বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের প্রস্তাবিত অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন

মোহাম্মদ হাসান আলী
Published : 15 July 2011, 11:49 AM
Updated : 15 July 2011, 11:49 AM

গত ১৪ই জুলাই, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের প্রস্তাবিত অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এক মানববন্ধন পালন করেন। সম্প্রতি কমিশন প্রস্তাব করে যে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (BJS) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হলে প্রার্থীদেরকে আইনজীবি হিসেবে ২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। যেটাকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিয়মের বিপরীত, অন্যায় ও অযৌক্তিক মনে করেন।

গত ১৩ জুলাই, বুধবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেন ষ্টেশন চত্বরে চবি'র আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের কর্তৃক আয়োজিত মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে এই প্রতিবাদ বিক্ষোভের শুরু হয়।

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (BJS) পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন যোগ্য জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট/এসিস্ট্যান্ট জাজ নিয়োগের ক্ষেত্রে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন সিদ্ধান্তটি প্রস্তাব করে। কমিশন মনে করে যে বর্তমানে JATI (Judicial Administration Training Institute)-তে ট্রেনিংটি যোগ্য জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট/এসিস্ট্যান্ট জাজ তৈরী করছে না। তাই শুধুমাত্র ২ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আইনজীবিরা এই জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা দিতে পারবে।

কিন্তু, সারাদেশের আইনের ছাত্র/ছাত্রীরা মনে করেন যে, যদি এই নিয়মটি প্রয়োগ করা হয় তাহলে অনেক উপযুক্ত, মেধাবী এবং সৃজনশীল আইন শিক্ষার্থীর কাছে জুডিশিয়ারিতে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে একটা বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।

চট্টগ্রামের আইনের শিক্ষার্থীরা নিম্নোক্ত উপযুক্ত কারণ সমূহের জন্য উল্লেখিত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ বিক্ষোভ করছেঃ

১/ বাংলাদেশ সার্ভিস কমিশনের (BCS) পরীক্ষায় প্রার্থীদের (ক্যাডারদের) যদি নিজ নিজ সার্ভিসের ক্ষেত্রে ২ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন না হয় তাহলে ৪ বছরের এলএল.বি ডিগ্রী শেষ করার পরেও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় কেন আইনের শিক্ষার্থীদের আইনজীবি হিসেবে ২ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন থাকতে হবে?

২/ বার কাউন্সিলের পরীক্ষা বছরে শুধুমাত্র ১ বার অনুষ্ঠিত হবে এখন, আগে যেখানে বছরের ২ বার অনুষ্ঠিত হত। যদি কোন ছাত্র/ছাত্রী কোন কারণে বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারে তাহলে তাকে আরও ১ বছর অপেক্ষা করতে হবে। তাহলে এই ২ বছরের বাঁধা যোগ হবে। অর্থাৎ একজন ছাত্র/ছাত্রীকে কমপক্ষে ৩ বছর (১বছর বার কাউন্সিলের পরীক্ষার জন্য+২বছর আইনজীবি হিসেবে অভিজ্ঞতার জন্য) অপেক্ষা করতে হবে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য!!! (কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- বার কাউন্সিলের রেজাল্ট প্রকাশ হতে প্রায় ১ বছর চলে যায়। সেদিক থেকে কমপক্ষে ৪ বছর অপেক্ষা করতে হবে)।

৩/ সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে যেখানে সেশন জটের সমস্যা বিদ্যমান এবং এলএল.বি/এলএল.এম ডিগ্রী শেষ করতে নির্ধারিত সময় থেকে অধিক সময় লাগে তখন গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর একজন শিক্ষার্থীকে ২ বছরের অপেক্ষা করানো আসলেই অন্যায়।

৪/ যদি যোগ্য বিচারক নিয়োগের আসলেই দরকার হয় তাহলে অন্য উপায়ে তাদের (সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত বিচারকদের) প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন- একজন সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত বিচারক অন্য একজন বিচারকের তত্ত্বাবধানে আদালত কক্ষে ৬ মাসের ইন্টার্নশিপ করবে। এই ৬ মাসের মধ্যে ২ মাস তিনি দেওয়ানী আদালতে, ২ মাস ফৌজদারী আদালতে এবং বাকী ২ মাস অন্যান্য আদালতে/বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সমূহে উপস্থিত থাকবেন।

৫/ আইন পেশায় ২ বছরের অভিজ্ঞতার অর্থ হচ্ছে- এলএল.বি/এলএল.এম পাস কৃত শিক্ষার্থীরা বার কাউন্সিলের একজন সিনিয়র আইনজীবির অধীনে প্রাকটিস করবেন। তখন ঐ শিক্ষার্থী শুধুমাত্র তার সিনিয়রের সাথে মামলায় অংশ নিবেন। কিন্তু উপরোল্লিখিত একজন বিচারকের তত্ত্বাবধানে কোর্টে ৬ মাসের ট্রেনিংটা সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারককে বিভিন্ন প্রকারের অভিজ্ঞ আইনজীবিদের দ্বারা উপস্থাপিত বিভিন্ন প্রকারের মামলা সমূহে অংশ নেয়ার মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জনে সুযোগ দিবে। অতএব, ২ বছরের আইনজীবি হিসেবে অভিজ্ঞতার চাইতে এই ৬ মাসের ট্রেনিং সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকের উপর সুদূর প্রসারী প্রভাব থাকবে।

উপরের কারণ সমূহ বিবেচনা করে চট্টগ্রামের বিভিন্ন আইন অনুষদের শিক্ষার্থীরা আন্তরিকতার সাথে দাবী করে যে-

১/ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশগ্রহণে প্রস্তাবিত ২ বছরের আইনজীবি হিসেবে অভিজ্ঞতার অযৌক্তিক শর্ত বাতিল করতে হবে।

২/ যোগ্য বিচারক নিয়োগ ও তাদের ট্রেনিং-এর ক্ষেত্রে- একজন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারক অন্য একজন সিনিয়র বিচারকের তত্ত্বাবধানে আদালত কক্ষে ৬ মাসের ইন্টার্নশিপ করবে। উক্ত ৬ মাসের মধ্যে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারক ২ মাস দেওয়ানী আদালতে, ২ মাস ফৌজদারী আদালতে এবং বাকী ২ মাস অন্যান্য আদালতে/বিশেষ ট্রাইব্যুনাল সমূহে উপস্থিত থাকবেন।

আইনের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনকে সিদ্ধান্তটি পুনঃবিবেচনার জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ করছে। অন্যথায় ছাত্র/ছাত্রীরা বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ছাত্র/ছাত্রীদের সাথে সামনে আরও মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিবে।