মানবকম্পের অপেক্ষায়

রোদেলা নীলারোদেলা নীলা
Published : 5 May 2015, 06:00 PM
Updated : 5 May 2015, 06:00 PM

একটা করে দিন বিদায় হয়,আর একটা রাতের অপেক্ষায় ।এভাবে জমতে জমতে অনেক গুলো দিন বস্তা বন্দী করে রাখি নিজের ঝুলিতে।সেই ভারী ঝুলিটা ক্রমাগত টেনেই চলেছি বদলে দেবার প্রত্যয়ে ।ভোরের সূর্যকে স্বাক্ষী রেখে যারা হাজার মুখের সামনে শপথ করে ,সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখায় তারাই আবার নিজ হাতে সেটাকে দুমড়ে মুচড়ে ছুঁড়ে ফেলে ডাস্টবিনে।ক্ষমতার অন্ধ ভালোবাসা তাকে এতোটাই আচ্ছন্ন করে ফেলে যে সে ভুলে যায় ভালো আর মন্দের ফারাক।এমন একটা সময় আসে ,মনে হয় তার দুষ্কর্মটাই একটা স্বাভাবিক ঘটনা।আর আমরা সেই ঘটনার বলি হয়ে আরো একটা ভারী ঝুলি ঘাড়ে তুলে নিয়ে চলতে থাকি।


পাশের দেশ নেপাল,শান্ত-শিষ্ঠ,কোন রাজনৈতিক কোন্দল নেই।কিন্তু বিধাতা খুঁজে খুঁজে সেই ঝামেলা হীন দেশটিকেই চোখের নিমিষে ধূলিতে মিটিয়ে দিল।বিধাতার মনে কি ইচ্ছা তা বোঝার সাহস বা যুক্তি আমাদের কারো নেই।কিন্তু যে দেশ গুলো্কে মানুষ নিজেই বিরাট এক ভূমিকম্প হয়ে নাড়িয়ে দিচ্ছে সেখানে ধর্মের কোন বানী আওড়ানোর প্রয়োজন নেই।।আমরা প্রতিদিন নিজের ছোড়া গুলিতেই নিজেরাই নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি।

প্রকৃতির খেলা একটা সময় থেমে যায়,শহর নিজেকে সাজায় নতুন করে।মানুষ আবারো তার সঞ্চিত শক্তি নিয়ে নতুন উদ্যোমে জীবন যুদ্ধে ঝঁপিয়ে পড়ে।কিন্তু কালো কাপড়ে বাঁধা যাদের মন তারাতো কোন দিন মনের আয়নায় নিজেকে আর দেখতে পারবে না।তাদের ভেতরের অন্ধকার দূর করবে কে?

শুধু এ দেশে নয়,দেশের বাইরের অনেক কুটনীতিবিদ সরকারের শাসন ব্যবস্থা ও নির্বাচনকে বার বার প্রশ্ন বিদ্ধ করেছে।কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তার গায়ে মোটা চামড়া দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমের দেশে চলে গেছে।আর বিরোধী দলেরা ঘরের কোনে বসে বাকবাকুম বাকবাকুম করেই যাচ্ছে যেন পরবর্তি তলোয়ারটা তারা নিজের হাতে পেয়ে যায়।গণতন্ত্র নামক শব্দটির নিরেট ঘরবাড়ি এখন পড়ার বই অথবা বাংলা ডিকশোনারির গ এর পাতায়।আমাদের মতোন স্বাধীন মুসলিম প্রধান দেশে গত দশ বছরে এমন কোন আমূল উন্নতি হয়নি যা একে বারে সোনার অক্ষরে খোদাই করা আছে।এখানে ধর্ম নিয়ে কোন ইঙ্গিত করার জন্যে আমি এতোটা ততপর নই যতোটা না তার অপ ব্যবহার নিয়ে শংকিত।

আমাদের দেশে একটা ঘটনার তদন্ত হতে হতে সেই একি ঘটনার পূনরাবৃত্তি ঘটে।সেই বি ডি য়ার অফিসারদের হত্যা থেকে দেখছি ,কোন হত্যা বা গুম হয়ে যাওয়া ঘটনার কোন ঠিকানা খুঁজে পাবার আগেই আবার আরো একটি ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটছে।তাও আবার হূবহু একি ঘটনা।তার মধ্যে ব্লগার ও লেখক হত্যা ছিল অন্যতম।আজ আবার জানলাম ,ভারত থেকে উড়ে উড়ে ঘুরে ঘুরে কোন এক আলকায়দা এসে কায়দা করে অভিজিতদাকে হত্যা করে গেছে।এমন অনেক হিসাবের মুখোমুখি আমরা প্রতিদিন হচ্ছি ,কিন্তু কোন হিসাবের কোন কুল কিনারা কেউ করতে পারছিনা।

আসলেও কি কেউ চাচ্ছি এই হিসাব গুলো মিলিয়ে দেখতে ?ছোট্ট একটা ছেলে জিহাদ নল কূপের মধ্যে মরে পড়ে রইলো।তাকে নিয়ে হাজার হাজার নিউজ দেখলাম।মন্ত্রী মিনিস্টার আর যৌথ বাহিনীর অনেক উদ্যোগের গল্প পড়তে পড়তে রাত কাটালাম।কিন্তু শেষ অব্দি সাধারন তিন জনের হাতেই উঠে এলো মৃত জিহাদের ছোট্ট শরীর।তাও আমাদের একটুও মনে হয় না-আমরা আমজনতা ইচ্ছে করলে অনেক কিছুই পারি?

শুধু চাইতে পারার শক্তিটাই আমরা সংগ্রহ করতে পারিনা।ফেইসবুক,টুইটার আর সংবাদ মাধ্যমে লিখতে লিখতে ওয়েবের পাতা শেষ করে ফেলছি।ইউটিউবের সাহায্যে প্রতিদিন এমন সব ঘটনা দেখি যা খুবি লজ্জাজনক,কিন্তু সেই লজ্জার আংটা কেবল আমাদের নাকে পড়ানো থাকে।যাদের কল্যানে পুরো পৃথবী দেখে নিচ্ছে দেশের মানুষের কুকর্মের লাইভশো তা নিয়ে তাদের কারো মাথা ব্যথা নেই।ক্যামেরার সামনে বিগলিত প্রচ্ছন্ন হাসি বার বার আমাকে মনে করিয়ে দেয়-এরা কি মানুষ?মানুষেরিতো লজ্জা বা অপমান বোধ থাকে।

আমি যখন ঘরের ভেতর পা রাখি,তখন আমার পায়ের শব্দে কারো ঘুম ভেঙ্গে গেলে খুব খারাপ আগে।ভেতরে ভেতরে একটা অনুশোচনা হয়,মুখ দিয়ে নিজের অজান্তেই বেরিয়ে যায়-"সরি মানে দুঃখিত" ।আমারা কি একজন আর একজনের কষ্টে দুঃখ করতেও ভুলে গেছি?আমরা কি বুঝতে পারছিনা –আমি যা করছি,যা বলছি পুরো পৃথিবী তার স্বাক্ষী হয়ে যাচ্ছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ।আর আমার একটা কথার জন্যে পুরো দেশের ভাব মূর্তি ক্ষুন্ন হয়ে যাচ্ছে।তাহলে কি আমরা আমাদের সাধারন বোধ টুকুও লোভের আড়ালে বালিশের তলায় রেখে দাপিয়ে বেরাচ্ছি পুরো দেশময়?

এমন প্রশ্ন গুলো কি কেবল সাধারন জনতাকেই নাড়া দিবে,তাহলে মানব কম্পে ধসে পড়বে একদিন আস্ত একটি শহর।