জলের সাথে দিনরাত্রি (পর্ব -১)

রোদেলা নীলারোদেলা নীলা
Published : 5 Oct 2017, 07:29 AM
Updated : 5 Oct 2017, 07:29 AM

অন্য সব দিনের সন্ধ্যার মতোন আজো সন্ধ্যা ঘন হয়ে আসছে। ক্রমশ লোকালয় ছেড়ে চলেছি অন্ধকারের মধ্য দিয়ে, তাকিয়ে থাকতে থাকতে এক সময় টের পেলাম বিদ্যুতের আলো আর চোখে পড়ছে না। দুই ধারে কেবল পানি আর পানি, এত্তো পানি এক জন্মে আগে দেখিনি আমি। অন্ধকারে যতোদূর চোখ গেল তাতে কেবল পানিই চোখে পড়লো আর তার মাঝে মাঝে কুপির আলো। ড্রাইভারকে প্রশ্ন করলাম-ওখানে কিসের আলো? উত্তর পেলাম-পানির ওপর ঘর করেই তারা থাকে,  হারিকেন বা কুপির আলো। জলের এই মানুষ গুলো কোন দরকারি জিনিস কিনতে শহরে আসার সময় ব্যবহার করে নৌকা। এ যেন আপাদমস্তক এক জলজ জীবন। ধীরে ধীরে আমার ভয় করতে লাগলো, কিন্তু টাঙ্গুয়ার হাওর দেখার নেশা আমাকে ভুলিয়ে দিল সহসাই -আমি এক জনবহুল রাজধানী থেকে রওনা করেছি সেই সকাল ৯ টায় আর এই ভর সন্ধ্যায় পাড় হচ্ছি সুনামগঞ্জ শহরের মধ্য দিয়ে।

এর আগে যখন আমি নেত্রকোনা যাই তখন প্রথম হাওর অঞ্চল দেখেছিলাম। তবে তা আয়তনে এতো ব্যাপক নয়। সিলেটের এই সুনামগঞ্জে মোট ফসলি হাওরের সংখ্যা ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪২টি। তার মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওর সব চাইতে বড়, যার আয়তন- ৯,৭২৭ হেক্টর। আমার আসল উদ্দেশ্য, এই হাওরের বুকে স্পীড বোটে করে মেঘালয়ের দেশে চলে যাওয়া। সে জন্য অবশ্যই আজ রাত্রিটা আমাকে অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এই গরমে বিদ্যুৎ ব্যাপক ভাবে ঝামেলা করতে লাগলো। রাত ৯টা বাজতেই চারপাশে নেমে এলো নিকশ অন্ধকার। এখন আর দূর থেকে ভেসে আসা কোন কুপির আলো চোখে পড়ছে না। পানির ওপর ভেসে থাকা গ্রামগুলো ঘুমিয়ে গেছে।

ছবি: কবির আহমেদ বাবুর ক্যামেরায় টাঙ্গুয়ার হাওর

টাঙ্গুয়ার হাওর, বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি হাওর। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। মেঘালয় পাহাড় থেকে ৩০টিরও বেশি ঝরনা এসে মিশেছে এই হাওরে। দুই উপজেলার ১৮টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি। পানিবহুল মূল হাওর ২৮ বর্গকিলোমিটার এবং বাকি অংশ গ্রামগঞ্জ ও কৃষিজমি। টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্যের মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন জাতের পাখি। স্থানীয় বাংলাদেশী জাতের পাখি ছাড়াও শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে আগত পরিযায়ী পাখিরও আবাস এই হাওর। এ হাওরে প্রায় ৫১ প্রজাতির পাখি বিচরণ করে। স্থানীয় জাতের মধ্যে শকুন, পানকৌড়ি, বেগুনি কালেম, ডাহুক, বালিহাঁস, গাঙচিল, বক, সারস, কাক, শঙ্খ চিল, পাতিকুট ইত্যাদি পাখির নিয়মিত বিচরণ এই হাওরে।

টাঙ্গুয়ার হাওর প্রায় ২০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এ হাওরের বিখ্যাত মাছের মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করা যায় মহাশোলের কথা। টাঙ্গুয়ার হাওরের উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম হলো জলজ উদ্ভিদ। এছাড়া আছে হিজল, করচ, বরুণ, পানিফল, হেলেঞ্চা, বনতুলশী, নলখাগড়া, বল্লুয়া, চাল্লিয়া ইত্যাদি জাতের উদ্ভিদও। এতো বড় একটা হাওর কোন ভাবেই নৌকায় ঘোরা সম্ভব নয়, তাই চেয়ারম্যানের নির্দেশেই এক খানা স্পীড বোট জোগাড় হয়ে গেল। ছবি তোলার জন্য সঙ্গে নিলাম কবির আহমেদ বাবুকে, পানির মধ্যে দিয়ে  চলতে যেন ভুল  না হয় তার জন্য গাইড হলো নীলাদ্রির সন্তান সাদেক হোসেন, সুনামগঞ্জে যার তত্বাবধানে আমি আছি তিনি শাহনূর আলম (জাবির শাওন ভাই), যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক। এবং কান্ডারী ধরলেন দক্ষ মাঝি।পুরো রাস্তায় মাঝি ভীষন সিরিয়াস ছিলেন, কারণ যদি ভুলেও এই স্পীড বোট উলটে যায় তাহলে আমাদের কারো অস্তিত্ব পাওয়া সম্ভব না তা যতোই আমরা সাঁতার জানি না কেন। টাঙ্গুয়ার হাওরের পানির গভীরতা মাপা সম্ভব নয়, বর্ষাকালে পানি আরো দ্বিগুণ হয়ে যায়।

আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে এই লম্বা পানি পথ পাড় হয়ে নীলাদ্রিতে চলে যাওয়া। মেঘালয়ের গা ঘেষে এই জায়গাটা আগে ছবিতে দেখেছি। আজ সামনা সামনি দেখবো সেই উত্তেজনায় আমি বোটের এক মাথা ধরে দাঁড়িয়ে গেলাম, আ্মার অন্য হাতে ধরা আছে মোবাইল, চলছে -লাইভ। মরি আর বাঁচি, বন্ধুদের এই অসাধারণ দৃশ্যের সঙ্গী আগে করতে চাই।

ছবি ২: নীলাদ্রির সৌন্দর্য্য ক্যামেরায় ধারণ করেছেন কবির আহমেদ বাবু

এমন অদ্ভূত অনুভূতি এর আগে আমার হয়নি। পানির বুকে ছোট ছোট গ্রাম ভাসছে। সবাই এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় যাচ্ছে নৌকার মাধ্যমে। এই অঞ্চলে মেয়েদের মুখ একেবারেই দেখা যায় না, ভীষণ পর্দানশীল তারা কিংবা সমাজের রক্ষণশীলতার ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে থাকে সর্বদা। কিন্তু এই পানিময় জীবনে তারা কি করে বাচ্চা প্রসব করে তাই ভেবে আমি অস্থির হতে থাকলাম। এখানে ভ্রাম্যমান ডাক্তার আছে বলেই জেনেছি, কিন্তু যাদের অবস্থা খুবই নাজুক তাদের এখান থেকে নিতে হলে নৌকা ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই।

স্পীড বোট যতো এগুচ্ছে মেঘালয়ের দিক, পানির রঙ ততোই নীল হয়ে উঠছে, শরত মাখা মেঘ নুয়ে আসছে পাহাড়ের কোল ঘেষে। বড় বড় স্রোত গুলো ধীরে ধীরে শান্ত হতে আরম্ভ করেছে। ছোট ছোট বাচ্চারা পানিতে ডিগবাজি দিয়ে খেলছ, আর পাশ দিয়ে বয়ে চলে যাচ্ছে পাথর ভর্তি নৌকা। এখানে পাহাড় কেটে কেটে পাথর আনা হয় ওপাড় থেকে। মাঝের টিলা গুলো আর ওপাড়ের পাহাড়ের নিচের অংশটুকু বাংলাদেশ এর শেষ সীমানা। বড় উঁচু পাহাড়টিতেই সীমানা কাটা তারের বেড়া দেওয়া আছে। দূরে দৃশ্যমান নীলাদ্রি লেকটি এক সময় চুনা পাথরের কারখানার কাচামাল চুনা পাথরের সাপ্লাই ভান্ডার ছিল যা এখন বিলীন। বোট থেকে মাটিতে পাঁ রাখতেই মনে হলো চারপাশ থেকে আমাদের এক রাশ নীল এসে গ্রাস করছে। স্বচ্ছ জাদুকাটা নদীতে বাঁধা আছ নৌকা, ইচ্ছে হলেই যেন কোথাও হারিয়ে যেতে মানা নেই। গ্রীল দিয়ে বাঁধাই করা দোলনায় মন মতো আগে দুলে নিলাম কিছুক্ষণ, হারিয়ে গেলাম কিশোর বেলায়। তারপর নেমে গেলাম লেকের শীতল পানিতে, পাশেই আছে বেশ কয়টি ঝরনা, তাইতো পানি এতো ঠান্ডা।  নীলাদ্রির নীলের সাথে একাকার হয়ে মিশে গেলাম ক্যামেরার ফ্রেমে।

একাদশ শতক থেকে সিলেটের এ অঞ্চলের নাম ছিল লাওর রাজ্য, রাজাদের টাইটেল ছিল সিংহ। রাজা দীব্য সিঙ্ঘের মন্ত্রী পুত্র বিখ্যাত বৈষ্ণব সাধক মহাপ্রভু অদৈত আচার্য্য তার মায়ের গঙ্গা স্নানের মনোবাসনা পূরণ করতে যোগ সাধন করে। গঙ্গা ও অন্যান্য সব তীর্থ জল মেঘালয়ের কোল হতে নেমে আসা রেনুকা জেটি এখন জাদুকাটা নদী তার জলে একিভূত করেন। সেই থেকে নীলাদ্রিকে জড়িয়ে থাকা জাদুকাটার জলে চৈত্র মাসে পূণ্যস্নান হয়। পাড়ে বসে মেলা, হিন্দু মুসলিম সবাই এক সাথে এই মেলা উপভোগ করে। জাদুকাটা ঘেঁষে মানিগাঁও সেখানে রয়েছে আরেক সৌন্দর্যের কুড়েঘর, জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগান, যার রুপের পাগল লক্ষ, লক্ষ পর্যটক।

এই নীলাদ্রিতে যাবার বেশ কটা পথ আছে। যার যেটা সুবিধা হয় সেটা বেছে নিতে পারেন। আমি কিন্তু তাহিরপুর বাজার থেকে বোটে করে আসাই বেশী পছন্দ করেছি।

রুট-১:

ঢাকা থেকে শ্যামলী/মামুন/এনা এবং আরো কিছু বাস যায় সুনামগঞ্জে, যেকোন একটাতে উঠে পড়ুন, ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৫৫০ টাকা। সুনামগঞ্জ থেকে নতুন ব্রীজ পার হয়ে মোটর সাইকেল নিয়ে যেতে হবে। চাইলে টেকেরঘাট পর্যন্ত সরাসরি মোটর সাইকেল রিজার্ভ নিতে পারেন। এক্ষেত্রে ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা নিতে পারে আর মাঝপথে যাদুকাটা নদী পার হতে জনপ্রতি ভাড়া ৫ টাকা আর মোটর সাইকেল এর ভাড়া ২০ টাকা করে পড়বে।

এছাড়া আপনি সুনামগঞ্জ থেকে লাউড়ের গড় পযন্ত মোটর সাইকেলে করে যেতে পারেন ভাড়া ২০০ টাকা। তারপর যাদুকাটা নদী পাড় হয়ে বারিক্কা টিলা থেকে ১২০ টাকা ভাড়ায় টেকেরঘাট যেতে পারবেন। এখানে উল্লেখিত মোটর সাইকেল এর ভাড়া যেটা উল্লেখ আছে সেটা পুরা বাইকের ভাড়া মানে একটা বাইকে ২ জন যেতে পারবেন। তবে মোটর সাইকেলের ভাড়া আগে দামাদামি করে নিবেন তাহলে ঠকবেন না, এরা দাম কিছুটা বাড়িয়ে বলে অপরিচিত মুখ দেখলে।

রুট-২:

ঢাকা থেকে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ইন্টারসিটি ট্রেন নাম হাওর এক্সপ্রেস। ঢাকা থেকে ছাড়ার সময় রাত ১১:০০, ভাড়া ২০০ টাকার মধ্যে, সকালে মোহনগঞ্জ পৌছায়। সেখান থেকে ১ ঘন্টার রাস্তা মধ্যনগর, পিচ ঢালা রাস্তা। সেখান থেকে বর্ষাকালে নৌকা, ট্রলার বা স্পিডবোট দিয়ে খুব সহজে যাওয়া যায় গন্তব্যে। আর নেত্রকোনা থেকেও সরাসরি নৌকা/ট্রলার যোগে যাওয়া যায়। শীত কালে মোটরসাইকেল যোগে খুব সহজে নেত্রকোনা থেকে যাওয়া যায়। সবথেকে কম খরচে, আরামে, কম সময়ে খুব সহজে পৌঁছানো যায়। কেউ যদি নিজস্ব গাড়ি নিয়া যেতে চায় মধ্যনগর (পিপরা কান্দা ঘাট) পযর্ন্ত নিজের গাড়ি নিয়ে যেতে পারে, মাইক্রোবাস বা কার বা জীপ। রাস্তা খুব সুন্দর। সর্টকাট রাস্তা ঢাকা থেকে নেত্রকোনা হয়ে বারহাট্টা বা মোহনগঞ্জ দিয়ে টেকেরঘাট।

কেউ যদি রাতে থাকতে চান তবে বেশকিছু রেস্ট হাউজ এবং গেস্ট হাউজ আছে বড়ছড়া বাজারে। সেখানে আপনি ২০০-৪০০ টাকায় এক রাত থাকতে পারবেন। বারিক্কা টিলা পাড় হয়েই বড়ছড়া বাজারটা চোখে পড়বে। চাইলে টেকেরঘাট থেকে হেঁটেও আসতে পারবেন বড়ছড়া বাজারে, মেঠো পথ ধরে হাঁটতে ভালোই লাগবে। এছাড়াও লেকের পাশে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি চুনা পাথরের কারখানা আছে তার গেস্ট হাউজে থাকতে পারবেন যদি খালি থাকে।

বারিক্কা টিলাতে খাবারের হোটেল আছে, এছাড়াও বড়ছড়া বাজারে খেতে পারেন অথবা লেকের পাশেই টেকেরঘাট একটা ছোট বাজার আছে একটা মাত্র হোটেল আছে খাবারের। অবশ্যই আগে দাম জেনে খাবেন।

দুপুরের খাবার নিয়ে আমাকে বেশী ঝামেলা পোহাতে হয়নি, মাঝি বেশ দক্ষতার সাথেই চেয়ারম্যান বাড়ির ঘাটে বোট রেখেছিলেন। সেখানেই আমাদের জন্য রান্না করা হলো ৭-৮ পদের মাছ। নানান ধরণের তার নাম, চেনা মাছ নেই বললেই চলে। ছোট একটা দ্বীপের ওপর তিন তলা বাড়ি দেখে বিশ্বাসই হচ্ছিল না  এটা একটা গ্রাম। ছাদে গিয়ে দেখলাম কেবল পানি ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না। চেয়ারম্যান বাড়ির আতিথিয়তায় মুগ্ধ হয়ে নিজের বইয়ের উপর লিখে দিলাম-দ্বীপের রাজার বাড়ি এসে আমি মুগ্ধ।

বেলা বেড়ে যাচ্ছিল, রোদের তাপে আমি তখন অতিষ্ঠ হয়ে রেস্ট হাউজে ফেরার জন্য উদ্যত। নীলাদ্রি বাসী সাদেক বললো–আপু , চলুন ঝরনায় একটু গা ভিজিয়ে নেবেন। আমিতো অবাক-এই হাওরের মধ্যে আবার ঝরনা কিসের!

সে মিটিমিটি হেসে মাঝিকে টাকেরঘাট বোট নিতে বলে দিল। আমি ভাবলাম এই গরমে বুঝি খুব হাঁটাবে ছেলেটা। কিন্তু না, বোট থেকে নেমেই মোটর বাইকে উঠে বসলাম, খুব কম সময়ের মধ্যে চলে গেলাম সাদেকের বাড়ী  রজনীলাইনে। ওখানে ওদের বাবা -মা ঠান্ডা নিয়ে অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। বলতেই হয়, এখানেও গ্রামীনের নেট ওয়ার্ক কাজ করছিল। ওদের কাছে থাকার গল্পটা মিথ্যে নয় এক রত্তিও।

সাদেকের বাবা এখানে পাথরের ব্যবসা করেন, নেত্রকোনার ছেলে এতো দূর এসেছিলেন তার বাবার হাত ধরে, সেই থেকে জায়গাটা তার আপন। এখন তাহিরপুর উপজেলার এই রজনীলাইন গ্রামে থাকে ৫০০ পরিবার। বিদ্যুতের লাইন গিয়েছে ঘরে ঘরে, কেবল বিদ্যুৎ বেচারা এখনো যেতে পারেনি। অবশ্য এখানকার পানি যা ঠান্ডা তাতে আর বাড়তি বিদ্যুৎ না হলেও চলে। সাদেক আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল মেঘালয়ের গা ঘেসে ছোট্ট একটা টিলায়।জনমানবহীন অন্ধকার একটি পাহাড়। তার বুকের মধ্যে বইছে জল। বর্ষায় এই ঝরনার পানি থাকে বেশী, এখন যা আছে তাতে কিছু কম নয়। জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে তাহিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার (নৌ-পথ) এবং ২২ কিলোমিটার (সড়কপথ) উপজেলার সোজা উত্তরমুখী শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের সীমান্ত সড়কের লাগোয়া উপজাতী পল্লী লালঘাটের অবস্থান। টেকেরঘাট থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার পথ পশ্চিমে এগিয়ে গেলেই দেখা যাবে লালঘাট উপজাতী পল্লীর 'লালঘাট ঝরনা ধারা'। যারা বর্ষার জলের উন্মাদনায় মাততে পছন্দ করেন তাদের জন্য এই ঝরনা অসাধারন, কারণ এখানে পাহাড়ের গভীরতা খুব বেশী নেই। পাথরের উপর সহজে পাঁ রেখে আপনি স্নান করে নিতে পারেন।

ছবি ৩: মেঘালয়ের গা ঘেষে বয়ে চলা ঝরনা ,কবির আহমেদ বাবুর ক্যামেরায়

বেলা পড়ে আসছে, আমাকে ফিরতে হবে লোকালয়ে। সাদেক বার বার বলে দিল-শীতে একবার আসবেন আপু, এই  টাঙ্গুয়ার হাওরে শীতের সময় নানা জাতের পাখী আসে বিদেশ থেকে, টাঙ্গুয়ার হাওরের আর এক রূপ ফুটে ওঠে শীতে। ভারতের কোল ঘেষা নয়নাভিরাম এই নীলের স্বর্গ আমাকে আঁচল পেতে আহবান করছে যেন আর এক শীত সকাল আমি ওর সাথে কাটাই।

(অসাধারণ সব তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছেন টাকেরঘাট নীলাদ্রি বাসী)