বাংলা গানের ফেরিওয়ালা ’পাপ্পু আহমেদ‘

রোদেলা নীলারোদেলা নীলা
Published : 22 August 2017, 08:33 PM
Updated : 22 August 2017, 08:33 PM

মায়ামি বিচের গা ঘেঁষে বাংলা ভাষাভাষীদের যে জনপদ গড়ে উঠেছে তাদের মুখে মুখে প্রায়শই যে নামটি শোনা যায় তা হচ্ছে -পাপ্পু আহমেদ। হ্যাঁ, একজন গানের পাখির কথাই বলছিলাম। সুদূর নর্থ আমেরিকার ফ্লোরিডায় থেকেও যিনি কিনা কন্ঠে ধারণ করে আছেন বাংলাদেশের গান। না, কেবল আধুনিক গান নয়, মাতৃভূমির মাটি থেকে পাওয়া সব ধরণের গানেই তিনি কন্ঠ মেলান সেটা ব্যান্ডের হতে পারে, হতে পারে তা ফোক।

https://www.youtube.com/watch?v=2X17trBm8Bk

পাপ্পু আহমেদের সঙ্গীতে হাতেখড়ি হয় ১৯৮০ সালে জাতীয় সঙ্গীত বিদ্যানিকেতনে। পরবর্তি সময় ১৯৮৮ সালের দিকে বাল্যবন্ধু বাপ্পা মজুমদার এবং আগুনের সান্নিধ্যে ACUSTIC নামে একটি বাংলা ব্যান্ড গড়ে তোলেন। ওই সময়টা এ দেশের টিনএজদের মধ্যে ব্যাপক ভাবে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন পাপ্পু আহমেদ । তিনি ছিলেন একাধারে লিড গিটারিস্ট এবং ভোকাল ।

জনপ্রিয়তা যখন শীর্ষে তখন হঠাৎ কি মনে করে তিনি পাড়ি জমান নর্থ আমেরিকায়। গান পাগল এই ছেলেটা অতো দূরে গিয়েও কিন্তু গানের সাথে সখ্যতা ভাঙ্গেননি। নিবিষ্ট মনে কাজ করে যাচ্ছেন হৈ চৈ ফ্লোরিডা এসোসিয়েশনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে। ফ্লোরিডায় যতোগুলো গুরুত্বপূর্ণ আসর জমে সেখানেই গান নিয়ে হাজির হতে হয় পাপ্পু আহমেদকে। এমন কি বিয়ের অনুষ্ঠান বা কারো জন্মদিনটাও বাদ পড়ে না, পাপ্পুর গান তাদের চাইই চাই। শুধু নর্থ আমেরিকা নয়, গানের এই ফেরিওয়ালা গান নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন সিংগাপুর, ভারত, এমন কি ইউরোপেও এবং সব জায়গাতেই তুমুল ভাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।

গান পরিবেশনায় ব্যস্ত পাপ্পু আহমেদ

ভৈরবে জন্মগ্রহণ করলেও তার ছোটবেলা কেটেছে ঢাকার মগবাজারে। ঢাকা কলেজে পড়াকা্লিন সময়েই গানের সাথে যোগাযোগটা অপেক্ষাকৃত বেশি হতে থাকে ।তিন ভাই বোনের মধ্যে সব চাইতে ছোট বলেই হয়তো বাবা মা কখনো তাকে এই নেশা থেকে আলাদা করতে পারেননি। ২০০৫ সাল থেকে একন অব্দি, এতো দীর্ঘ পথ তিনি পার করছেন প্রবাসে, কিন্তু বাংলা গান তিনি একদিনের জন্য ও ছাড়েননি। সারাদিন কঠিন পরিশ্রমের পর বাড়ি ফিরে যখন নিজের গিটারে সুর তোলেন তখন তার চোখে মুখে ফুটে ওঠে এক টুকরো বাংলাদেশ। হয়তো জীবনের তাগিদে আজ তিনি অনেক দূরে, কিন্তু বাংলা গান দিয়ে দেশের সাথে যে বন্ধন তিনি তৈরী করে রেখেছেন তা আজন্মের, কখনো ছিঁড়ে যাবার নয়।

ছবি: সাকিব আল হাসানের সাথে

ছবি: বাবা মায়ের সাথে পাপ্পু আহমেদ

জীবনের এই মাঝ পথে এসে পাপ্পু আহমেদ বার বার স্মরণ করেন তার মা মিসেস মুনিরা হেলালকে। তার উৎসাহেই তিনি এতোটা পথ আসতে পেরেছেন। প্রবাস জীবনে তাকে সব চাইতে বেশি উৎসাহ দিয়েছেন শ্রদ্ধেয় টিটন মল্লিক। এক কথায় বাংলা ভাষার মানুষগুলোর সাথে পথ চলতে পেরেছেন বাংলা গানের শব্দ উচ্চারণে, সুর আর সঙ্গীতের মধ্যেই নিজেকে খুঁজে পান এই আত্মমগ্ন গায়ক পাপ্পু আহমেদ। পুরনো দিনের বাংলা সিনেমার গানগুলোকে রিমেক করে নিজেই কম্পোজ করে দর্শকদের উপহার দেন, আধুনিক দর্শক তা লুফে নিতে ভুল করেন না।

আগামি ৬-৮ অক্টোবর ৩১তম নর্থ আমেরিকা বাংলাদেশ সম্মেলনেও মঞ্চের উদ্বোধনী হবে এই শিল্পীর কন্ঠ দিয়েই। এরপরের মাসেই আছে বিখ্যাত ক্রুজ পার্টি, সেখানেও পাপ্পু আহমেদকে দেখা যাবে তার নিজস্ব ভঙ্গিমায় চেনা কন্ঠ নিয়ে হাজির হতে, তাই সূদূর প্রবাস থেকে তিনি সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অনুষ্ঠানগুলো উপভোগ করার। আমরাও এই বাংলা গানের ফেরিওয়ালাকে জানাচ্ছি অগ্রীম শুভেচ্ছা।

পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক, বাংলা গান বেঁচে থাকুক কোটি মানুষের হৃদয় মন্দিরে।