ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পা দিচ্ছে শিক্ষার্থীসহ এলাকার প্রভাবশালীরা

Published : 7 August 2017, 05:24 PM
Updated : 7 August 2017, 05:24 PM

প্রথমে খাওয়ানো হয় একদম ফ্রি -তে। এরপর আসক্ত হলেই তাকে দিয়ে করানো হয়  খুচরা ব্যবসা। এক সময় হয়ে উঠে সে ডিলার। দ্বিগুণ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদেরকেও এ পেশায় জড়ানো হয় কৌশলে। সম্প্রতি রাজধানির খিলক্ষেত, উত্তরা তুরাগ, দক্ষিনখান, উত্তরখান, বিমানবন্দর এলাকায় এমনি এক অভিনব কৌশলে মাদক ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছে  মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদকের স্পটগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেল সেখানে নানা বয়সের মাদকসেবীদের আনাগোনা। টাকা দিয়েই সব হচ্ছে ম্যানেজ তাই চুপ রয়েছে স্থানিয় পুলিশ প্রশাসন। স্পট ছাড়াও হাটার উপর বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা। ফোনে দেয়া হয় সংকেত। এরপর জায়গা মত চলে যায় মাদকের চালান। রয়েছে চিহ্নিত অর্ধশত মাদক ব্যবসায়ী। রয়েছে প্রায় দেড়শ মাদকের স্পট। বেতন ভুক্ত সোর্সরা তাই সর্বদা পুলিশের হাত থেকে বাচাঁতে মরিয়া মাদক ব্যবসায়ীদের। মাঝে মাঝে পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করলেও তারা জামিনে এসে আবারো শুরু করছে মাদক ব্যবসা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক ব্যবসায়ী জানান, এ এলাকায় রয়েছে নকল ইয়াবাও। সাধারনত  তিন প্রকারের ইয়াবা রয়েছে এখানে। যা সকাল থেকে গভীর রাত পযর্ন্ত খুচরা ও পাইকারি হারে কিনে নিয়ে যাচ্ছে ছোট খাটো মাদক ব্যবসায়ীরা।  ইয়াবা তৈরির মেশিনও নাকি এখানে ভাড়া এনেই তৈরি করা হয় ইয়াবা। তবে এই মেশিন এক মাসের বেশি কখনোই এক জায়গায় রাখা হয় না। তিনি জানান এক মাসে ইয়াবা তৈরির মেশিনের ভাড়া প্রায় ১০ লাখ টাকা। তবে এই ভাড়ার টাকা শেয়ারে বহন করেন এলাকার আধিপত্ত্য বিস্তারকারী মাদক ব্যবসায়ীরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিমানবন্দর থানা এলাকার কাওলা রেললাইনের পাশে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবার হোলসেল দিচ্ছে চিহ্নিত মাদক সম্রাট ইদ্দ্রিস ও তার স্ত্রী মালেকা। সাথে নতুন করে যোগ তেতুল তলার চম্পার মাদক স্পট।  দক্ষিনখানে গাওয়াই বাজার সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে দেলোয়ারের মাদক স্পট। রয়েছে আনোয়ার ও সুজনের আশকোনার মাদক স্পট। চলছে উত্তর খান সুটিং স্পটের কাছে নাঈম এর ওপেন ইয়াবা স্পট। উত্তরা পূর্ব থানা এলাকা নিয়ন্ত্রন করে শুভ, জাহিদ, আমজাদ,পারভীন। আর উত্তরা পশ্চিম এলাকা নিয়ন্ত্রন করে মোস্তফা, মোসলেম। এছাড়া পুরো তুরাগ এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা করছে অর্ধশত মাদক ব্যবসায়ী। উত্তরার ১৪ নং সেক্টর ১৩ নং রোডে থাকেন আবু হানিফ নামের এক ইয়াবা গডফাদার। প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার পিছ ইয়াবা নাকি তার হাত দিয়েই ছড়িয়ে পড়ছে উত্তরা তুরাগসহ বিমানবন্দর ও দক্ষিনখান এলাকায়। যত বেশি পরিমান তত কম রেট আর যত কম পরিমান তত দাম বেশি। উত্তরা ৫ নং সেক্টর এলাকায় রয়েছে আরিফ, শরিফ,রতন,ইব্রাহীম,আরেফিন,কামাল,কামরুল,বুলবুল। ১২ নং সেক্টর বালুর মাঠ সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে স্বাধীন, আরিফ, যুব, শুভ। হাসুর বটতলা এলাকা ও ধরঙ্গারটেক এলাকায় রয়েছে সাজু,ঝর্ণা। নলভোগ ও তারারটেক এলাকায় রয়েছে সোহাগ, মালা। ফুলবাড়িয়াতে সুমা, রাসেল, বিউটি, দীপসহ আরো অনেক খুচরা বিক্রেতা। তাছাড়া উত্তরার  কিছু বাইং হাউস তো ইয়াবা ব্যবসার দোকান খুলে বসেছে।

স্থানীয়রা জানান জেনে শুনে চুপ করে আছেন তারা। ইয়াবা এখন মহামারির আকার ধারন করেছে অত্র এলাকাগুলোতে। সাথে রয়েছে গাজাঁ ও ফেন্সিডিল। এ সকল অপরাধীদের সাথে আতাত রয়েছে প্রশাসনের কিছু সদস্য ও প্রভাবশালীদের। এ নিয়ে অভিযোগ করলেই পড়তে হয় নানা হুমকিতে।

তবে উত্তরা জোনের সহকারি পুলিশ কমিশনার তাপস কুমার দাস জানান, মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে নিয়মিতই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তবে মাদক ব্যবসায়ীরা নিত্য নতুন কেৌশল অবলম্বন করায় তাদের ধরতে কিছুটা বিরম্বনায় পড়তে হচ্ছে থানা পুলিশকে।

মো:মোস্তাফিজুর রহমান রুমন
সাংবদিক