অবশেষে এটা প্রমাণিত হল যে, বাঙালি জাতে উঠেছে। আমাদের যে মাছে-ভাতে বাঙালি বলে একটা দুর্নাম আছে সেটাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে আমরা আর মাছে-ভাতে বাঙালি নাই বলে সদর্পে গর্ব করতে পারব। ভেতো বাঙালির তকমা বিসর্জন দিয়ে আমরা প্রমাণ করলাম আমরাও পারি। গোরা ইংরেজ কিংবা খাটো জাপানিজের সাথে সমান তালে টক্কর দিয়ে আমরা যে কোন অংশে কম নই তা আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলাম। আমরা কি জিনিস তা বিশ্ববাসীকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিলাম।
গত কয়েক দিনে যেভাবে ডিম উপাখ্যান চলছে তাতে আমরা কি জিনিস তা আবারও প্রমাণ করে দিলাম। ডিমের দাম শুনে এক একজনের চোখ চকচক করতে দেখে অবাক হইনি। আমরা পঞ্চাশ-ষাট হাজার টাকা বেতন পেয়েও আমাদের ফ্রি জিনিস দেখলে কিংবা মূল্যছাড় দেখলে মুখ হা হয়ে আসে। আমরা সেই বাঙালি যারা বিশ টাকার ফ্রি আলকাতরা নেবার জন্য দুই হাজার টাকার পাঞ্জাবি এগিয়ে দেই।
গতকাল আমরা ঢাল তলোয়ার নিয়ে রাজধানীর খামার বাড়ী আক্রমণ করলাম ডিম উদ্ধার করার জন্য। কতিপয় যুবক দলবল নিয়ে হামলে পড়ল ডিম অঞ্চলে। তাদের প্রত্যেকের হাতে বালতি না হয় ব্যাগ। বাঙালির ব্যবসায়িক বুদ্ধি জ্ঞান নিয়ে যারা কটাক্ষ করে তাদের এই যুবকের দল দেখিয়ে দিল ব্যবসা কি জিনিস।
মৌসুমী ব্যবসায় বলে একটা কথা আছে যা মোটামুটি রকম পুঁজি খাটিয়ে একটা ভাল মুনাফা করা যায়। প্রতিজনে ২৭০ টাকা বিনিয়োগ করে ৪৫০ টাকা মুনাফা। দশজনের দল হলে হাজার চারেক টাকা কে ঠেকায়। এর মাঝে কাউকে কাউকে দেখা যায় চোখ মুখ শক্ত করে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে অর্থাৎ ঘটনা যাই ঘটুক না কেন ডিম নেওয়া কেউ ঠেকাতে পারবে না। এদের মাঝে কেউ আবার উদাস চোখে এদিক ওদিক তাকায় আর মোবাইলে টুকটাক কি যেন দেখে। ভাবটা এমন এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তো দেখি কিছু ডিম নেওয়া যায় কিনা। কেউ কেউ মাথা নিচু করে বলতে শোনা যায়, বুঝলেন ভাই এইগুলান নাটক; ডিম তো কবে কারসাজি কইরা পাইকাররে দিয়া দিছে।
তো ডিম বাঙালি প্রমাণ করার জন্য লোকজন হামলে পড়ল, একে ধর ওকে মার অবস্থা। লোকজনের লাইন নিয়ন্ত্রণ নিতে পুলিশকে মৃদু লাঠি চার্জ করতে হয়েছে। ব্যাপার না, দুই চারটা যদি কিল ঘুষি পুলিশরে দিতে চান তাহলে এরকম মোক্ষম সুযোগ আর পাবেন না। পুলিশ ইট মারলে আপনারা মারবেন পাটকেল থুক্কু ডিম। বাঙালির দোষ দিয়ে তো লাভ নাই, এক ব্যাচেলর সমাজ ছাড়া কে বলতে পারবে ডিম ছাড়া তাদের চলেই না। তাই তো ৫০০ টাকা সিএনজি ভাড়া দিয়ে ২৭০ টাকার ডিম কিনতে হামলে পড়া।
পরিসংখ্যান বলে, জাপানীরা বছরে ৩৬০টির মত ডিম খায় সেখানে বাঙালি সাকল্যে ৫০টি। এই দুর্নাম গোছাতে বাঙালি ডিম দিবসকেই মোক্ষম দিন হিসেবে বেছে নিল। যারা বাঙালির রসবোধ নিয়ে কটাক্ষ করত তাদের মুখে চুন কালি। একজন পাবে আরেকজন পাবে না, তা হবে না, তা হবে না। তো দেখা গেল কি দু'একজন বিজয়ী যারা অস্কার সমান ডিম পেতে সক্ষম হল তাদের সে অস্কারের পুরস্কার ঘরে তুলতে অক্ষম হল। অতি উৎসাহী জনতা রাগে ক্ষোভে ডিম ভেঙ্গে দিল। ভাবটা এমন, আমি নিতে পারি নাই তোরেও দিমু না। এই নিয়া আরেক দফা ফাইটিং এর মত হয়ে গেল।
এদিকে বিশ্বের তাবৎ বাঘা বাঘা মিডিয়া হামলে পড়ল। এর সাক্ষাৎকার ওর ফটো তোলা নিয়ে হুলুস্থুল অবস্থা। বিবিসি'র মত প্রথম সারির মিডিয়া হেডলাইন করল। লাইম লাইটে আসার জন্য এমন মুফতে সুযোগ বাঙালি আবার কবে পাবে কে জানে। এই রকম সুযোগ সচরাচর আসে না। আমরা রোহিঙ্গা ভুলে গেছি, বিচার বিভাগ ভুলে গেছি, বন্যায় যে দেশের অনেক অঞ্চলে ফসলহানি হয়েছে তা ভুলে গেছি, রেমিটেন্স প্রবাহ ক্রমশ নিম্নমুখী তা মাথায় আসে নি, নেপিদো যে ঢাকাকে মুলা দেখাচ্ছে তা মাথায় আসছে না কিংবা ক্রিকেট টিম যে আড়াই দিনে হেরে গেছে তাও ভুলে গেছি। জীবন এখন ডিমময়!
বিঃদ্রঃ এটি একটি কাল্পনিক ঘটনা প্রবাহ। এই বাঙালি আর দাদাদের বাঙালির মাঝে মিলে গেলে লেখক কোন ভাবেই দায়ী নয়।
রুবু মুন্নাফ
১৪-১০-২০১৭
গুলশান-২, ঢাকা।