তামাশার দেশে বাংলা নববর্ষ পালন, বাংলা সংস্কৃতি আজ ধ্বংসের পথে, সাথে দেশ

রুদ্র আমিন
Published : 15 April 2015, 06:26 PM
Updated : 15 April 2015, 06:26 PM

মরহুম অর্থমন্ত্রী সাইফুর রাহমানের ফেলে আসা বৈশাখ নিয়ে চমৎকার উক্তিটি মনে পড়ে গেলো। খুব খুব ভাল লেগেছে তার উক্তিটি।

"যে জাতি পান্তা ভাত দিয়ে নিজেদের নতুন বছর শুরু করে ওদের উন্নতি হবে কী ভাবে?"

আমাদের যেন সব কিছুতেই একটু বাড়াবাড়ি করা অভ্যাসগত সমস্যা। কিংবা স্ট্যাটাস, কিছু বললেই অনেকে বলে ফেলে আপনার যোগ্যতা নেই বলেই আপনি এমনটি করছেন। কিন্তু তারা হিসেবে করে কথা বলে না, তাদের সংখ্যা কত ? কিছু মানুষকে নিয়েই কি একটি দেশ নাকি সমগ্র জাতি নিয়েই একটি দেশ। যদি পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়ার কথা চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে দ্রব্য মূল্যের মূল্য একটু হেরফের হলেই মন্ত্রীত্ব নিয়ে টানা হেচড়া চলে। অনেকে স্বইচ্ছাতেই পদত্যাগ করেন। আমরা তো কত কথাই বলছি প্রশাসনিকভাবেই দ্রব্য মূল্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছি। এই বৈশাখে ইলিশ মাছ নিয়ে কত নাটকই না ঘটছে আমাদের দেশে। যে ইলিশ মাছ আমাদের দেশ থেকে ইন্ডিয়া এবং অন্যান্য দেশে রপ্তানি হয় তাহলে কেন আমাদের দেশের ইলিশের মূল্য ১৬,০০০/- টাকা হবে ? এ কেমন দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ ? বিক্রেতাকে কোন জবাবদিহি করতে হয় না আবার ক্রেতাকেও ঠিক তাই।

বাঙলা নববর্ষ – ১৪২২ নিয়ে আমার তেমন কোন আনন্দ নেই। নিজের আনন্দ গুলো আজ সন্তানের আনন্দে মিলেমিশে আছে। বাংলা নববর্ষে যখন শুনতে পাই হিন্দি গান তখন দুঃখগুলো আরও বেড়ে যায়। আমরা কি বা কেমন নববর্ষ পালনে মরিয়া। সংস্কৃতির নাম অপসংস্কৃতি আমাদের চেঁপে বসে আছে। ধবংস করে চলেছে দিনেদিনে বাংলার ঐতিহ্য, বাংলার নাম।

কুমার বিশ্বজিতের সেই গানটির কথা মনে পড়ে গেলে…….

"তোমরা একতারা বাজাইও না
তোমরা দোতরা বাজাইও না
একতারা দোতরা বাজাইলে মনে পড়ে যায়
একদিন বাঙালি ছিলাম রে।"

আজ এজন্যই মনে হয় আমরা আমাদের সংস্কৃতি থেকে দূরে চলে যাচ্ছি। এই গানের দোষ নেই, গানের কথাগুলো খুব মনে পড়ছে যিনি লিখেছেন সুন্দর কথাই লিখেছেন। আমাদের অবস্থা এমন হবে, আমরা আমাদের নিজ পরিচয় দিতে লজ্জ্বা বোধ করবো। আমাদের এমন স্বভাব হবে একদিন এমন ভেবেই গীতিকার গানটি রচনা করেছেন। আবার আরেকটি গানে কুমার বিশ্বজিত কণ্ঠ দিয়েছিলেন।

"সাদা কাপড় পড়লেই
মনটি সাদা হয় না,
একতারা হাতে নিলেই
বাউল হওয়া যায় না।"

বাহ্যিক চেহারা বদল করলেই আমরা ভদ্র কিংবা ভালমানুষ হতে পারি না। বছরে একদিন বাংলা নববর্ষের কথা মনে করে বাংলা নববর্ষকে স্মরণ করার জন্য বাঙালি সেজে ঘুরে বেড়ালেই আমরা বাঙালি হতে পারবো না। হৃদয়ে যদি বাংলার ভালবাসা, জন্মভূমিতে জননীর অবস্থান যদি থেকে নাই থাকে তবে এই বেশভুষ করে কোন লাভ নেই। উত্তরায় এক স্কুলে বাংলা বর্ষ বরণ উপলক্ষ্যে গান চলছিল যে ছবিতে সানি লিওন অভিনয় করেছেন। ধিক্কার দিতে হয় ঐ সকল স্কুল প্রতিষ্ঠানকে, প্রতিষ্ঠানের সাথে যে সকল ব্যক্তি জড়িত সকলকেই।

মোল্লারটেক সোয়ান গার্মেন্টসের শ্রমিকগুলো তাদের তিন মাসের বকেয়া বেতন পেলো না। প্রতিটিদিন গার্মেন্টস ঘিরে শতশত শ্রমিক ন্যায্য বেতন পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুণছে। মালিক পক্ষকে গার্মেন্টসের ভেতর আটকে রেখেছে। এই মালিক পক্ষ যেন বের হতে না পারে সেজন্য তারা পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু সমাধান তো কিছুই হচ্ছে না। প্রশাসন কি জানে না ? এতো বড় একটি গার্মেন্টসের মালিকপক্ষ শ্রমিকের হাতে বন্ধি ? অবশ্যই প্রশাসন জানে কিন্তু তাদের কোন খেয়াল নেই এই শত শত শ্রমিকের দিকে।

প্রশাসনিক সহায়তা পেলে অবশ্যই আজ তাদের বৈশাখ সুন্দরভাবেই পালন হতো। তীর্থের কাঁকের মতো কিংবা স্বজন হারা মানুষের মতো কপালে কিংবা মাথায় হাত রেখে বসে থাকতে হতো না। আর আমরা বর্ষ বরণ নিয়ে খুব ব্যস্ত। ১৬ হাজার টাকার ইলিশ মাছ কিনে বর্ষ বরণ করে। মাছ বিক্রেতার এবং মাছ ক্রেতা নিয়ে মিডিয়া তোলপাড় করে ফেলছে, কিন্তু সোনার বাংলার ইলিশ মাছ কিভাবে এতো মূল্য হয় ? কিভাবে এই দেশের বাজার মূল্য এতোটা অবনতি ঘটছে ? প্রশাসন কোথায় ?

কিসের নববর্ষ ? কিসের নববর্ষের র‌্যালি ? মানুষগুলো না খেয়ে মরছে আর পুঁজিবাদী, ধনবান ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, কর্পোরেট দালালরা বাজার দরকে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তামাশা দেখছে। আর প্রশাসন নাকে সরিষার তেল মেখে ঘুমাচ্ছে। এই যদি হয় দেশের অবস্থা তাহলে নববর্ষ বরণে হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট করে কী লাভ তাদের?