শাস্তির ভয়ে স্কুলে যেতে চায় না হোসেন

রুহিন আহমেদ
Published : 10 April 2019, 01:42 PM
Updated : 10 April 2019, 01:42 PM

যুগে যুগে শিশুর শিক্ষা ও শাস্তি নিয়ে অনেক রকম ধারনা আমাদের সমাজে প্রচলিত। আজকে যারা বয়োজ্যেষ্ঠ তারা একসময় বিদ্যাপীঠে এই শাস্তি-ব্যবস্থার মধ্যেই বড় হয়েছেন।  স্কুল ও মাদ্রাসা পড়ে পাস করেছেন অথচ শিক্ষকের হাতে মার খাওয়া হয়নি এমন শিক্ষার্থী খুব কমই পাওয়া যাবে।

আমাদের দেশের কোমলমতি শিশুরা যতটা না স্কুলে আনন্দ পাওয়ার চেয়ে শাস্তি ও বেশি মানসিক চাপে থাকে বেশি।

সবশিশুদের মেধা এক নয়, কেউ মেধাবী আবার কেউ দুর্বল । অনেক শিশু অল্প সময়ে আয়ত্ব করে নেয়, অনেক শিশুরা সেই পড়াটা ঠিকমত বুঝে উঠতে পারেনা। আর পড়া না পারার কারণে স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষকরা নানান রকম শাস্তি প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের উপর।

এ নিয়ে কথা  হয় আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী সানজিদা বেগমের সাথে। সানজিদা বলেন,   "স্কুলে ঠিকমত পড়া না পারলে, ঠিকমত স্কুলে না আসলে, আমাদের বয়ঃসন্ধি সমস্যার কারণে অনেক সময় স্কুলে আসা সম্ভব হয় না, হৈ চৈ করলে, অনেক সময় ক্লাসে দূর থেকে শিক্ষকের কথা শোনা যায় না। তারপরও ইত্যাদি কারণে আমাদের শাস্তি পেতে হয়।"

একই স্কুলের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী দিলাল আহমদ বলেন,  "পড়া না পারলে, অসুস্থতার কারনে স্কুলে না আসলে, ক্লাসে চলাকালিন সময়ে শৌচাগারে যাওয়া যাবে না; এমন নানা কারণে শিক্ষকের হাতের বেত্রাঘাত ,বেঞ্চের উপর কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকাসহ নানা ধরনের শাস্তি পেতে হয় আমাদের। স্কুলে একদিন না আসলে পরের দিন মার খাওয়াসহ জরিমানাও দিতে হয়।"

আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আক্তার হোসেন বলেন,  "ছাত্র-ছাত্রীরা ক্লাসে মারামারি ও বিশৃঙ্খলা করে। যা অন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার ব্যাঘাত ঘটায়। অনেক সময় ছাত্ররা ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে। আমরা তাদের অভিভাবক ডেকে নালিশ দেই। অনেক অভিভাবকরাই তখন আসেন না ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে। অনেক অভিভাবক বলেন স্কুলের ব্যাপারটা স্কুলে শেষ করতে।

"তখন একটু শাসন না করলে শিক্ষার্থীরা আরোও বেপরোয়া হয়ে যায়। স্কুলে পড়ালেখার জন্য কোনো ধরনের শাস্তি দেওয়া হয় না। আমরা শিক্ষকরা তো শিক্ষাদানের জন্য বিদ্যালয়ে আসি। কোনো শিক্ষার্থীকে মারার জন্য না।"

হোসেন মিয়া পড়ালেখায় দুর্বল বলে জানালেন তার অভিভাবক মিলন মিয়া।

ক্লাসে মার খাওয়ার ভয়ে স্কুলে যেতে চায় না হোসেন।

মিলন বলেন, "তারপরও অনেক বুঝিয়ে স্কুলে পাঠাই। শিক্ষকদের সাথেও কথাও হয়েছে। শিক্ষকরা প্রায় অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারপরও আমাদের বাধ্য হয়ে স্কুলে পাঠাতে হয়।"

এভাবে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়া বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন মিলন।

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রকার শাস্তি  প্রদান করা যাবে না তা আইনে বলা হয়েছে। গণমাধ্যমে  অনেক সময়ই খবর আসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শাস্তির জন্য শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি হতে। এটা আমাদের জন্য যতটা না বেদনাদায়ক তার চেয়ে বেশি লজ্জার।

শহরের তুলনায় গ্রামের স্কুলগুলোতে এই সমস্যা বেশি। অনেক শিক্ষকদের ধারনা যারা যারা শাস্তি পেয়ে টিকবে তারাই শিক্ষা লাভ করবে। অথচ এ ধরনের শাস্তি দেওয়া শিক্ষার্থীদের উপর মানসিক চাপ বাড়ায়। শাস্তির ভয়ে স্কুল পালিয়ে বেড়ায় অনেক শিশুরা।

দেশ ও জাতির উন্নয়নে শিক্ষার বিকল্প নেই। শিশুদের আনন্দের সঙ্গে শিক্ষা অর্জনের সুযোগ করে দিতে হবে। আর এজন্য শিক্ষাঙ্গনে ভীতিমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরি।