ব্রহ্মপুত্র নদীর শহর ময়মনসিংহ

রোদেলা নীলারোদেলা নীলা
Published : 11 Dec 2017, 04:09 PM
Updated : 11 Dec 2017, 04:09 PM

শীত এলেই নদীগুলো দেখতে দেখতে শুকিয়ে যায়। নৌকায় ঘুরে বেড়ানোর সেই মজা আর থাকে না যেমন মজা পাওয়া যায় বর্ষায়। কিন্তু এবার কার্তিকের এক ভোরে ব্রহ্মপুত্রের কাছে গিয়ে দেখলাম – নদীর বুক জুড়ে শত শত নৌকো চলছে । ব্রহ্মপুত্র এশিয়া মহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী ,আর তার পাশেই গড়ে উঠেছে অনেক আধুনিক নগরী ।আজ আমি এসেছি প্রাচীন একটি শহরে, নাম যার ময়মনসিংহ। সক্কাল সক্কাল এনা পরিবহনে মেয়েকে নিয়ে চড়ে বসেছি, ঢাকার রাস্তায় ছুটির দিন কোন ট্রাফিক ছিল না। দুপুর নাগাদ ২১১ কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে গেলাম মোমেনশাহী নামে এক সময়কার খ্যাত ময়মনসিংহ শহরে ।

মোগল আমলে মোমেনশাহ নামে একজন সাধক ছিলেন, তার নামেই মধ্যযুগে জায়গাটির নাম হয় মোমেনশাহী। পরবর্তীকালে বাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তাঁর ছেলে সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ। কিন্তু এ নামে রাজপুতনায় আরেকটি জায়গা থাকায় নাম পরিবর্তন করে ময়মনসিংহ রাখা হয়।

ময়মনসিংহ বাংলাদেশের একটি পুরোনো জেলা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে রাজস্ব আদায়, প্রশাসনিক সুবিধা বৃদ্ধি এবং বিশেষ করে স্থানীয় বিদ্রোহ দমনের জন্য এই জেলা গঠন করা হয়। ১৭৮৭ সালের ১ মে তারিখে এই জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে এখনকার বেগুনবাড়ির কোম্পানিকুঠিতে জেলার কাজ শুরু হয় তবে পরবর্তী সময়ে সেহড়া মৌজায় ১৭৯১ সালে তা স্থানান্তরিত হয়। আদি ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন স্থান একে একে সিলেট, ঢাকা, রংপুর ও পাবনা জেলার অংশ হয়ে পড়ে।

গতকাল রাতে স্থানীয় বন্ধু শহীদ ভাইকে বলে রেখেছিলাম—মেয়েকে নিয়ে আপনাদের শহরে আসছি ।তখন থেকেই সে অপেক্ষা করে ছিল ,বাস থেকে নেমে গাড়ি পেয়ে গেলাম। শহরের বাইরে খুব জ্যাম না থাকলেও, ভেতরে ঢুকে টের পেলাম পুরনো শহরে বড় বড় দালান বানালে কী বিপত্তি ঘটে! রাস্তা যতই বৈরী হোক ,মা মেয়ের বেড়ানো কেউ আটকাতে পারছে না ।তাই গাড়ী নিয়ে সোজা চলে গেলাম মুক্তাগাছা ,ড্রাইভার স্থানীয় হওয়াতে কোন ঝামেলা হয়নি।

শশীলজ:

মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্তের বসতবাড়ি শশীলজ। নিজ পুত্র (ভাতিজা ও দত্তকপুত্র) শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে ঊণবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে এটি নির্মিত হয়। বাড়িটি ছিল দ্বিতল ভবন। ১৮৯৭-এর ভূমিকম্পে দ্বিতল ভবনটি ভেঙ্গে যাবার পর বর্তমান বাড়িটি পুননির্মাণ করা হয়। দ্বিতল ভবনের সিঁড়িতে বিশেষ বাদ্যের ব্যবস্থা ছিল। সিঁড়িতে মানুষ চলাচল করলেই সুমধুর বাজনা বাজতো। জানা যায়, প্যারিস থেকে মহারাজা এক লক্ষ (মতান্তরে তিন লক্ষ) টাকা ব্যয়ে স্ফটিক সঙ্গীত বাক্সটি কিনে এনেছিলেন।

ছবি ১ঃ শশীলজ

আলেকজান্ডার ক্যাসেল 

শশী লজ দেখা শেষ করে একটু এগিয়ে গেলাম আলেকজান্ডার ক্যাসেল-এ। আলেকজান্ডার ক্যাসেল ময়মনসিংহ শহরের পুরনো একটি স্থাপনা । মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ১৮৭৯ সালে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় করে ততকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আলেকজান্ডারের সম্পত্তি রক্ষার্থে এ প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন। প্রাসাদটিতে লোহার ব্যবহার বেশি করা হয়েছিল বলে এলাকাবাসী এটিকে 'লোহার কুঠি' নাম দিয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ভবনটিতে অনেক বরেণ্য ব্যক্তির পদধূলি পড়েছে। ১৯২৬ সালে  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ময়মনসিংহ সফরের সময়ে আলেকজান্ডার ক্যাসেলে কিছুদিন ছিলেন। এ ছাড়া এখানে আরো এসেছিলেন লর্ড কার্জন, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ, কামাল পাশা প্রমুখ। এটি বর্তমানে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পাঠাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ছবি ২ঃ সুসজ্বিত আলেকজান্ডার ক্যাসেল

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা 

ময়মনসিংহ শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। এ নদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বহু ছবি এঁকেছিলেন। সরকার কর্তৃক শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের বিভিন্ন শিল্পকর্ম দেশব্যাপী সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়ার পর শিল্পীর নিজের এলাকা ময়মনসিংহে এই সংগ্রহশালাটি গড়ে ওঠে। ময়মনসিংহ শহরের উত্তর প্রান্তে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে ছায়াঘেরা পরিবেশে ১৯৭৫ সালে এটি স্থাপিত হয়। বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগে শিল্পাচার্যের মনে এই ধরনের সংগ্রহশালার ধারণা জন্মে এবং বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অবহেলিত অসংখ্য মূল্যবান শিল্পকর্ম সংগ্রহে তিনি নেতৃত্ব দেন। ১৯৭৫ সালের ৭ জুলাই ঔপনিবেশিক আমলের একটি ভবনে সংগ্রহশালার কাজ শুরু হয়। ভবনটির মালিক ছিলেন জনৈক মি. বার্ডেন। বার্ডেনের কাছ থেকে বড় লাটের (ভাইসরয়) কাউন্সিল সদস্য নলিনীরঞ্জন সরকার বাড়িটি ক্রয় করেন।

ছবি ৩ঃ জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা

সংগ্রহশালার প্রতিটি চিত্রকর্মে ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পের পরিচয় পাওয়া যায়। এই সংগ্রহশালায় প্রথমে ৭০টি চিত্রকর্ম স্থান পায়। ছবিগুলির বেশির ভাগই ছিল তৈলচিত্র। এগুলির মধ্যে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণকালে শিল্পাচার্যের অঙ্কিত ছবি, গুণটানা, নদী পারাপারের অপেক্ষায় পিতা-পুত্র ও দুর্ভিক্ষের ছবি উল্লেখযোগ্য। সংগ্রহশালা থেকে আকর্ষণীয় এবং বিখ্যাত ১৭টি ছবি ১৯৮২ সালে চুরি হয়ে যায়। এর মধ্যে ১০টি ছবি ১৯৯৪ সালে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। বর্তমানে এই সংগ্রহশালায় ৫৩টি অমূল্য ছবি রয়েছে। শিল্পাচার্যের স্বপ্ন অনুযায়ী পরবর্তীকালে এখানে একটি আর্ট স্কুলও প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই স্কুলে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদেরকে জয়নুল আবেদিনের চিত্রকর্ম সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া হয়ে থাকে।

এসব ছবির মধ্যে আছে শম্ভুগঞ্জ ঘাট, শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ , স্কেচ (বংশীবাদক), বাস্তুহারা, প্রতিকৃতি এবং অন্যান্য অনেক ছবি। এসব ছবি ছাড়াও রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত জিনিস এবং তাঁর কিছু স্থিরচিত্র। সংগ্রহশালাটি শুক্রবারের দুপুর ২টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে ,তাই আমি দুপুরের খাবার পর এলাম । অন্যান্য দিন সকাল ১০টা থেকে খোলা ।

সংগ্রহশালার ঠিক পাশেই পৌর পার্ক। সুন্দর সাজানো গোছানো ব্রহ্মপুত্র নদী তীরের এ পার্কটি বেশ জমজমাট দেখলাম । পার্কের একপাশে রয়েছে নানা ধরণের রেস্টুরেন্ট আর স্ট্রিট ফুড শপ ,দোলনাসহ আরো অনেক চমকপ্রদ ব্যাপার-স্যাপার । ব্রহ্মপুত্রে নৌকা ভ্রমণ করার ভালো ব্যবস্থাও আছে , পাড়ে বিশালাকৃতির গাছ ছায়া দিয়ে যাচ্ছে ।

ছবি ৪ঃ  চিড়িয়াখানার সামনে আমার কন্যা মোবাইলে তোলা

পার্কের সাথে মিনি চিড়িয়াখানা আছে ,আছে বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন ধরণের রাইড ।মেয়েতো ট্রেন দেখেই উঠে বসলো ,আমরা যখন মিনি পার্কে ট্রেন নিয়ে ব্যস্ত তখন পাশেই বৈশাখী মঞ্চে আবৃত্তি সন্ধ্যা শুরু হয়ে গেল । ততোক্ষনে সন্ধ্যা নেমে গেছে ,  গীতি কাব্যের শহর ময়মনসিংহ বাসীর চোখে মুখে সুরের তৃষ্ণা জেগে উঠেছে । শিল্পীদের কন্ঠ মুহূর্তে জেগে উঠেছে ব্রহ্মপুত্রের স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে  – কাংখেরি গাগরী কইন্যা …

ছবি ৫ : মিনি চিড়িয়াখানা ও শিশুদের পার্ক (আমার মোবাইলে তোলা)

মুক্তাগাছার মন্ডা মিঠাই 

প্রায় রাত দশটা অব্দি গান শুনে আর স্ট্রিট ফুড খেয়ে পেট তখন ভরা ,তবুও  মুক্তাগাছার মণ্ডা চেখে দেখবার স্বাদ মনের ভিতর বার বার উঁকি দিতে লাগলো ।এতোকাল কেবল নাম শুনেই এসেছি ,গাড়ী নিয়ে সোজা শহরের মধ্যে চলে গেলাম। ১৬ কিলোমিটার দূরে গিয়েতো আর মন্ডা খাওয়া সম্ভব নয় ,কিন্তু  স্টেশন রোডের কাননেই পাওয়া গেল লোভনীয় মন্ডা মিঠাই । এর পেছনের একটা দারূন ইতিহাস আছে ।

দুই শতাধিক বছর আগে মুক্তাগাছার প্রসিদ্ধ মন্ডার জনক গোপাল পাল এক রাতে স্বপ্নাদিষ্ট হলেন। শিয়রে দাঁড়িয়ে এক ঋষি তাকে আদেশ দিচ্ছেন মন্ডা মিষ্টি তৈরি কর। পরদির গোপাল ঋষির আদেশে চুল্লি খনন শুরু করলেন। দৈবাৎ উদয় হলেন সাধু। তিনি হাত বুলিয়ে দিলেন চুল্লিতে। শিখিয়ে দিলেন মণ্ডা তৈরির কলাকৌশল গোপালকে। দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি হলো মন্ডা। গোপাল তার নব উদ্ভাবিত মন্ডা পরিবেশন করলেন তৎকালীন মুক্তাগাছার জমিদার মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর রাজদরবারে। মন্ডা খেয়ে মহারাজা পেলেন পরম তৃপ্তি , আর বাহবা দিলেন গোপালকে।

ছবি ৬ঃ বিখ্যাত মন্ডা মিঠাই

শুরু হলো মণ্ডার যাত্রা। গোপাল সম্বন্ধে জানা যায়, বাংলা ১২০৬ সালে তৎকালীন ভারতবর্ষের মুর্শিদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন। নবাব সিরাজদৌলার মৃত্যুর পর গোপাল মাতৃভূমি রাজশাহীতে চলে আসেন। পরে বাংলা ১২৩০ সালে তিনি মুক্তাগাছায় বসত গড়েন। প্রথম মণ্ডা তৈরি হয় বাংলা ১২৩১ সালে।

চ্যাপ্টা আকৃতির মিষ্টির আরো একটি বৈশিষ্ট্য ,ওটাকে ফ্রিজে রাখতে হয় না । বাইরে রেখে দিলেও সহজে নষ্ট হবে না ,আমি পর দিন পর্যন্ত তৃপ্তি নিয়েই মন্ডা খেয়েছি ।

বোটানিক্যাল গার্ডেন 

পরদিন সকালে ঢাকায় ফিরবো বলে তৈরী হলাম , হাতে পুরো দিন পড়ে আছে । শহর থেকে বের হবার পথে হাতের ঠিক বাঁয়ের দিকে এগিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ,তার ভেতরেই সন্ধান পেলাম এক চমৎকার অরণ্যের যা বোটানিক্যাল গার্ডেন নামে পরিচিত ।আমরা যখন ওখানে গিয়ে পৌঁছাই তখন বেলা ১১ টা ,কিন্তু গার্ডেনের গেইট খোলে ১ টায় । তাই রীতিমতোন প্রশাসনের কাছ থেকে পার্মিশন নিয়েই আমাদের ভেতরে ঢুকতে হয়েছিল। আর ভেতরে পা দিতেইা আমার বাচ্চাটা খুশীতে হয়ে গেল উড়ন্ত পায়ড়া।

ছবি ৭ : মোবাইলের ক্লিক আমি ও অদ্রি

বিলুপ্তপ্রায় গাছপালাকে সংরক্ষণ এবং মানুষের কাছে পরিচিত করানোর উদ্দেশ্যেই ১৯৬৩ সালে এই বোটানিক্যাল গার্ডেনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মধ্যে ঢুকেই প্রাণ জুড়িয়ে যাবে সারি সারি অচেনা সব গাছ দেখে। সুন্দর বাঁধানো রাস্তা আর তার দুই পাশের সুশোভিত বৃক্ষরাজি ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করবে না। আমি অবাক হয়েছি এটা শুনে যে এ গার্ডেনে ৫৫৮ প্রজাতি কয়েক হাজার গাছ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ফুল, ফল, ঔষধি, লতাপাতাসহ নানা জাতের গাছ। প্রজাতি সংখ্যার দিক থেকে এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ।

ছবি ৮ঃ  চোখ জুড়ানো বোটানিক্যাল গার্ডেন , মোবাইলে তোলা

গার্ডেনটির সৌন্দর্যে আমি বেশ মুগ্ধ হয়ে গেলাম ,ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেনের সাথে এর ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে ।  দেশে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের পাশাপাশি এখানে রয়েছে বিলুপ্ত প্রায় উদ্ভিদ প্রজাতি সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ, দর্শনার্থীদের বিনোদনে সহায়তা, উদ্ভিদ জগতের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করার অফুরন্ত সুযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছুটা আর্থিক সহায়তা প্রদান করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঠিক ২ বছর পর ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এ ঐতিহ্যবাহী গার্ডেনটি।

ছবি ৯ : ফুল দিয়ে বিছানো গার্ডেনের পথ ,আমার মোবাইলে তোলা

প্রতিষ্ঠার শুরুতে গার্ডেনটি আয়তনে খুবই অল্প থাকলেও বর্তমানে গার্ডেনটির আয়তন প্রায় ২৫ একর। আর এ গার্ডেনটি শুধু যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য এনে দিয়েছে তাই নয়, এটির মাধ্যমে পুরো ময়মনসিংহ শহরে সৃষ্টি হয়েছে নতুন মাত্রা। বোটানিক্যাল গার্ডেনের মূল গেটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। গার্ডেনের ভিতরে দ্বিতল বিশিষ্ট একটি অফিস ভবন রয়েছে। যার পূর্বে পাশে ব্রহ্মপুত্র নদ প্রবাহিত, পশ্চিমে শাপলা পুকুর, দক্ষিণে নিসর্গ (ক্যাকটাস হাউস) ভবন, উত্তরে ওয়াটার গার্ডেন যা বর্তমানে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ হাউস নামে পরিচিত। উদ্ভিদ অরণ্যানী এই বোটানিক্যাল গার্ডেনে দেশি প্রায় সকল প্রজাতির উদ্ভিদের পাশাপাশি বিদেশি থেকে আনা বিরল প্রজাতির উদ্ভিদের দেখা মিলবে।

 ছবি ১০ : মোবাইলে তোলা ক্যাকটাসের গ্যালারি

কীভাবে যাবেন?

মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে এনা, শামিমসহ বেশ কটি বাস ছেড়ে যায় প্রতি ঘণ্টায়। সময় লাগবে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা, ভাড়া নেবে ২০০ টাকা। ময়মনসিংহ নেমে ৩০-৪০ টাকা অটোভাড়া দিয়ে যে কোনো জায়গায় যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে ট্রেনেও যাওয়া যায়, ঈশাখাঁ আর বলাকা এক্সপ্রেসে চড়ে।

কোথায় খাবেন?

ময়মনসিংহে খাওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট। সি কে ঘোষ রোডে আছে সারিন্দা, একটু সামনেই নীরব রেস্টুরেন্ট। ভর্তা-ভাজি খেতে চাইলে যেতে পারেন গাঙ্গিনার পাড়ে খন্দকার রেস্টুরেন্টে। আর মিষ্টির জন্য তো  স্টেশন রোডে  কানন ও কৃষ্ণা কেবিন আছেই। বর্তমানে এদের অনুসরণ করে ময়মনসিংহ শহরে আরো বেশ কিছু মিষ্টির দোকানীরা মালাইকারি তৈরি ও বিক্রি করে থাকে। তবে ময়মনসিংহ তথা বাংলাদেশের ইতিহাসে মালাইকারি বলতে সুধির ঘোষের মালাইকারির নামই সবার আগে চলে আসে।

কোথায় থাকবেন?

রাতে থাকতে চাইলে আগে থেকে বুকিং দিয়ে আসাই ভালো। ভালো মানের হোটেলের যে নামগুলো আমি পেলাম তাই দিয়ে দিলাম।

হোটেল আমির ইন্টারন্যাশনাল-০৯১৬৩৩৭৬

হোটেল মোস্তাফিজ ইন্টারন্যাশনাল -০৯১৬৩০৭০

আসাদ গেস্ট হাউজ-০৯১৫৫৬৯২

হোটেল উত্তরা-০৯১৬৪১৮৫

হোটেল নিরালা-০৯১৬৭৩৮৪

আমির ইন্টারন্যাশনাল বেশ ,মিষ্টির দোকান গুলো খুব কাছে ধারে , তবে ভাড়া একটু  বেশি।

ময়মনসিংহ-এর মতো এমন বৃহত্তম জেলায় উল্লেখিত জায়গা ছাড়াও আরো অনেক দেখার মতোন মনোরম জায়গা আছে ,সময় পেলেই ঘুরে আসতে পারেন পরিবার নিয়ে ।প্রাচীন স্থাপণার অনবদ্য কীর্তির মধ্যে রয়েছে মুক্তাগাছার রাজবাড়ী ,সিলভার প্যালেস ,রাম গোপালপুর জমিদার বাড়ী ,গৌরীপুর রাজবাড়ি এবং বিপিন পার্ক ।হাওর –জঙ্গল ও মহিষের শীং ,এই তিনে মিলে ময়মনসিংহ নিশ্চই এক নির্মল আনন্দ দেবে আপনার ভ্রমণে । আর ঢাকায় ফিরবার পথে বিকেলের স্নিগ্ধ আলোয় ঘুরে নিতে পারেন দু'ধারের শালবন রাজ্য ।

তথ্য ও ছবি সূত্র :

বিশেষ কৃতজ্ঞতা : কাজী শহীদ শওকত