ভ্যানগাড়ি যার বাড়ি

রুহিন আহমেদ
Published : 17 March 2019, 09:58 AM
Updated : 17 March 2019, 09:58 AM

দাঁড়িয়েছিলাম  বঙ্গবীর রোড এলাকায় এক দোকানের সামনে। চোখে পড়লো একটি ভ্যানগাড়ি নিয়ে এগিয়ে চলেছেন এক যুবক। ভ্যানগাড়িতে তার দুই প্রতিবন্ধী ছেলে।

একটু সামনে গিয়ে এক হোটেলের পাশে দাঁড়ালেন যুবক। প্রতিবন্ধী দুই ছেলেকে খাইয়ে দিতে শুরু করলেন।

আমি হেঁটে হেঁটে গেলাম ভ্যানগাড়ির কাছে।

প্রতিবন্ধী দুই ছেলেকে নিয়ে পাঁচ বছর ধরে সিলেটে অসহায় ভাবে ভ্যানগাড়ি নিয়ে ভিক্ষে করে বেড়ান ছালাম মিয়া। নিজের অসুস্থতা নিয়ে ভ্যানগাড়ির নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরতে থাকেন। সিলেটের অলিগলি ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত বলে জানালেন ছালাম মিয়া।

দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ঈদ থেকে শুরু করে আনন্দ কি তা বুঝতে পারেননি ছালাম মিয়া ও তার পরিবার।

তিন বেলা ভাত খাওয়া দূরের কথা ঠিকমতো এক বেলা ভাত জোগাতে হিমশিম খেতে হয়।  ভিক্ষে করে যে কয়টা টাকা পান তা  ছেলেদের জন্য ঔষধ কিনতেই শেষ হয়ে যায় বলে জানালেন ছালাম মিয়া।

কথা বললাম ভ্যানগাড়িতে বসা দুজনের সঙ্গে। রুমন মিয়া বয়স ১৭। সঙ্গে তার ছোট ভাই জুবেদ মিয়ার বয়স ১১ বছর ।

শারীরিক প্রতিবন্ধী রুমন বললেন,  "সারাদিন এক জায়গায় বসে থাকতে ভাল লাগে না। সারাদিনে কিছু খাই না। খিদে পেলে কলা, বিস্কুট এসব খাই। পায়খানা করতে সমস্যা হয়, তাই প্রতিদিন একবেলা রাতে ভাত খাই। দিনের বেলা যেন পায়খানা করতে না লাগে।"

ছোট ভাই জুবেদ মিয়া বলেন, "যেখানে রাত হয় সেখানেই শুয়ে পড়ি। রাতে ভ্যানগাড়িতে ঘুমাতে খুব কষ্ট হয়। সারাদিন ভ্যানগাড়িতে ঘুরলে গরমে আমার মাথা বেদনা করে। খিদা লাগলে খেতে পারি না।"

ছালাম মিয়ার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার অতীতপুর গ্রামে। তার তিন মেয়ে তিন ছেলে। পরিবারের বাকি সদস্য বাড়ি থাকেন।

ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ায় সামাজিক কুসংস্কারের কারণে মেয়ের বিয়ের জন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। মেয়েদের বিয়ে করতে কেউ চায়না।

ছালাম বলেন, তারপরও বড় দুই মেয়েকে অনেক কষ্টে ধারদেনা করে বিয়ে দিয়েছি।

ছোট মেয়ের বয়স নয় বছর। আর তিন ছেলের মধ্যে দুইজন প্রতিবন্ধী। আর সব ছোট ছেলের বয়স ছয় বছর।  ধীরে ধীরে সেও প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছে।

রুমন মিয়া ও জুবেদ মিয়া জন্ম থেকে পঙ্গু নয়। আর দশটি শিশুর মতো এরাও এক সময় ছিল সুস্থ ছিল।

রুমন মিয়া ও জুবেদ মিয়া সাত-আট বছর পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা ও খেলাধূলা করেছে বলে জানান ছালাম মিয়া। এরপর কোনো এক অজানা রোগে হাত-পা শুকিয়ে যেতে থাকে।

প্রথমে এলাকার চিকিৎসকের কাছে যান ছালাম মিয়া। কোনো ফল না পেয়ে নিজের পাঁচ শতক জমি বিক্রি করে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েও কোনো সুফল পাননি।

ছালাম মিয়ার ধারনা উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে ছেলে রুমন মিয়া ও জুবেদ মিয়া সুস্থ হয়ে উঠতো। প্রতিবন্ধী দুই ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতে জমি  বিক্রি করে  তিনি এখন নিঃস্ব।

তার পরেও ছালাম মিয়া ছেলেদের চিকিৎসা করাতে চান।

অভিযোগ জানিয়ে ছালাম বলেন, "চার বছর আগে গ্রামের মেম্বার সরকারি অনুদানের আশ্বাস দিয়ে ৬০০ টাকা নেন।কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অনুদান বা সাহায্য কিছুই পাইনি।"