কোরবানি আজকাল আলোকচিত্র প্রদর্শনী

রুদ্র আমিন
Published : 22 Sept 2015, 06:52 PM
Updated : 22 Sept 2015, 06:52 PM

কোরবানি যেন আজকাল বড় ফ্যাশানেবল আলোকচিত্র প্রদর্শনী আমাদের দেশ ও সমাজে। ধনী-গরীবের ভেদাভেদ লাঘব নয় বরং ধনী-গরীবের ভেদাভেদের আরও দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়া হয় এই কোরবানির মাধ্যমে কিছু কিছু ব্যক্তিবর্গের কারণে। আর বিশেষ করে ঢাকা শহরের কোরবানি যেন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতোই আলোচ্য বিষয়। লক্ষ লক্ষ টাকার কোরবানির পশু ক্রয় হয়  দেখে মনে হয় তাদের নিকট টাকা যেন বাঁশের শুকনো পাতা।

যখন দৌড়ে কোন এক পথশিশু হাতে ফুল নিয়ে গাড়ি স্পর্শ করেন, ভিক্ষে নয় একটি ফুল বা একটি ফুলের মালা বিক্রির উদ্দেশ্য বলে স্যার / ম্যাডাম একটা ফুল নেবেন; সাহেবকে দিবেন ভাল লাগবে আবার যখন সাহেব পান তখন ম্যাডামের কথা বলে। অনেক সময় গাড়ি স্পর্শের জন্য তাকে বকা গুনতে হয়। গরীবের শরীর থেকে গন্ধ বের হচ্ছে। এতো ছোট শিশু চুরি তো নয় ভালো পথে বেঁচে থাকতে তার ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে ফুল বিক্রি করছে একটি টাকাও আমাদের হৃদয় থেকে বের হয় না।  কিন্তু ৪০০ কেজি ওজনের একটি গরুর জন্য খরচ ১৫-২০ লক্ষ টাকা চোখের পলকের বের হয়। খুঁজে দেখলে দেখা যাবে সে সরকারের ট্যাক্সও দেয় না। অবৈধ্য টাকার কোন মূল্য থাকে না। এটাই তার প্রমাণ।

আমার কথা হচ্ছে কোরবানির গোশত তিনি বা তিনারা কাদের মাঝে বিলিয়ে দিবেন যেখানে গরীবের শরীরে গন্ধ বের হয়। স্বাভাবিকভাবে বুঝা যায় কারও ঘরে পুরো গোশত ফ্রিজ জাতকৃত হয়। এসব দৃশ্য সত্যি কোরবানির নামে পশু হত্যা । পশু মানুষ হত্যা করতে পারে না কিন্তু মানুষ পশু হত্যা করতে পারে। আসলে  আমি আপনারা আপনি মানুষের মতো মানুষ হতে পেরেছি কি? ভেবে দেখুন মানুষ হতে না পারলে এই লক্ষ টাকার কোরবানিও সহি হচ্ছে না।

অপচয় কখনোই কোরবানি হতে পারে না। বর্তমান চিত্র দেখে মনে হয় পরিবারের প্রথম সন্তানকে কোরবানি করার যে রীতি চালু হতে গিয়েও হলো না সেটই ঠিক ছিল। গরুর থেকেও ভালো গোশত পাওয়া যেতে। এমন রীতিতে হয়তো আমি নিজেই কোরবানি হয়ে যেতাম, কারণ আমি পরিবারের  প্রথম সন্তান ।  এমনটিই হওয়া উচিত ছিলো যেভাবে আমরা কোরবানি নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছি সে হিসেবে আমাদের কারো কোরবানি হয় কি না সেটাই ভাবতে পারছি না।

আত্মীয় স্বজনদের মাঝে প্রতিযোগিতা কোরবানির পশুকে ঘিরে। দেখা যায় এমন প্রতিযোগিতায় কেউ কারও বাসায় আত্মীয়ের প্রাপ্য গোশত বন্টন করি না। আর গরীবের জন্যে গোশত বন্টনেও চলে ছলনা। কোরবানির গোশত বাছাই করতে গিয়ে খারাপ গুলো যায় গরীবের হাতে আর ভালগুল যায় ডিপ ফ্রিজে। মাথা, কলিজা এগুলোর ভাগাভাগি আল্লাহ নিষেধ করে দিয়েছেন বলেই তারা এগুলোর ভাগাভাগি করছেন না।

আমরা এতো এতো টাকার খেলাখেলি করি কেন একজন সুবিধাবঞ্ছিত মানুষকে টাকাটা দিয়ে সাহায্য করতে পারি না? এটা কি কোরবানির মতোই সওয়াব হয় না ? জীবে প্রেম বলে কি কিছুই নেই স্রষ্টার নিকট? জীবে প্রেম না থাকলে তার ইবাদত বন্দেগি কিছুই হবে না। স্রষ্টার সৃষ্টির প্রতি অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে। আপনাকে অর্থ সম্পত্তি দান করেছে কিসের জন্য? সেটা কি আপনাকে একাকি ভোগ করার জন্য? না, আপনাকে ধন সম্পত্তি দিয়েছে গরীবের হক ঠিক মতো আদায় করার জন্য।

পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে সুইপার থাকতে হবে তেমনি ধনীদেরও থাকতে হবে। আর ঐ সুইপার না থাকলে ধনীদের নষ্ট ময়লায় ডুবে মরতে হবে। তেমনি ধনীরা না থাকলে গরীবের মরে যেতে হবে। আসুন কোরবানিতে অপচয় না করে নিজের আত্মীয় স্বজনের মাঝে যারা খুব দরিদ্র তাদেরকে সাবলম্বী করে গড়ে তুলি। একবারে একজনকে নয় পর্যায়ক্রমে এক একজনকে। আমরা কেন ধর্মকে হেয় করবো? কেন ধর্মকে নিয়ে ধর্মের অনুসারীদের সাথে প্রতিযোগিতায় নামব? ধর্ম হলো শান্তির। ধর্মকে প্রতিযোগিতামূলক না করে ধর্মকে সবার মাঝে সমহারে প্রকাশ করুন। বর্তমানের দৃশ্য দেখে মনে হয় হিংসার বশত মানুষ মানুষকে কোরবানি দিচ্ছে।