নারায়নগঞ্জের পিলকুনী পাড়ার ফ্ল্যাটবাড়ীতে চলছে রমরমা দেহ ব্যবসা

রুদ্র আমিন
Published : 15 April 2017, 08:18 PM
Updated : 15 April 2017, 08:18 PM


নারায়নগঞ্জের পিলকুনী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক আবাসিক বাসা-বাড়ীতে চলছে রমরমা দেহব্যবসা। ফ্ল্যাট বাসা- বাড়ীতে পুলিশের নজরদারি না থাকায় অনেকটা বেপরোয়া হয়ে উঠছে অবৈধ দেহ ব্যবসার সাথে জড়িতেরা।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পিলকুনী পাড়ার ভ্রাম্যমান পতিতাদের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। যৌন ব্যবসার সাথে জড়িত মেয়েরা রাস্তায় পুরুষদের বিভিন্ন কৌশলে পটিয়ে ফেলে। এসব পেশায় সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে কলেজ ছাত্রী ও স্বনামধন্য পরিবারের মেয়েরা। আর এদের খদ্দের হচ্ছে চাকুরিজীবী, পেশাজীবী, প্রবাস ফেরৎ যুবক, ছাত্রসহ সবশ্রেনীর পুরুষ আর এদের সর্বাধিক ভাবে দেখাশোনা করেন এলাকায় বকে যাওয়া যুবকেরা। দেহ ব্যবসার সাথে জড়িত বাসা – বাড়ী ও ফ্ল্যাটগুলোতে গেলে দেখা যায় এ যেন এক পতিতাপুরী।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতারনার শিকার একজন বলেন, ফ্ল্যাট বাসা- বাড়ীতে এসব অসামাজিক কাজের সাথে জড়িতরা অনেক প্রভাবশালী তারা পুলিশ প্রশাসনকে ভয় করেনা। আমি তাদের থপ্পরে পড়েছিলাম। নিজের মান সম্মান বাঁচাতে একাধিকবার তাদেরকে টাকা দিয়ে মুক্তি পেয়েছি। এভাবেই সর্বশান্ত করে যাচ্ছে তারা বন্ধুত্ব কিংবা ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে।

স্থানীয় ও ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, বেশিরভাগ আবাসিক বাসা-বাড়ীর খদ্দের, কাষ্টমার বা গেষ্ট জোগাড় হয় রাস্তা থেকে। আবার এ ব্যবসার সাথে যারা জড়িত মেয়েরা মোবাইল কিংবা ফেসবুকের মাধ্যমে অভিনব কায়দায় খদ্দের সংগ্রহ করেন। এক্ষেত্রে মেয়েরা সুন্দর সুন্দর ছবি ফেসবুকে আপ করে সহজ সরল ছেলেদের সাথে প্রথমে বন্ধুত্ব পরে সেটাকে অল্পদিনেই গভীর প্রেমে পরিণত করে।

এ ব্যবসার সাথে জড়িত মেয়েরা অত্যান্ত চালাক প্রকৃতির হয়ে থাকে। এরা এতাটাই ভয়ংকর যে, যেকোন সময় যে কোন ঘটনা সাজাতে পারেন শুধু মাত্র অর্থ আদায়ের জন্য। একবার যদি ভুলেও কেউ তাদের প্রতারনায় পা বাড়ায় তার আর রক্ষা নেই। বাসা- বাড়ীগুলোতে খদ্দের গেলে অন্যান্য ভাড়াটিয়া কিংবা ভাড়িওয়ালাদের চোখ এড়াতে নিজের আপন আত্মীয় বানিয়ে ফেলে। এক সপ্তাহের মধ্যে যেকোন পুরুষ লোককে তাদের আয়ত্বে আনতে সক্ষম বলে দাবি তাদের।

ইদানিং এমন ঘটনা বেশি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের দ্বারা। একটু একটু করে ফেসবুকে চ্যাটিংয়ে মেতে ওঠেন তারা। ঘনিষ্ঠতার এক পর্যায়ে নিজের আকর্ষনীয় ছবি ম্যাসেঞ্জারে দিয়ে পুরুষদের আকৃষ্ট করেন। যাতে সহজে তার প্রেমে হাবুডুবু খায়। এভাবেই বাড়তে থাকে তাদের বন্ধুত্বের বাধন। এক পর্যায়ে দেখা করার কথা বলে পুরুষদের বাসায় কিংবা তাদের নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায়। বাসায় নিয়ে গেলে তার দালালদের মোবাইলের মাধ্যমে জানান দিয়ে দেয় যে সে তার কাঙ্খিত মানুষটিকে পেয়েছে এবং সে তার সাথেই আছে। মোবাইল কথোপকথনে বুঝাই যাবে না তারা কোনো দালালের সাথে কথা বলছে, নিজেদের বান্ধবী বানিয়ে তাদের কথাগুলো বলে থাকে।


বাসায় গেলে খদ্দেরকে প্রথমে যৌন উত্তেজনায় মাতিলে তোলে, এটাও তাদের এক কৌশল, গায়ের কাপড় খোলা হয়ে গেলেই চক্রটির সাথে জড়িতেরা বাসায় এসে হাজির। এমন একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছিলাম গত এক সপ্তাহ আগে, ফেসবুকের মাধ্যমেই পরিচয়, একটু একটু করে ঘনিষ্ঠ বন্ধুতে পরিণত। এই চক্রটিকে ধরতে পহেলা বৈশাখ ঐ ছেলেটিকে সাথে করে নারায়নগঞ্জের পিলকুনী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এলাকায় যায় যাওয়া হয়, মেয়েটির দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী ছেলেটির বন্ধু হিসেবে মেয়েটির সাথে দুজন দেখা করে। দেখা হওয়া মাত্র মেয়েটি বলে সাথে আরেকজন নিয়ে এসেছো ক্যান? ছেলেটি বলে ও আমার বন্ধু, ও পাশে থাকলে কোনো সমস্যা নেই, এরপর পরিচয় পালা শেষ করে আবিদ জেনারেল স্টোর থেকে ২৫০/- টাকা মূল্যের কিছু শুকনো খাবার কিনতে হয় মেয়েটির কথা মতো। কেনাকাটা শেষ করেই মেয়েটির বাসার পথে চলতে দেখা গেলো মেয়েটির মোবাইলে একটি কল এসেছে, কার ফোন এসেছে জিজ্ঞেস করলে মেয়েটি জানায় তার এক বান্ধবীর কল এসেছে, রিসিভ করতে বলা হলে রিসিভ করে ফোন। স্পষ্ট শোনতে পেয়েছি আমি এবং ছেলেটি, মেয়েটি বলছে " আমি বাসায় যাচ্ছি আমার দুজন বন্ধু এসেছে, বেশিক্ষণ থাকবো না, তুই আধা ঘন্টা পর দেখা করিস।

এরপর মেয়েটির পিছু পিছু তার বাসায় যাওয়া, বাসার বাহিরে থেকে তালা দেয়া ছিলো, অন্তর নামে কাউকে ডাকা হলে, বারো-পনের বছরের এক ছেলে বের হয়ে তালাটি খুলে দিলো, এর ঘরে প্রবেশ করা, কোকাকোলা এবং পটেটু চিপস্‌ খুলে দেয়া হলো, আমাকে এবং ছোট্ট ছেলেটিকে খেতে বলা হলো, এখানে লক্ষণীয় বাসার গেটে আর তালা দেয়া হয়নি। খেতে খেতে ছোট ছেলেটি বাসার দরজাও খুলে দিলো।

ঘড়ির কাটা দেখে আধাঘন্টার আগেই ঘর থেকে বের হতে না হতেই সিড়িতে এক যুবক এসে হাজির, ছেলেটি বলছে, আপনি কে, কোথায় যাচ্ছেন, ভিতরে আসেন। তার জবাবে বলা হলো কোনো কথা থাকলে আসুন গেটের বাহিরে যাই, এক পর্যায়ে গেটের বাহিরে, সেই যুবকের সাথে আরও তিনজন, বুঝার বাকি নেই এরাই হলো দেহব্যবসার দালাল। উত্তেজিত হওয়ার এক পর্যায়ে নিজেদের আইডি কার্ড বের করে দেখানো মাত্রই তারা যে যার মতো রাস্তা মাপা শুরু করে দিয়েছে, একজনের নাম আলম, সে ঐ এলাকার বাসিন্দা। কথা বলার জন্য ডাকা হলে তাকে আর ধরা ছোয়ার কাছে পাওয়া যায়নি।

এই অপরামূলক কাজের ব্যপারে এলাকাবাসীকে জিজ্ঞেস করা হলে, তারা অস্বীকার করেনি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবক বললেন, এদের যন্ত্রণায় এলাকার জনগণ অতিষ্ট, আপনারা যা জানতে চান সব বলতে বলবো তবে নামটি প্রকাশ করা যাবে না। তার কথায় সম্মতি দিয়ে জিজ্ঞেস করা হলো, এই এলাকায় কতদিন যাবৎ এই ব্যবসা চলছে, ভাই এই এলাকায় আগে এমনটা ছিলো না প্রায় বছর দশের ধরে এমন চলছে, শুধু দেহ ব্যবসা নয়, ফেন্সি, ইয়াবা, গাজা সবার সামনেই চলে।

তা আপনারা এলাকাবাসী কোনো প্রতিবাদ করে নি? প্রতিবাদ অনেক করা হয়েছে, কয়েকবার পুলিশের কাছে ধরে দেয়া হয়েছে কিন্তু যেই লাউ সেই কদু, দেখা যায় সপ্তাহ খানেক পর আবার আমাদের সামনে আঙ্গুল নেড়ে নেড়ে হুমকি দিচ্ছে, এখন বলুন আমরা কি করতে পারি? প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করলে অনেক সময় আহত হতে হয়, যদি তারা রাতে একা পায় আঘাত করে। যেখানে আইন, প্রশাসন চুপ সেখানে আমরা কি করতে পারি? আপনারা সাংবাদিক মানুষ আপনাদের কলমের শক্তি অনেক, যদি আপনারা লেখালেখির মাধ্যমে কিছু একটা করতে পারেন, হ্যাঁ, আপনারা কিছু করলে আমরা আপনাদের পাশেই আছি এবং থাকবো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় পিলকুনীর বাসিন্ধারা অভিযোগ করে বলেন, পিলকুনীর অধিকাংশ ফ্ল্যাটবাসার ভাড়াটিয়া ও বাড়ীওয়ালারা প্রবাসে থাকেন। এক্ষেত্রে এ ধরনের ব্যবসায় প্রবাসীর ভাড়ীওয়ালা স্ত্রী ও বিভিন্ন ফ্ল্যাটের অপরিচিত ভাড়াটিয়ারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত থাকে। তারা আরো বলেন, এসব ফ্ল্যাট বাসাগুলোতে কে কার রুমে কখন, কেন? যাচ্ছে এর কোন খবর রাখেনা বাড়ীওয়ালারা। অন্যদিকে কাকে বাড়ী ভাড়া দিলো সেটাও খেয়াল করে না। ভাড়া পাওয়ার লোভে অনেকটা যাচাই বাছাই ছাড়াই বাড়ীর মালিক ফ্ল্যাট ভাড়া দেন। আবার বাড়ীর ভাড়াটিয়াদের ব্যাপারে পৌরসভা কিংবা থানায় কোন তথ্য নেই কোন বাড়ীতে কাকে বাড়ী বা ফ্ল্যাটভাড়া দেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রশাসন আর কত বেখেয়ালি হবে আপনারা বলতে পারবেন?

রিপোটটি এখানে প্রথম প্রকাশিতপড়তে ক্লিক করুন