মনোহরপুকুরে ফামোচি’র মন জুড়ানো পরিবেশনা

রোদেলা নীলারোদেলা নীলা
Published : 31 Oct 2017, 04:59 PM
Updated : 31 Oct 2017, 04:59 PM

১৫ অক্টোবর। অনুষ্ঠান আরম্ভ হবে ঠিক ছ'টায়। পিয়ালীদি তেমনি তাড়া দিয়েই যাচ্ছেন। আমি ভীষন অলস প্রকৃতির মানুষ। কোনো ভাবেই সময় মতো অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারি না। আর এটাতো কলকাতা। দেশের বাইরে, তাই সময় লাগছে বেশি। নিজের শাড়ি ঠিকঠাক পড়তে গেলে দশটা সেফটিপিন লাগে এখনো। তাই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে আঁচল গেল ছিঁড়ে। কী যে অবস্থা! এখন কী হবে? আমি কি আবার শাড়ি পাল্টাবো নাকি! দিদি সাহায্য করলেন। কেমন করে যেন আঁচলের এক ভাঁজের নীচে আর এক ভাঁজ দিয়ে ছেঁড়া অংশ ঢেকে দিলেন। তখনি আমি বুঝেছিলাম- অঙ্গস্বজ্জায় এই নারীর দক্ষ হাত আছে।

উত্তম মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে চোখ বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো। এতো বিশাল ব্যবস্থা! স্কাউটারসদের সংগঠন ফামোচি (FAMOCHI) দেখছি ব্যাপক আয়োজন করেছে। শুধু মঞ্চের চারপাশ নয়, বড় সড়ক থেকেই বিভিন্ন রঙের আলো আর ফুলে-ফুলে সাজানো। মূল অংশে ঢুকতেই আমাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হলো। সেই সাথে উত্তরীয়। উত্তরীওতে ভারতীয় পতাকার সব'কটা রঙ খেলা করছে। সত্যি মুগ্ধ হবার মতোন বিষয় ছিল সেটি। ঠিক ছ'টা বাজতেই সঞ্চালক ঘোষনা দিলেন নৃত্যানুষ্ঠান 'সে যে আমার জন্মভূমি'-এর কথা। নাটক করেছি বিধায় নাচের সাথে পরিচয় আমার বহু বছরের পুরনো। কিন্তু ফামোচি (http://rahul67870.wixsite.com/famochi) যে ভাবে ধ্রুপদী, রাবীন্দ্রিক এবং সমকালীন সংগীতের সাথে নাচ পরিবেশন করে গেল তার সাথে আমার তেমন সখ্যতা নেই।

সমকালীন নৃত্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর একে একে পরিবেশিত হয় – মনিপুরী নৃত্য, সচেতনতার নৃত্য, কুচিপুড়ি নৃত্য, রাবীন্দ্রিক নৃত্য, নৃত্যের মাধ্যমে নাটক, ওডিসি নৃত্য, মর্ডান ড্যান্স বাই স্পেশাল চিলড্রেন, ড্যান্স অন সুফি সং, ভারত নাট্যম নৃত্য, কত্থক নৃত্য, জন্মভূমিকে উৎসর্গ করে সম্মিলিত নৃত্য।

http://www.youtube.com/watch?v=FHGj17skMwQ

এর মধ্যে বিশেষ শিশুদের পরিবেশনায় –'যাও পাখী' গানের সাথে নাচ আমাকে নির্বাক করে দিয়েছে। বুকের ভেতর এক অজানা কষ্ট জমা থাকলেও ,আনন্দে চোখে জল এসেছে। আর ঊর্মিলা এবং রাধিকার –'ধীরা অধীরা' দেখে মনে হয়েছে নাচ দিয়ে ভীষন যুদ্ধ চলছে দু'জন সহ যোদ্ধার। লুটেরা দেখে বুঝতে পারলাম –নেচে গেয়েও দিশেহারা মনের গল্প বলা যায় ।

http://www.youtube.com/watch?v=SLMwf7gJgnQ

যারা যত্ন করে নাচ পরিবেশন করেছে –শেতা, ঈশানী, ঝিলিক, দেবরতী, শ্যামবন্তী, নেহা, প্রিয়াংকা, শুলগ্না, অনামিকা, প্রিয়াংকা, আশিয়ানী, ঊর্মিলা, পল্লবী, মধুরিমা, সোমা, ঈশানী, শ্রেয়া, অর্পিতা, ঝুম্পা এবং রাধিকা। নাচের ভিডিও ধারণ করেছি বেশ মুগ্ধ হয়েই।

http://www.youtube.com/watch?v=yEGPYOAfnhA

গানে ছিলেন নিশা খান্না এবং অরুনিকা দাস। কোরিওগ্রাফি করেছেন নীলাশ্রি গাঙ্গুলী, কৃতি চৌধুরি সাহা ,সুচিশ্মিতা আদিত্য সরকার এবং সঞ্জয় ভট্যাচার্য। মূল ভাবনা এবং অংগ স্বজ্জা করেছেন শৈবাল কুমার ঘোষ।সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন পিয়ালী ঘোষ। অভূতপূর্ব নাচ দেখা শেষ না করতেই শুরু হয়ে যায় ব্যাপক হাসির নাটক –কাবাব। নাট্যকার ও পরিচালক শৈবাল কুমার ঘোষ নাটকের মূল ভাবনা নিয়েছেন সুকুমার রায়ের 'পাজি পিটার' এবং উপেন্দ্রকিশোরের 'রাজা ও টুনটুনি' থেকে।

সংলাপগুলো আধুনিক করা হলেও হাসি কিছু কম হয়নি। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন –আলিপা বিশ্বাস, সৌমি ঘোষ, সপ্তর্শী দত্ত, জয়ন্ত চ্যাটার্যি, স্বপন অধিকারী, রানা কুন্ডু, সুমনা দত্ত, পার্থ নাগ, সন্দীপ দত্ত, ববিতা গাঙ্গুলি, পূরবী মূখার্জি, সুভাষ বক্সি, চৈতালী রয়, প্রবীর সেন, ঈদ্রানী মিত্র, মধূশ্রি দত্ত এবং সুশান্ত ঘোষ। পুরো নাটক মঞ্চায়নে যারা মঞ্চের বাহির থেকে কাজ করেছেন তাদের জাদুকরি দক্ষতাও দেখার মতোন ছিল। সংলাপের সাথে সাথে উপযুক্ত লাইট এবং মিউজিক একটি অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে কাবাব নাটকটিকে।

এই ধরণের একটি পরিবেশনা ফামোচি অচিরেই বাংলাদেশে করবে সেই নিমন্ত্রণ আমরা দিয়ে এসেছি বঙ্গীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদ থেকে।

কাবাব নাটকের বিভিন্ন দৃশ্য (আমার মোবাইলে  ধারণকৃত)-

অনুষ্ঠানের প্রায় শেষ ভাগে মঞ্চে আহবান করা হলো বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গণের একটি নক্ষত্র ,আমাদের মুক্তিযোদ্ধা বুলবুল মহালনবীশকে। তার সাথে মঞ্চে পা রাখলেন বঙ্গীয় সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক কবি এবং প্রাবন্ধিক কামরুল ইসলাম। দু'জন বিশিষ্ঠ শিল্পী তাদের অনুভূতি প্রকাশ করলেন, সমস্ত শিল্পীদের জানালেন নিমন্ত্রণ। সেই সাথে আমাকেও পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো।

এমন চমৎকার অনুভূতি নিয়ে দেশে ফিরে দেখলাম ল্যাপটপ কি যে যন্ত্রণা করছে, তাই কিছু দেরি হয়ে গেল এই অসাধারণ সময়কে সবার কাছে পৌঁছে দিতে। আমি একবার মনোহরপুকুরের উত্তম মঞ্চে পা রাখবার ইচ্ছে ব্যক্ত করছি যার নাম রাখা হয়েছে মহানায়ক উত্তম কুমারের স্মরণে।