুরা "You: Heal" নামে একটি প্রজেক্ট হাতে নেয় যা গত ১৫,১৬ এবং ২৩ সেপ্টেম্বর এই ৩দিনে বাস্তবায়ন করা হয়। বেন এর অনুপ্রেরনায় উদ্দীপ্ত হয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজ, বুয়েট, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এবং আরো কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মোট ৭১ জন ছাত্র ছাত্রী এই ক্যাম্পেইনে অংশ নেয়।
১৫ সেপ্টেম্বর ইউ-এইড নামাই বস্তিবাসীর পরিবারগুলোতে সাবান, ম্যাজিক টুথ পাউডার, স্পঞ্জের স্যান্ডেল, এবং নেইল কাটার বিতরন করে। এছাড়াও স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে প্রতিটি পরিবারকে সচেতন করা হয়। বস্তির ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সবার হাত ধুইয়ে নখ কেটে দেয়া হয়। পরদিন ১৬ তারিখ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র ছাত্রীরা বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে এসব পরিবারের সব সদস্যদের মেডিকেল হিস্টোরী নেয় এবং তাদের সাধরন অসুখ যেমন ডায়রিয়া, খোস পাচড়া, রক্তশূন্যতা, কৃমি ইত্যাদিতে আক্রান্ত রোগীদের চিহ্নিত করে। পরে এই তথ্যের ভিত্তিতে চিকিৎসকদের পরামর্শে ২৩ তারিখে এই দলটি প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করে। ওষুধের মধ্যে ছিল, স্যাভলন, ওরস্যালাইন, কৃমির জন্য অ্যালবেন, আয়রন ট্যাবলেট, খোস পাচড়ার জন্য স্ক্যাবেক্স এবং গ্যাস্ট্রিক এর জন্য ওমেপ। এছাড়াও অন্যান্য রোগে ভোগা রোগীদেরকে পরামর্শ দেয়া হয় নিকটস্থ সরকারী হাসপাতাল যেমন ঢাকা মেডিকেল কিংবা মিটফোর্ড হাসপাতালে কম খরচে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য। ইউ-এইড কে এই দিনে সহায়তা করে দেশের ইতিবাচকতা খুজে বের করার প্রত্যয়ে তৈরী হওয়া আরেকটি গ্রুপ সুখবর২৪.কম । ইউ-এইডের উদ্যোমী এই তরুনেরা প্রায় ৮০ টি পরিবারে এসব ওষুধ বিনামূল্যে বিতরন করে এবং এর ব্যাবহার শিখিয়ে দেয়। কৃমির ওষুধগুলো তখনি খাইয়ে দেয়া হয়।
এসব ওষুধ এবং অন্যান্য উপকরনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে বেন জানান, এই সমস্ত অর্থ এসেছে সদস্যদের নিজস্ব টাকা থেকে। কেউ ৫০ কেউ ১০০ এভাবে সামর্থ অনুযায়ী দিয়ে প্রয়োজনীয় অর্থ যোগাড় করা হয়েছে। বেন আরও জানান তাদের ইচ্ছা ছিল এখানে মশক নিধন, পরিচ্ছন্নতা এবং পয়ঃনিষ্কাশন ব্যাবস্থার সংস্কার নিয়ে কাজ করার তবে সেক্ষেত্রে অর্থায়নে ইউ-এইড মেম্বারদের একক প্রচেষ্টা যথেষ্ট হবে না বলে কাজটি করা যায় নি। তিনি আশা করেন তাদের এই কর্মকান্ডে অনেকেই উৎসাহিত হবেন এবং নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করবেন।
সুখবর২৪.কম এর এডমিন এবং ইউ-এইড সদস্য অপু জানান, "এমন চমৎকার উদ্যোগ আমাকে অবাক করেছে। এভাবে তরুণেরা এগিয়ে এলে দেশ সামনে এগিয়ে যেতে বাধ্য। এদেশের নেতিবাচকতা দূর করতে এরকম উদ্যোগ খুব ভাল ভূমিকা রাখবে। আরো বড় পরিসরে এটি পরিচালনার জন্য যেটুকু সাহায্য প্রয়োজন সেটা যদি পাওয়া যায় তবে আশা করি সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য ইউ-এইড এর এই উদ্যোগ সফল হবে এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।"
ইউ-এইড এর পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে বেন জানান, নামাই বস্তিতেই আরো কিছু কাজ করা হবে যেমন এই বস্তির কয়েকজনকে বাছাই করে তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক সাধারন প্রশিক্ষন দেয়া হবে এবং সাধারন অসুখগুলোর প্রতিকার ও প্রতিরোধ সম্পর্কে জানানো হবে যেন তারা নিজেরাই নিজেদের যত্ন নিতে পারে। প্রয়োজনীয় সাহায্য পেলে এখানে পয়ঃনিষ্কাশন এবং পরিচ্ছন্নতা নিয়ে কাজ করা হবে। এছাড়াও শীত বস্ত্র বিতরনের ইচ্ছা আছে বলেও তিনি জানান।
সব রোগ বালাই আর অজ্ঞতা এভাবেই ধুয়ে যাক! ছবি তুলেছেন- ফারসিদ রায়হান
কৃমি আক্রান্ত শিশু,ছবি তুলেছেন হাসিবুজ্জামান
চলছে মেডিকেল চেকআপ-ছবি তুলেছেন- ফারসিদ রায়হান
ওষুধ বিতরন, ছবি তুলেছেন- নাসিফ দস্তগীর
মূল উদ্যোগতা বেন জামান, ছবি ফারসিদ রায়হান
সুখবর টীমের একাংশ, ছবি তুলেছেন হাসিবুজ্জামান
বাদ যাবে না কোন শিশু, ছবি- ফারসিদ রায়হান
বৃষ্টিতেও থেমে নেই কাজ, ছবি তুলেছেন- বেন জামান
বাচ্চাদের নখ কেটে দেইয়া হচ্ছে, ছবি ফারসিদ রায়হান
হাত ধোবার পালা, ছবি- রিজু রহমান
আমাদের ছায়ায় বড় হোক ওরা, ছবি- ফারসিদ রায়হান
ইউ-এইড এবং সুখবরের ফেইসবুক ঠিকানা–
ইউ-এইডঃ http://www.facebook.com/groups/215557395151811/
সুখবরঃ http://www.facebook.com/Sukhobor
আলোকিত তরুনদের এই আলো ছড়িয়ে পড়ুক সারাদেশে আর দূর হয়ে যাক সমস্ত অন্ধকার।