হাতিরঝিলে কত জল?

রুবু মুন্নাফ
Published : 17 Feb 2018, 04:58 AM
Updated : 17 Feb 2018, 04:58 AM

বাঙালি পুরুষ যে কতখানি এগিয়ে গেছে তা আজ জনাব ভ্যালেন্টাইনের কল্যাণে জানা গেল। হাতিরঝিল তার জৌলুশ জানান দেবার জন্য এ দিন ছাড়া আর কোন দিনই এমনভাবে প্রকাশ করতে পারতো না। মনে হয় রমণীর আগুনে পানি যে কোন সময় টগবগিয়ে ফুটবে। মানে আমি পোশাকের কথা বলছি আর কী! সব কৃষ্ণচূড়া ফুলের মত লালে লাল। তো যা বলছি আর কি, ছোটবেলায় ফ্যান্টাসি শুনতাম গলায় কলসি বেঁধে সলিলসমাধি। মানে প্রেমিক পুরুষের জন্য আত্মহনন। সব ফ্যান্টাসি হাতের তুড়িতে উড়িয়ে দিয়ে এক মহান প্রেমিক পুরুষ আজ হাতিরঝিল নামক এক প্রেমের সমুদ্রে ঝাঁপ দিলেন!

অফিস শেষে পুলিশপ্লাজা হয়ে হাতিরঝিলের মধ্য দিয়ে বাসায় ফিরছিলাম। কিছুদূর যেতে না যেতে সিকিউরিটির লোকজনের তোড়জোড় দেখলাম। সব বাঁশি, লাঠি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি। ভাবলাম ঢাকা শহরের নিত্য ঘটনা। হয়ত ছিনতাই-টিনতাই কিছু একটা হয়েছে। আবার দেখা গেল পানির কাছ ঘেঁষা যেসকল যুগল প্রবল আর্কষণে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হতো না, তারা লাপাত্তা! আমি চোখ কছলে নিলাম। হায়! এমন দিনে, সখি বিনে, ক্যামনে দূরে রয়। আর যারা মহান ঔষধি গজ্জিকা সেবন করতো তারাও হাপিস।

কাউকে না দেখে আমার হতাশ লাগল। কিন্তু আমাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দেবার জন্য কিনা জানি না, লোকের দঙ্গল হুমড়ি খেয়ে পড়ল। সবাই চিৎকার চেঁচামেছি করছে আর ডাকছে, ভাই উইঠা আসেন। ব্যাপার কী দেখার জন্য আমি আগ্রহভরে সামনে এগুলাম। সবাই আধো আঁধারে পানিতে কী যেন দেখছে। আমিও আগ্রহ সহকারে তাকালাম। সিকিউরিটির লোকজনের টর্চের আলোতে একজন লোককে পানির গভীরে চলে যেতে দেখলাম। সবাই হইহই করে উঠল। লোকজনের মাঝে চাপা উত্তেজনা। এই বুঝি ডুবে মরলো। কেউ কেউ সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য পানির কাছাকাছি নেমে গেল। আবার কাউকে বলতে শোনা গেল, 'মাইয়াডারেও পানিতে চুবা।' এক বালিকাকে কাঁদো কাঁদো ভাবে পাবলিক ওয়াকয়ের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল।

রহস্যের জাল উন্মোচনের জন্য লোকজনের কথাবার্তায় গভীর মনযোগ দিলাম। শেষে জানা গেল, প্রেমিক পুরুষ তার প্রেমের প্রমাণ দেবার জন্য পানিতে নেমে গেল। লোকজনের ডাকাডাকিতে কোন লাভ নাই। প্রেমিক পুরুষ পানি থেকে উঠবে না। হ্যাঁ, উঠবে যদি ক্রন্দসী বালিকা তাকে ডাকে। তবেই সে পানি থেকে উঠবে। আমার কেন জানি সন্দেহ হচ্ছে বালিকার ক্রন্দন তার প্রেমিক পুরুষের কর্ণ গোচরিত হচ্ছে না। এতগুলো লোকের কথাবার্তায় বালিকা ঘাবড়ে গেছে। একে তো আলো আঁধারির খেলা তার উপর লোকজনের চিৎকার চেঁচামেচি। দেখলাম খেলা ভালোই জমছে।

আমি মনে মনে জনাব শফিক রেহমান সাহেবকে ধন্যবাদ দিলাম। একটা পরদেশীয় থিম এদেশে আমদানি করেছে বলে। আহারে আজকে তাপমাত্রা আট-নয় থাকলে ব্যাপারটা বুঝা সহজ হতো। জানা যেত হাতিরঝিলে কত জল??

রুবু মুন্নাফ
১৪-০২-২০১৮
দক্ষিণ বনশ্রী, ঢাকা।