মেতে উঠি আমড়ার উৎসবে

রোকসানা আমিন
Published : 3 Nov 2019, 11:20 AM
Updated : 3 Nov 2019, 11:20 AM

আমাদের দেশি ফলের মধ্যে আমড়া একটি জনপ্রিয় সুস্বাদু ফল। বরিশাল, পিরোজপুর ও স্বরুপকাঠি এলাকায় এই ফলটি বেশি পাওয়া যায়। এই এলাকায় দুই জাতের আমড়া চাষ হয়; দেশি আমড়া ও বিলাতি আমড়া। তবে এখানে দেশি আমড়া বেশি পাওয়া যায়।

বিলাতি ও দেশি দুই ধরনের আমড়া থেকেই সুস্বাদু আচার, চাটনি এবং জেলি তৈরি করা যায়। তরকারি হিসেবেও আমড়া রান্না করে খাওয়া যায়। আমড়ায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং আঁঁশ আছে, যেগুলো শরীরের জন্য খুব দরকারি। হজমেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মুখের রুচি বৃদ্ধি করাসহ আমড়ায় অনেক গুণাগুণ রয়েছে।

এই এলাকায় বছরের একটি দীর্ঘ সময় নিচু জমিতে পানি জমে থাকে। শুকনো মৌসুমে জমির মাটি কেটে উঁচু করে কান্দি তৈরি করা হয়। সারা বছর কান্দির মাঝে জোয়ারের পানি আসা যাওয়া করে, কিন্তু উঁচু মাটির কান্দিতে পানি ওঠে না। এসব উঁচু স্থানে সারি করে আমড়ার চারা লাগানো হয়।

এখানকার বেশিরভাগ বাড়িতে আমড়া গাছ রয়েছে। চারাগাছ লাগানোর পর তিন থেকে চার বছরের মধ্যে গাছে স্বল্প পরিমাণে আমড়ার ফলন শুরু হয়। তারপর প্রতিবছরই ফলন বাড়তে থাকে। পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে পরিপূর্ণ ফলন পাওয়া যায়।

অগাস্ট মাস থেকে আমড়ার মৌসুম শুরু হয় এবং অক্টোবর মাস পর্যন্ত চলে। এরপর থেকে শুরু হয় 'বারো মাইশ্যা' আমড়ার মৌসুম। এই আমড়া বছরের প্রায় পুরোটা সময় ধরেই পাওয়া যায়। সাধারণ আমড়ার তুলনায় এর স্বাদ এবং দাম অনেক কম হয়।

মে মাসের মাঝামাঝি থেকে আমড়ার কারবারিরা বিভিন্ন বাড়ি গিয়ে আমড়া গাছ কেনা শুরু করেন। আমড়া বিক্রি হয় ভাসমান বাজারে। আমড়ার কারবারিরা ছোট ছোট ডিঙি নৌকা ভরে আমড়া নিয়ে যায় ইন্দুরহাট ও স্বরুপকাঠি বাজারে। সেই আমড়া ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে পৌঁছে যায়।

পাকা আমড়া পাইকারি বাজারে বিক্রি হয় না। মৌসুম শেষে কারবারিরা যখন বাড়িতে আসে, তখন শুরু হয় পাকা আমড়ার উৎসব। আশেপাশের বাড়িতে পাকা আমড়া বিলি করা হয়। সব বাড়িতে পাকা আমড়া রান্না করা হয় নারকেল দিয়ে। কেউ আমড়া দিয়ে ছোট মাছ রান্না করেন, কেউবা করেন চাটনি। বয়স্ক কাকা ও কাকিমারা পাকা আমড়া দুধের সাথে মিশিয়ে খান। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়সি লোকেরা পাকা আমড়ার তৈরি খাবার খেতে বিভিন্ন বাড়িতে বেড়াতে যান। এভাবেই সবাই পাকা আমড়ার উৎসবে মেতে ওঠেন।

গত বছরের চেয়ে এবার আমড়ার ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় কারবারিরা খুব খুশি। তারা আগামী বছর আরো উৎপাদন হওয়ার আশা করছেন ব্যবসায়ী আর আমড়ার চাষীরাও।