তত্ত্বাবধায়ক সরকার: সংঘাত লেগেই যাচ্ছে!!

রুরা
Published : 16 June 2011, 06:39 PM
Updated : 16 June 2011, 06:39 PM

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি'র (এলডিপি) সভাপতি এবং বিএনপির একসময়কার তুখোর নেতা ড. অলি আহমদ একটি অনলাইন ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সরকারের বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্তে দেশ আবারো সংঘাতের দিকে যাচ্ছে এবং এর পরিণতি ভালো নাও হতে পারে। অপরদিকে গত সপ্তাহের মিডিয়াজুড়ে ছিল রাজনীতির মাঠে আবারও উত্তাপ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ব্যবসায়ীসহ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ভিন্নধর্মী অবস্থানের পাল্টাপাল্টি খবর।

এসব নিয়ে বিশেষকদের আশঙ্কা, দেশ আবারো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যত পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য ভালো নয়। তত্তাবধায়ক সরকার নিয়ে দৈনিকগুলোতেও এমন আশঙ্কার কথা উচ্চকিত হয়েছে। কালের কণ্ঠ এ বিষয়ে শিরোনাম করেছে, 'রাজনীতিতে গরম হাওয়া, সরকার ও বিরোধী দল কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ '। দৈনিক সমকালের বক্তব্য তাদের শিরোনামেই স্পষ্ট, 'যুগপৎ আন্দোলনে বিরোধী দল' অর্থাৎ সরকার বিরোধী আন্দোলনে আবারও জোটবদ্ধভাবে রাজপথে নামছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট এই প্রসঙ্গে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হকের একটি মন্তব্য ছেপেছে প্রথম আলো। তিনি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্ট রায়ের যে অংশটুকু ঘোষণা করেছেন, তার তিনটি অংশ। একটি হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতিকে অবৈধ ঘোষণা করা। দুই, জাতীয় সংসদ সিদ্ধান্ত নিলে পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যাবে। তিন, সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ না করা প্রসঙ্গ। এই তিনটি অংশের মধ্যে প্রথমটি নিয়ে লাফালাফি করা হচ্ছে এর সঙ্গে যে অন্য দুটি অংশ জড়িত সেটা যেন কেউ খেয়ালই করছেন না।

তত্ত্বাধায়ক সরকার নিয়ে ব্যবসায়ীরাও তাদের মতামত দিয়েছেন, সেই প্রসঙ্গটিও সংবাদপত্র হাইলাইট করেছে এই প্রসঙ্গে সমকালের শিরোনাম, তত্তাবধায়ক চাই না : ২৮ ব্যবসায়ী সংগঠন।' বিবৃতিতে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দরা বলেছেন, এই পর্যন্ত চারটি নির্বাচন হয়েছে তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে। তবে প্রতিবারই রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। এছাড়া ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনও হয়েছে। সব দেখে মনে হচ্ছে আবারও সেই আগের সংঘাতময় পরিস্থিতি ফিরে আসছে মানবজমিন পত্রিকায় ৩ তারিখের মন্তব্য প্রতিবেদনের তাই প্রশ্ন, 'বেজে উঠলো কি সংঘাতের ঘড়ি?' ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের দিনগুলো বাংলাদেশের জনগণের জীবনে দুঃস্বপ্ন বয়ে এনেছিল লগি- বৈঠার দিনগুলো এসেছিল বলেই বিতর্কিত এক এগারোর আবির্ভাব ঘটেছিল। প্রায় চার বছরের বিরতিতে বাংলাদেশের সরকার ও বিরোধী দল আবার মুখোমুখি, তবে ব্যবসায়ীদের বক্তব্যকে নিজ স্বার্থ রক্ষার বলে দাবি করছেন অনেকে। ১/১১ এর সরকার ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ধরপাকড় করেছে তবে সেটা ছিল চূড়ান্ত অপরাধীদেরই। মানুন-কোকোই তার প্রমাণ।

তত্তাবধায়ক সরকার বহাল ও বাতিল নিয়ে কাঁদা ছোঁড়াছোঁড়ির উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন। এর পেছনে কাজ করছে ক্ষমতার লোভ ও জনগণের প্রতি আস্থাহীনতা। ৯৬ এর বিএনপি সরকার এ পদ্ধতি বাতিল করতে চেয়েছিল। কিন্তু তখনকার বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এটাকে বাতিল করতে হামলা-মামলার সর্বাত্মক চেষ্টাসহ ৯৬ দিন হরতালও করেছিল। আওয়ামী লীগ সেই আন্দোলনে সফল হয়েছে বলেই আজও তত্ত্বাতাবধায় সরকার টিকে আছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো আন্দোলনের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা তত্তাবধায়ক পদ্ধতি তারাই কেন এখন বাতিল ওঠে পড়ে লেগেছে? কেনই বা বিএনপি তাদের আমলে বাতিল করতে চাওয়া এ সরকার বাতিল করতে চাচ্ছে? পাল্টাপাল্টি রাজনীতির এ হাল-হকিকত বুদ্ধিমানেরা সহজে টের পেলেও জনসাধারণকে ভোগাবে।