করোনাভাইরাসের কালেও গবেষণায় নিষ্ক্রিয় এক দেশ! 

কাজী আজিজুল ইসলাম
Published : 11 Jan 2012, 03:19 AM
Updated : 4 April 2020, 01:16 PM

দারুণ এই খবরটি  এপ্রিল ছেপেছে 'জেরুজালেম পোস্ট' ইজরায়েলি দৈনিকটি জানিয়েছে, প্যালেস্টাইনের আল কুদ্‌স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদল এমন একটি রেসপিরেটরি মেশিন তৈরি করেছে যা আইসিইউতে গুরুত্বর করোনাভাইরাস সংক্রমণের রোগীকে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে সহায়তা করবে বিশ্ববিদালয়ের প্রফেসর আবু কিশেক বলেছেন, তাদের উদ্ভাবিত কম্পিউটারাইজড ভেন্টিলেটরটি রোগীকে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় ভেন্টিলেটলেশন দিতে স্বক্ষম তবে এর উৎপাদন খরচ খুবই কম

মাত্র ২৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির মেডিকেল  ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অর্জন এটি নিরন্তর ইজরায়েলি নিষ্পেষণে থাকা পরাধীন এক দেশের নতুন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মানুষের জন্য কার্যকর একটি অস্ত্র তৈরি করে ফেলেছে! এরই মধ্যে তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস

এদিকে ইজরায়েলি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা সংস্থা এমনকি স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোও দু'মাস ধরে করোনাভাইরাস সংশ্লিষ্ট গবেষণায় এগিয়ে গেছে আরও অনেক বেশি ইজরায়েলি স্টার্টআপ হসপিটেক শুধু ভেন্টিলেটরই নয়, ভেন্টিলেশনের কারণে সৃষ্ট সমস্যা দূর করার ডিভাইসও তৈরি করে সরবরাহ শুরু করেছে হাসপাতালগুলোতে 

প্রায় তিন মাস ধরে করোনাপ্রতিরোধক ভ্যাকসিন নিয়ে দিনরাত কাজ চলছে ইজরায়েলি দুই গবেষণা সংস্থায় ইসজরায়েল ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল রিসার্স-আ্ইআইবিআর ৩১ মার্চেই জানিয়েছে এরই মধ্যে ইঁদুর জাতীয় প্রাণীর উপর একটি করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করেছে তারা ফলাফল দেখে পরের ধাপটি হবে মানবদেহে পরীক্ষা আরও বেশি এগিয়েছে বিখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিগাল এর গবেষকরা জানিয়েছেন জুনের মধ্যেই তারা মানবদেহে করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করবেন

ইউরোপে ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ আর আটলান্টিকের ওপারে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যপকভাবে ছড়িয়ে গেছে করোনাভাইরাস সেখানে চিকিৎসক, নার্স, হাসপাতালকর্মীসহ সবাই রোগীদের নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে অনেক জীবন টিকিয়েও রাখছে মানুষ। এ লড়াই চালিয়ে যেতেই হবে

হাসপাতালের লড়াইয়ের সাথে সাথে ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ফার্মাল্যাবগুলোতে কাজ চলছে।  ম্যালেরিয়া প্রতিষেধক ক্লোরোকুইনসহ নানা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের প্রাকসূত্র ধরে অ্যান্টিকরোনাভাইরাস ওষুধ উদ্ভাবনের জন্য দিনরাত কাজ করছেন গবেষকরা। করোনাভাইরাসে প্রথম আক্রান্ত চীনে মিলিটারি ল্যাব, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণা সংস্থা, ফার্মা অ্যান্ড বায়োটেক কোম্পানি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন গবেষণায় এরই মধ্যে কয়েক ধাপ এগিয়েছে। ধাপে ধাপে পরীক্ষার পর ভ্যাকসিন বাজারে আনতে সময় লাগে সাধারণত দেড় থেকে দুই বছর। সেটিও এখন কমিয়ে আনতে কাজ করছে তারা।        

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে মানুষের লড়াইকে শক্তিশালী করতে, সহজ করতে আর চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত করতে বড় নেপথ্যশক্তি হবেন গবেষকরা সবচে কার্যকর মেডিক্যাল ডিভাইস, মেডিক্যালকর্মীদের সর্বাধুনিক সুরক্ষাপোশাক, কভিড১৯ সারানোর কার্যকর ওষুধ আর, একটু বেশি সময় লাগলেও, সবচে বেশি জরুরি করোনা-ভাকসিন উদ্ভাবনের কাজগুলো তারাই  করবেন

কিন্তু বাংলাদেশে কী হচ্ছে?

বিনয় না করে, সত্যি বলতে গেলে বলতে হবে করোনাভাইরাসের কালেও সংশ্লিষ্ট গবষেণায় সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ গত সপ্তাহে সিপিডির ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিক হিসেবে আমার প্রশ্ন ছিল, করোনাসংশ্লিষ্ট গবেষণায় বা্ংলাদেশের ফার্মা অ্যান্ড মেডিক্যাল রিসার্চ সেক্টরে কেন কিছু হচ্ছে না?

গবেষণা সংস্থাটির সন্মানীয় ফেলো, অর্থনীতিবিদ . মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন- কিছু কাজ হচ্ছেতিনি গণস্বাস্থ্য এবং . বিজন কুমার শীলের করোনাভাইরাস টেস্ট কিট উদ্ভাবনের কথা  জানান। দেশের স্বাধীনতার সময় জন্ম নেয়া গণস্বাস্থ্য একটি অলাভজনক সামাজিক প্রতিষ্ঠান। তাদের ওষুধ কারখানা, মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালও আছে। তবে অনেকেই বলবেন, বিনিয়োগ ও বাজার অংশীদারিত্ব বিবেচনায় গণস্বাস্থ্য এ খাতের বড়দের তুলনায় অনেক ছোট। ফার্মা সেক্টরের মেইনস্ট্রিমেও অনেকেই গোণায় ধরেন না গণস্বাস্থ্যকে। তবে মুনাফাচিন্তা কম থাকলে আর মানুষের প্রতি অকৃত্র্রিম ভালোবাসা থাকলে দুর্বল ঢাল তলোয়ার নিয়েও অনেক কিছু করা যায় তারই ইঙ্গিত দিলেন চাপে থাকা গণস্বাস্থ্য এবং মানবহিতৈষী গবেষক, অণুজীববিজ্ঞানী বিজন কুমার শীল। 

কিন্তু আমরা যেই বিশাল মেইনস্ট্রিম ফার্মা ও বেসরকারি মেডিকাল সার্ভিস সেক্টর নিয়ে জাতিকে অনেক সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছিবিশ্বের ফার্মাবাজার জয় করাসহ অনেক স্বপ্নের ফানুস উড়িয়েছি তারা এখন কী করছে?

এদেশের ফার্মা সেক্টরে বিলিয়ন ডলার কোম্পানি আছে একটি; ব্যবসা অর্ধ বিলিয়ন ডলার বা বেশি এমন হবে আরও গোটা পাঁচেক এই সেক্টরে এখন কোম্পানির সংখ্যা এখন দুইশ'র বেশি। এদের অর্ধেকই আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থা নিযে স্থাপিত হয়েছে গত ১৫-২০ বছরের মধ্যে কিন্ত জাতির ব্যাপক জীবনঝুঁকির সময়েও তথাকথিত সম্ভাবনাময় এই খাতে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক ওষুধ এবং প্রতিরোধক ভ্যাকসিন নিয়ে কোন গবেষণা নেই, কোন কার্যক্রম নেই"এতো আধুনিক এই খাত নিয়া এখন জাতি কি করিবে?"

বিশ্ববিদ্যালয় আর গবেষণাসংস্থাগুলোও নিষ্ক্রিয়! 

সারাবিশ্বেই মেডিকেল রিসার্চ, ফার্মা-রিসার্চ, বায়োলজি রিসার্চ কিংবা ভাইরাস রিসার্চ সবকিছুতেই সবসময় সক্রিয় থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহ, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের গবেষণাগার এবং স্বাস্থ্য খাতের সরকারি বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলো আমাদের দেশে সেসব প্রতিষ্ঠানগুলো এখন কী করছে?

বাজেট কম, অভাব, দক্ষ লোক নেই- এমন নানা অজুহাতে তারা পার করেছে দশকের পর দশক! স্বাধীন দেশের বয়স প্রায় অর্ধশত বছর হয়ে এলো দেশের সতেরো কোটি মানুষের জীবন এবং স্বাভাবিক মৃত্যু যখন ঝুঁকিতে। এমন সময়েও নিষ্ক্রিয় থাকছে আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো! দায়িত্ববোধহীনতা, অজুহাতচর্চা আর ফাঁকিবাজিতে সময় পার করেছেন  এগুলোর পরিচালকরা। আর এই অমানবিক নিষ্ক্রিয়তা ও দায়িত্বহীনতার মূলে আছে সরকারি সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রিয় কর্মকর্তারা এবং নীতিনির্ধারক রাজনীতিবিদরাই 

বোধের জাগরণ হোক করোনাকালেই। 

ইজরায়েলি নির্যাতনে নিষ্পেষিত দরিদ্র প্যালেস্টাইনের পঁচিশ বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরাও যদি পারে, মাত্র নব্বই লাখ মানুষের দেশ ইজরায়েলের গবেষকরা যদি পারে- তবে মধ্য আয়ের পথে দৌড়ানো সতের কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ কেন তা পারবে না? এখন কঠিন সময়; জীবন বাঁচানোর গবেষণাও কেন হবে না এই দেশে এর জবাব এবার নিতেই হবে আমাদের, আর জবাব দিতেই হবে সংশ্লিষ্টদের