নন্দন পার্কে পানির রাজ্যে অবগাহন

রোদেলা নীলারোদেলা নীলা
Published : 10 Dec 2017, 05:14 AM
Updated : 10 Dec 2017, 05:14 AM

প্রতি বছর মেয়ের জন্মদিনটা বেশ হৈ চৈ করে কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। একেতো শীতের শুরু, তার ওপর আবার পরীক্ষা শেষ, তাই ডিসেম্বর মাস এলেই বাড়ি শুদ্ধ সবার মনে উৎসব উৎসব ভাব চলে আসে। কিন্তু ঘরে বসে কী আর পার্টি জমে, ভাবলাম কোন রেস্টুরেন্টে বসে কেক কাটা হবে– ছবি তোলা হবে, কিন্তু যা হবে না তা হচ্ছে; মন খুলে নাচানাচি। হুম, আমরা সুযোগ পেলেই গলা ছেড়ে গান গাই আর নাচি।এই নাচানাচির অভ্যেস আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই রপ্ত করেছি। টাংগাইল দাদার বাড়ি যাবার পথে নবীনগর পাড় হবার পর সব সময় হাতের বাঁ দিকে তাকিয়ে থাকতাম, কারণ আমি জানি কালিয়াকইর চলে আসবার ঠিক আগেই বাড়ই পাড়াতে নন্দন পার্ক।আর ওখানেই আছে ওয়াটার ল্যান্ড, বাসে বসে পানিতে নামতে না পারি কিন্তু বড় বড় লাল অক্ষরে লেখা নন্দন দেখতে কীযে ভালো লাগতো। সেই ভালো লাগাটা দিন দিন ছেলে মেয়েরা লুফে নিয়েছিল।

তাই আর কোন কথা না ভেবে ১৩ জনের একটা টিম নিয়ে উপস্থিত হয়ে গেলাম নন্দন পার্কে। যদিও সংখ্যাটা আনলাকি, কিন্তু আমরা মোটেও আনলাকি নই। নন্দন পার্কের চেয়ারম্যান সেলিম ভাই তখন দেশের বাইরে অবস্থান করলেও আমাদের আনন্দ আড্ডার যেন একটুও ঘাটতি না হয় সে ব্যাপারে খুব সচেতন ছিলেন। তাই হেড অফ অপারেশন আলিমুল ইসলাম সোহাগ একজন অফিসার পাঠিয়ে আমাদের রিসিভ করে নিলেন। শনিবার দুপুর তখন, আমরা ঘুম থেকে উঠতে দেরী করলেও একাডেমিয়া স্কুলের বাচ্চারা একটুও দেরী করেনি। তারা ঠিক ঠিক সকাল বেলা ১৩ টি বাস নিয়ে ঘুরতে চলে এসেছে। তাই ড্রাই জোনের রাইড গুলো ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। কিন্তু আমাদের আসল গন্তব্য ছিল পানির রাজ্য অর্থাৎ- ওয়ান্ডার ওয়ার্ল্ড। তাই বাইরে বিশাল গাড়ি পার্কিং- এর জায়গায় ভীর দেখে মন খারাপ হয়নি একদমই।

আমাদের অফিসের ভেতর ডেকে পাঠানো হলো। সেই ২০০৩ থেকে এখানে আসছি, কিন্তু নন্দন ভিলেজ দেখার সৌভাগ্য এতোকাল পরে হলো আমার। ভেতরে পা রেখে একটি স্বর্গীয় উপলব্ধি পেলাম, একেবারেই নিরিবিলি সাজানো বেশ কয়েকটি কটেজ। আমি আবার রাতে থাকার ব্যবস্থাও শুনে নিলাম, এক দিনের জন্যে ভাড়া চার হাজার ৮'শ টাকা। বাহ! মন্দ না। বুড়ো বয়সে হানিমুনটাও সেড়ে নেওয়া যাবে কোন এক পূর্ণিমায়। ৬৮ বিঘা আয়তনের মনোরম এই পার্কটি যুক্তরাজ্য থেকে প্রযুক্তি ও ডিজাইন নিয়ে ভারতের নিকো পার্কের সহায়তায় নির্মিত হয়েছে। ড্রাই জোনে আছে বেশ আকর্ষনীয় অনেক রাইড- ক্যাবল কার, ওয়েব পুল, জিপ স্লাইড, রক ক্লাইমরিং, রিপলিং, মুন রেকার, কাটার পিলার, ওয়াটার কোস্টার, আইসল্যান্ড, প্যাডেল বোট- এমন আরো অনেক কিছু।

সোহাগ সাহেব যখন আমাদের নন্দন অফার বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন মনে হলো শীতের দিন খুব বেশী রাইডে চড়া যাবে না। তাই আমরা ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের অফার লুফে নিলাম, সাথে নিলাম দুপুরের জন্য চিকেন বিরানী। তিনি আমাদের সুবিধার জন্য একটি পিকনিক স্পটের এসি রুমের ব্যবস্থা করে দিলেন।

ছবিতে নন্দন কটেজ, আমার হাতের ক্যামেরায়

আর কী আমাদের পাওয়া যায়, বয়স তখন সবার এক লাফে ১৪ তে নেমে গেল। গরম গরম বিরানী খেতে এতো মজা হয় সেটাও যেন প্রথম উপলব্ধি করলাম, মনে হচ্ছিল বাড়িতে বসেই খাচ্ছি। কোন রকম মোমবাতি ফুঁ দিয়ে  কেক কেটে, কাপড় বদলে নেমে পড়লাম পানির রাজ্যে। যারা সুইমিং জানে না তাদের জন্য ভয় পাবার তেমন কছু নেই এখানে, পানির উচ্চতা খুব বেশী না তবে পানির নাচ খুব বেশী। হুম, এখানে পানিও যেমন মিউজিকের সাথে হেলে দুলে উঠে তেমন দর্শনার্থীরাও নাচে। নাচ জানাটা জরুরী নয়, মজা করাটাই মুখ্য। এতো দারূণ সব মিউজিক বানানো হয় যে ঘুমন্ত মানুষ উঠে কিছুটা সময় শরীর দুলিয়ে নেবে। আর মেয়েদের জন্য বেশ নিরাপত্তা দিয়েই চেঞ্জিং রুম করা হয়েছে, সেখানে শাওয়ার নেবার ভালো ব্যবস্থা আছে। সঙ্গে সাবান শ্যাম্পু নিয়ে নিলেই হলো।

ছবিতে অদ্রির জন্মদিনের কেক কাটাকাটি হচ্ছে

এখানকার ওয়েব রানার হলো ওয়াটার ওয়ার্ল্ডের খুব মজার রাইড। তাই আমার দঙ্গলে সবাই উঠে গেল সেখানে, শুধু বাচ্চারা যায় নি। ৭০ ফিট উঁচু থেকে পানি ভর্তি পথ পেরিয়ে পানি ভর্তি পুকুরে পড়ার মজা পাওয়ার দৃশ্য বন্দী  করলাম ভিডিও তে। এরপর একে একে ফ্যামিলি কার্ভ স্লাইড, ওয়াটার ফান প্লাজা, ডুম স্লাইড, মাল্টি প্লে জোনসহ মজার মজার সব রাইডে চড়তে লাগলাম।

সবার মজা করা দেখে এক সময় হাতের ক্যামেরা মাকে দিয়ে আমিও নেমে গেছি পানিতে। পানি বেশ ঠান্ডা ছিল, তারপরো খুব মজা লাগছিল নরম রোদ গায়ে পড়ছিল বলে। কিন্তু শীত বেশি নামলে এতো ঠান্ডায় আর নামা যাবে না, গরম পানির ব্যবস্থা করতে হবে। যারা কাপড় সাথে আনেনি তারা ১০০ টাকা দিয়ে একটা করে প্যান্ট নিয়ে নিল। সেগুলো আবার ফেরত দিয়ে গেলেই হবে।

ছবিতে নন্দন জলে উম্মাতাল স্নান

সবার শেষে নামলাম ওয়েবপুলে। যারা কখনো সমুদ্রে যায়নি কিংবা গেলেও ভয়ে সমুদ্রের পানিতে নামেনি তাদের আফসোস অনেকটাই মিটে যাবে মজাদার এই রাইডে নামলে। এটি আসলে একটি কৃত্রিম সমুদ্র সৈকত, সাত হাজার বর্গফুটের এই সৈকতে আছে সমুদ্রের মতোই বড় বড় ঢেউ। তবে এত বড় ঢেউয়ের মধ্যে নামতে কিছুটা ভয় লাগলেও বেশ রোমাঞ্চ আছে পুরো বিষয়টায়। তবে বাচ্চাদের এই রাইড থেকে দূরে রাখাই নিরাপদ।

ঢাকা থেকে নন্দন পার্ক যাওয়ার কয়েকটি রুট আছে। আবাবিল পরিবহন মতিঝিল থেকে ছেড়ে গুলিস্তান, মগবাজার, মহাখালি, বনানি, উত্তরা, আশুলিয়া ইপিজেড হয়ে যায়। আর সুপার বাস মতিঝিল থেকে ছেড়ে গুলিস্তান, শাহবাগ, আসাদগেট, গাবতলী, সাভার, নবীনগর, ইপিজেড হয়ে যায়। আমরা সময় বাঁচানোর জন্য গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। রাস্তা আগের চাইতে এখন ঢের ভালো, জ্যাম পাইনি খুব বেশী।

এখানে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন রকম অফার আছে। বেশ কয়েকটি প্যাকেজ দিয়ে অফারগুলো সাজানো। আপনার সুবিধা অনুযায়ী নিয়ে নিতে পারেন।

শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত নন্দন পার্ক খোলা থাকে। শুধুমাত্র শুক্রবার সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ ট পর্যন্ত খোলা থাকে।

ছবিতে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড

নন্দনের জন্মলগ্ন থেকেই দেখে আসছি এখানে বিশেষ দিনগুলোতে বেশ বড় আকারের কনসার্ট হয়। আমি নিজেও বেশ কয়েকবার উপস্থিত থাকতে পেরেছি। তবে এবার শীতের পুরো আমেজটা উপভোগ করতে চাই, অবশ্যই তা পানির রাজ্যে অবগাহন করে আর সন্ধ্যার হীমেল পরশ নিয়ে খোলা আকাশের নীচে গানের সুরে ভেসে ভেসে।

যারা আমার মতোন ঝট করে ঘুরে আসতে চান নন্দন পার্কে তাদের জন্য যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিলাম।

যোগাযোগ, বুকিং ও অন্যান্য তথ্য জানতে

নন্দন পার্ক লিমিটেডের ঢাকা অফিস

বাড়ি- ২৬৯, রোড-০৩, বারিধারা ডিওএইচএস

ঢাকা- ১২০৬।

ফোনঃ +৮৮০১৭৫৫-৬৬৭৭০৩, ০২-৮৪১৯৮৮৪।

তথ্যসূত্র: www.nandanpark.com

ছবি: লেখক নিজে