জীবন যখন শুকায়ে যায়, করুনা ধারায় এসো

রীতা রায় মিঠু
Published : 21 Jan 2012, 02:39 PM
Updated : 21 Jan 2012, 02:39 PM

ইদানিং আমার দৈনন্দিন জীবনে ছোট্ট একটু পরিবর্তন এসেছে। আমি আগে অবসর সময়টুকু গল্পের বই পড়ে, গান শুনে কাটাতাম। বেশ ভালই কেটে যাচ্ছিল আমার সময়। কিনতু বেশ কিছুদিন আগে আমার এক ফেসবুক বন্ধু কি মনে করে যেনো আমাকে তাদের একটি কবিতার ওয়েবসাইটে লিখতে অনুরোধ করে। বেশ কয়েকবার অনুরোধ করেছে, ফলে বন্ধুকে খুশী করতে গিয়ে খেয়ালের বশেই খুবই মামুলী ধরনের একটি ছোট্ট গল্প লিখে পোস্ট করেছিলাম ওদের সেই সাহিত্য ওয়ালে। আমার সেই 'মামুলী' গল্পটা কিভাবে যেনো ঐ সাইটের পাঠকদের খুব মনে ধরে গিয়েছিল। বলতে দ্বিধা নেই, প্রশংসা শুনে আমার খুব ভালো লেগে গিয়েছিল। আমি আরেক ধাপ এগোলাম। ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর উপর একটি নাতিদীর্ঘ কলাম লিখে পাঠিয়েছিলাম বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক বরাবর। বাংলাদেশ প্রতিদিনের ১৮ আগষ্ট সংখ্যায় আমার লেখাটি ছাপা হয়ে গেল। আর এরপর থেকেই আমাকে 'লেখার ভূতে' ধরে ফেললো। ভুতই বলবো, ভুতে ধরেছে বলেই এখন আর নিজেকে থামাতে পারছিনা, হাবিজাবি লিখেই চলেছি। এই সেদিনও প্রিয় ব্লগে একজন পাঠক আমাকে 'এইসব ছাইপাশ' লেখা থেকে বিরত থাকতে বলেছে। কিনতু আমি থামতে চাইলেও বরতমান ঘটনাবলী আমাকে এখনই থামতে দিচ্ছেনা। আসলে 'ছাইপাশ' লিখতে গেলেতো জ্ঞানী বা মহাপন্ডিত হতে হয়না, ছাইপাশ লেখার গ্রহনযোগ্যতাও তেমন থাকেনা, তাই আপাতত নির্ভয়েই লিখে যাচ্ছি।

আমার লেখার কোন ধারাবাহিকতাও থাকেনা, যখন যা মনে আসে তাই লিখে ফেলি। এই যেমন কিছুদিন আগেই লিখেছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের ছাত্র 'জুবায়ের হত্যা'কে বিষয়বস্তু করে। আমি নিজেও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী, সে কারনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে যে কোন সংবাদে আমি একটু হলেও সচকিত হই। কিনতু এই ঘটনাটি আমার ভেতর অন্যরকম আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। একটি তরতাজা প্রানকে কিভাবে শুধুমাত্র পিটিয়ে পিটিয়ে নিথর করে ফেলে দেয়া—আমি কোনভাবেই মেলাতে পারছিলামনা বর্তমান সময়ে মানুষের মানসিক অস্থিরতা ঠিক কোন পর্যায়ে পৌঁছালে পরে 'মানবিকতা' নামক শব্দটি তাদের হাত থেকে ছিটকে পড়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়! স্বীকার করতে অসুবিধা নেই লেখাটি লিখতে গিয়ে আমার মাতৃহৃদয় মুহূর্তে মুহূর্তে বেদনায় নীল হয়ে যাচ্ছিল। পরে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে, জেরা চলছে, পত্রিকায় পড়লাম, জেরা থেকে যতটুকু জানা গেছে, দুই বছর আগে জুবায়ের তার হত্যাকারীদের দুইজনকে বেধড়ক পিটিয়েছিল, তাই তারা প্রতিশোধ নিয়েছে। ভাল কথা, আমরাও জানি কোনকিছুই একপক্ষে ঘটেনা, সব ঘটনার পেছনে কারন থাকে। তাই বলে এমন নৃশংস প্রক্রিয়ায় প্রতিশোধ! দেশেতো এখনও আইন-কানুন আছে, আইনের আশ্রয় না নিয়ে নিজের হাতেই আইন তুলে নিয়ে এমন পাশবিক কায়দায় শাস্তি দিতে গিয়ে ফলটা কি হলো। জুবায়ের মরলো, এবার হত্যাকারীদেরও সাজা হবে, কি সাজা হতে পারে ধারনা নেই, তারপরেও কঠিনতম সাজা হবে। এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৬/৭টি প্রতিভাবান তরুনের জীবনের করুন সমাপ্তি!

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানেই মানবতার আরেকটি নিষ্ঠুর লঙ্ঘন দেখলাম। হ্যাঁ, এই মুহূর্তে যে খবরটি সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে সেই হাবিবুর রহমানের কথাই বলতে চাইছি। বিএসএফ কর্তৃক হাবিবুর রহমানের উপর অত্যাচারের যে ষ্টীম রোলার চালানো হয়েছিল গত ডিসেম্বারের ৯ ও ১০ তারিখে, তারই একটি মোবাইল ভিডিও চিত্র প্রকাশ করে ভারতেরই এনডিটিভি। ভিডিওটি দেখে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল যে আমরাই সভ্যজগতের প্রতিনিধি! মানুষের স্বাভাবিক বোধ, অপরের প্রতি মমতা, পরমতসহিষ্ণুতা দিনে দিনে কিভাবে যেনো হারিয়ে যাচ্ছে।

আবার আমার লেখার কথায় একটু আসতেই হচ্ছে। ১৫ই জানুয়ারী ছিল আমেরিকার মার্টিন লুথার কিং এর জন্মদিন। আমেরিকাতে আছি বলেই লুথার কিংকে নিয়ে একটু লিখতে প্রেরনা পেয়েছিলাম, লিখেওছিলাম এবং ব্লগে পোস্ট করেছিলাম। পুরো লেখা জুড়ে ছিল মার্টিনের কথা, প্রসঙ্গক্রমে মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর কথা একটু বুড়ীছোঁয়ার মত করে ছুঁয়ে গেছিলাম। তা পড়ে দুই একজন পাঠক কিছুটা উত্তেজিত হয়েই (কিছু পাঠক আছেন যারা বঙ্গবন্ধুর নামটি সহ্য করতে পারেননা) আমাকে নিন্দামন্দ করেছেন। তাতে আমি অবশ্য তেমন কিছু মনে করিনি, জলে নামলে পা ভিজবেই, তবে মানুষের সহনশীলতা কতটা কমে গেছে তা এইসকল মন্তব্য পড়েও আঁচ করা যায়। এই মন্তব্যের সাথেই একজন আবার 'উলংগ হাবিবুর' এর উপর বিএসএফ এর অত্যাচারের ভিডিও ক্লিপ যোগ করে দিয়েছেন এবং আমাদের মত 'ভারত প্রেমিকদের' দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন এই বলে যে এই সমস্ত গরীব দুঃখীদের জন্য কি আমাদের প্রান কাঁদেনা নাকি! কথায় কথা বাড়ে বলে আমি এই ধরনের আক্রমনাত্মক মন্তব্যের উত্তর দেইনা। কারন আমি নিজে জেনেশুনে কোন অন্যায় করিনা, আমার কোন ক্ষমতাও নেই কোন কিছুর বিরূদ্ধে প্রতিবাদ করার। যদি প্রতিবাদ করার ক্ষমতা থাকত তাহলে দেশীয় জুলুমবাজদের হাতে ভিটে মাটি ছেড়ে দিয়ে এমন যাযাবরের মত থাকতে হতোনা। আমি বিখ্যাত কেউ নই যে আমার কলমের জোরে আমি সব অন্যায়কে ধুলিসাৎ করে দিতে পারবো।

তারপরেও বলি, সেই পাঠকের লিঙ্ক পাঠানোর অপেক্ষায় আমি ছিলামনা, গল্পের বই পড়ার সময় না পেলেও সংবাদপত্র আমি নিয়মিত পড়ি। অনলাইনের কল্যানে প্রতিটি খবর আমরা খুব দ্রুত পেয়ে যাই যেহেতু আমাদের এখানে ইন্টারনেট খুবই ফাস্ট। তাই অনলাইনে পোস্ট হওয়ামাত্রই আমি খবরটি পড়ে ফেলেছি। পড়েই আমার প্রথম যে কথাটি মনে এসেছে, তা হলো, মানুষ আর মানুষ নেই! কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীর দেহটা দেখেও একই কথাই মনে হয়েছে, মানুষ আর মানুষ নেই। মনে পড়ে কি, সেই 'পার্থ প্রতীম সাহা'র কথা, গত বিএনপি সরকারের আমলে 'পাংকু বাবরের' নির্দেশে পুলিশের কাস্টডিতে নিয়ে কি পেটানোটা পিটিয়েছিলো, সেই আমলেই বিচারক মহোদয় পর্যন্ত আঁতকে উঠেছিলেন পার্থ নামের সেই একেবারেই নির্দোষ 'অবোধ প্রানীটির' দিকে চেয়ে! তখনও আমার মনে হয়েছিল, মানুষ আর মানুষ নেই! আরেকটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো, কোন এক হরতালের সময়, আহারে! ডিউটিরত এক পুলিশের কন্সটেবলকে মসজিদের ভেতরে টেনে নিয়ে গিয়ে টুপিধারীরা ইঁট দিয়ে মাথাটা থেঁতলে দিয়ে মেরেই ফেলেছিল! আমার তখনও চোখ ফেটে জল এসেছিল আর একটা কথাই মনে হয়েছিল, মানুষ আর মানুষ নেই! এতক্ষনতো দেশের ভেতরের কথা বললাম, হতভাগী ফেলানীর কথা বলে চোখের জল ফেললাম, চোখের জল কিনতু আমার আরেকজনের জন্যও পড়েছিল। সে আওয়ামীলীগের গত শাসনামলের ঘটনা, কোন এক বিএসএফ এর জওয়ানকে আমাদের বিডিআর এর জওয়ানেরা গুলী করে শুধু মারেনি, তার মৃতদেহটাকে পশুর মত বেঁধে বাঁশে ঝুলিয়ে গ্রামের দিকে নিয়ে এসেছিল, মানবতার চরম অবমাননা হয়েছিল সেদিন। জানিনা সত্যিকারের দেশপ্রেমিকেরা সেদিন জয়ের আনন্দ পেয়েছিলেন নাকি একজন মানুষের এহেন মৃত্যুতে কষ্ট পেয়েছিলেন। আরেক পাঠক মন্তব্য করেছিলেন যে 'মুজিবের মৃত্যুতে দেশের একজনও চোখের পানি ফেলে নাই'। আরও অনেকেই হয়ত এই পাঠকের সাথে সহমত পোষন করে থাকেন, তাদেরকেই বলি, ফেলানীর পাশাপাশি কি 'শেখ রাসেল' এর কথা মনে হয়না! আপনাদের মন কি একবারও কাঁদেনা সেই ছোট্ট ছেলেটির জন্য! মুজিব না হয় দোষী, দোষী শেখ কামাল, জামাল দুই ভাইই, শেখ মনিও দোষী, কিন্তু কি দোষ করেছিল বঙ্গবন্ধুর পুত্রবধুরা, কি দোষ করেছিল আরজু মনি(অন্তঃসত্তা ছিল), কি দোষ করেছিলেন বেগম মুজিব! প্রান যাদের কাঁদার, তাদেরতো এইসব নৃশংস অমানবিক ঘটনার কথা শুনে এমনিতেই কাঁদার কথা! মুজিবকে সহ্য করতে পারিনা বলে তাঁর ছেলে রাসেল এর জন্য প্রান কাঁদবেনা, এমন আইন কি কোথাও লেখা আছে! বা 'ভারতে প্রেমী' বলেই ফালানী বা হাবিবুরের জন্য প্রান কাঁদবেনা এমন আইনওতো কোথাও লেখা নেই! তাছাড়া আমার প্রান কাঁদলো কি কাঁদলো না তাই বা অন্যকে জানাতে যাবো কেনো! প্রানটা আমার, প্রানের হাসি কান্নাটাও একান্তই আমার। এইজন্যই বিডিয়ার ক্যাম্পে যে নিষ্ঠুর কায়দায় বিডিয়ারের অফিসারদের মেরে ফেলা হলো, স্বাধীন দেশে এমন হত্যাযজ্ঞ, এগুলো নিয়ে কথাই বলতে ইচ্ছে করেনা আমার। কথায় কথা বাড়ে! তার উপর আমি কলামিস্টও নই যে গুছিয়ে লিখতে পারবো। এগুলো ভাবতে গেলেই মাথাটা এলোমেলো হয়ে যায়।

জীবন যখন শুকায়ে যায়, করুনা ধারায় এসো' গানটি রচনাকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি ধারনা করেছিলেন, তখন থেকে শতবর্ষ পরেও আমাদের জীবনটা শুকিয়েই যাবে! চারিদিকে এত হতাশা, এত বঞ্চনা, শুধুই আর্তের ক্রন্দন, মানবাধিকার লঙ্ঘন—এ যেনো এক হাহাকারে ভরা সময়। সেই 'দেশপ্রেমিক' পাঠকদের উদ্দেশ্যেই বলি, লাগে আমারও অনেক কষ্ট লাগে। আপনারা অনেকেই নোংরা ভাষায় মন্তব্য করেন, তা দেখেই আমার কষ্ট লাগে, আর এভাবে মানুষ মেরে ফেলা, এতো পুরোপুরি মানবতার চরম অবমাননা। কষ্টতো লাগবেই। তবে কষ্ট লাগার পাশাপাশি নিজের দিকটাও বিচার করে দেখি। প্রতিবাদ করার আগে ভাবতে চেষ্টা করি, আমার তরফ থেকে কোন গলতি ছিলো কিনা।

ছোটবেলাতে বন্ধুদের সাথে খেলতে গিয়ে যদি ঝগড়া লাগতো, অন্যদের মায়েরা নিজের বাচ্চাদের পক্ষ নিয়ে ঝগড়া করতে আসত আর আমার মা আমাদের কান ধরে ঘরে এনে আমাদেরকেই উলটা শাসন করতেন। উনার বক্তব্য ছিল ঝগড়া ব্যাপারটা এক পক্ষে হয়না, আমরা নিশ্চয়ই কোন না কোনভাবে সুযোগ দিয়েছিলাম, তাই প্রতিপক্ষ কোমড় বেঁধে নামার সুযোগ পেয়েছে। তখন থেকেই আমাদের পাঠ নেয়া হয়ে গেছে, ফলে পরবর্তী জীবনে কারো সাথেই ঝগড়া বা কোন রকম শত্রুতা হয়নি। বড়লোক, গরীবলোক সব লেভেলের লোকের সাথেই উঠাবসা করতে হয়েছে, নিজের দিকটাকেই সবসময় বিবেচনায় রেখেছি।

ফেলানী বা হাবিবুর এর ঘটনাতো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচিত হচ্ছে। আমি চুনোপুঁটির অধম চুনোপুঁটি, এইসব বড় বড় ব্যাপারে কতটুকুই বা বলতে পারি! দেশের ভেতরের সন্ত্রাস নিয়েইতো কিছু বলতে পারিনা, আর এতো রাষ্ট্রিয় পর্যায়ে সন্ত্রাস। এইসব ব্যাপার দেখে যাওয়াই ভালো। কারন এখন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোবে। দুই দেশেরই একের বিরূদ্ধে অপরের অভিযোগ আছে, 'অবৈধ অনুপ্রবেশের' ব্যাপারে, অভিযোগ আছে চোরাচালানের ব্যবসা নিয়ে, তা এখন যখন রাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ে নাড়া পড়েছে, দেখা যাচ্ছে ঘটনা সত্য। দুই দেশের অভিযোগই সত্য। সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে ঘুষ লেনদেন ঠিক থাকে বলে অবাধে এইসকল বেআইনী কাজ চলে আসছে যুগের পর যুগ। মাঝে মাঝে দুই একটা দান ফসকে গেলোতো সব যায় ফাঁস হয়ে।

আজকের পত্রিকাতেই দেখলাম, গত শুক্রবার ভারতীয় এক নাগরিককে বিজিবির জওয়ানেরা গুলি করে মেরে ফেলেছে, আর এই কারনেই লুৎফর রহমান নামের বিজিবির জওয়ানকে ভারতীয়রা ধরে নিয়ে বিএসএফ এর কাছে হস্তান্তর করেছে। শেষ খবরে জানা গেছে সেই বিজিবির জওয়ানকে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। খবরে প্রকাশ, ঐ ভারতীয় নাগরিক মাদক দ্রব্য নিয়ে এসেছিল বাংলাদেশ সীমান্তে। অর্থাৎ ভারতীয় নাগরিকের বাংলাদেশে 'অবৈধ' প্রবেশ। সীমান্তরক্ষীদের কাজই হচ্ছে যে কোন 'অবৈধ' প্রবেশ ঠেকানো। বিজিবি তা করেছে। তা এখানেই প্রশ্ন, হাবীব কেন গিয়েছিল ভারত সীমান্তে! হাবীবের বাবা সাইদুর রহমানের ভাষ্য অনুযায়ী হাবীব গরু চোরাচালানী করত এবং হাবীবের বাবা এটাও বলেছে যে ঐ এলাকার প্রচুর মানুষ গরু চোরাচালান করে। বিএসএফকে ঘুষ দেয় আর ভয়শূণ্যচিত্তে চোরাকারবার করে চলেছে। গত শুক্রবার যে ভারতীয় চোরাচালানীকে বিজিবি গুলী করে মেরেছে, খবরে প্রকাশ তিন চোরাচালানীকে বিজিবির সদস্যরা আটকেছিল। তাদের মধ্যে কি কথাবার্তা হয়েছিল তাতো অনুমান করাই যায়। ঘুষের রফা হয়নি বলেই নিশ্চয়ই সেই চোরাচালানীর প্রানটাই দিতে হয়েছে যেমনটি 'ইজ্জত' দিতে হয়েছে গরুচোরাকারবারী হাবীবুরকে। ফালানীর কথা মনে হলেই আমার মায়ের মনটা কেঁদে উঠে। এই ফালানীকেওতো বাংলাদেশের ভেতরে এসে মেরে যায়নি বিএসএফ এর সদস্যরা। ফালানীরা পেটের দায়েই হোক বা বাড়তি রোজগারের আশায় হোক, অবৈধ পথেই গিয়েছিল ভারতে। নিশ্চয়ই ফালানীদের কাছেও ঘুষ চেয়েছিল বিএসএফ, দিতে পারেনি বলেই হয়ত গুলী করে দিয়েছে ছোট্ট শরিরটা ঝাঁঝরা করে। এসব যত পড়ি ততই মন খারাপ হতেই থাকে, মন খারাপ হতে হতে এক সময় কেমন ডিপ্রেসড হয়ে যাই।

ব্যক্তিগতভাবে আমি কোন হত্যাই সমর্থন করিনা। প্রত্যেকটি জীবনের দাম আছে। একটাই জীবন, বেঁচে থাকাটাই কত আনন্দের। পেটের জ্বালায় মানুষ কত নীচু কাজ করে, পেটের জ্বালায় মানুষ কত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। পেটের দায়ে পড়েই বিজিবি বা বিএসএফ এর জওয়ানেরা যার যার সীমান্ত পাহারা দেয়ার মত অতিশয় বিরক্তিকর এক চাকুরী করে থাকে। বিরক্তিকর বললাম এই জন্য যে তাদের জীবনটা একেবারেই একঘেঁয়ে, নিরানন্দময়, বেতনও কম, ছুটিছাটা নেই বললেই চলে (বিডিয়ার হত্যাকান্ডের পরে কোন একটি লেখাতে পড়েছিলাম, তখন জানতামনা পরবর্তীতে এইসব তথ্য কাজে লাগতে পারে, তাই সংরক্ষন করে রাখিনি), হাতে থাকে বন্দুকের মত এমন হাত নিশপিশ করা অস্ত্র, যুদ্ধও নেই কোথাও, বন্দুকটা ব্যবহারতো করতে হবে। তাই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রায়ই গুলী ছোঁড়াছুঁড়ি নামক খেলা হয়ে থাকে। ফেলানী, হাবিবুর, বাঁশে ঝুলে থাকা নাম না জানা বিএসএফ জওয়ান অথবা সেদিনের সেই মাদক চোরাচালানী, এরাই হচ্ছে দুই দলের নিশানা প্র্যাকটিসের টার্গেট। এদের কথা প্রকাশিত হয়েছে বলেই আমরা জেনেছি, বাকীদের কথা প্রকাশিত হয়না বলে সেই হতভাগ্যদের জীবন উৎসর্গ করেও কোন লাভ হয়না, না নিজের লাভ না দেশের লাভ! এমন একটি বিষয় নিয়ে লিখতে গিয়ে কলমও আর চলতে চায়না।

কেবলই কবিগুরুর গানের চরন দুটি হৃদয়ে বাজে,
"জীবন যখন শুকায়ে যায়, করুনা ধারায় এসো
সকল মাধুরী লুকায়ে যায়, গীত সুধারসে এসো"।