রাজধানীতে মশা মারতে ‘কামান দাগানো’ কই?

সাদিকসাদিক
Published : 27 Feb 2020, 07:10 PM
Updated : 27 Feb 2020, 07:10 PM

শীত বিদায় নেওয়ার এই সময়ে রাজধানীতে বাড়তে শুরু করেছে মশার উৎপাত। ফলে আবারো দেখা দিচ্ছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে না সিটি করপোরেশনের তৎপরতা।

রাজধানীর বাড্ডা, গুলশান-১, উত্তরা-৭ ও উত্তর-১১ নম্বর সেক্টর, বনশ্রী, মালিবাগ, নাজিরা বাজার, কেরাণীগঞ্জ, কলাবাগান, বিমানবন্দর এলাকার পরিচিতদের কাছে খোঁজ করে জেনেছি  এসব এলাকায়  বাড়তে শুরু করেছে মশার উপদ্রব।

যার সঙ্গেই কথা হয়েছে তিনিই বলছেন,  "মশার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছি। দিনে-দুপুরেও ঘরে কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে।"

পরিচিত একজন অভিযোগ করে বললেন,  বিমানবন্দরের অবস্থা তো ভয়াবহ। দেশের সবচেয়ে বড় বিমানবন্দরেও মশার কামড়ে টেকা যায় না।

ডেঙ্গুর হাত থেকে বেঁচে আসা আমার বন্ধু রাহাত বললেন,  "গত বছর অক্টোবরে আমি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হই। ভাগ্যক্রমে আইসিইউর মত জায়গা থেকেও বেঁচে ফিরেছি। এবার আক্রান্ত হলে আর রক্ষা হবে না। আমাদের মৃত্যুটা অবহেলাতেই হবে। সেটা সড়ক অবহেলা হোক কিংবা পরিচ্ছন্নতার অবহেলা হোক।"

নিজের এলাকায় সিটি করপোরেশনের মশক নিধন অভিযান গত  কয়েক মাসে  চোখে পড়েনি বলেও জানালেন রাহাত।

তিনি বলেন,  "ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আগে বাড্ডা এলাকায় কোনোদিন মশার ওষুধ দিতে দেখিনি। কিন্তু যখন চারদিকে ডেঙ্গুর রব তখন ওষুধ, অভিযানসহ কতকিছু।"

গুলশানের নিকেতন এলাকার বাসিন্দা নাজমুন্নাহার নীনা।

তার সঙ্গেও এ নিয়ে কথা হলে নীনা বলেন,  "আমরা কোনো কিছু প্রতিকার করি না। যখন বিপদে পড়ি তখন প্রতিরোধে নামি।"

উদ্বেগ জানিয়ে খিলক্ষেতের বাসিন্দা  স্মৃতি দত্ত বলেন,  "মশার যে উৎপাত,  ডেঙ্গুর মত মশাবাহিত কোনো রোগ এবারও ছড়িয়ে পড়বে।"

গত ৯ জানুয়ারি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৬৬টি মৃত্যুর তথ্য এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। ২৬৩টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে দেখা যায় এরমধ্যে ১৬৪ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুর কারণে হয়েছে। এছাড়া বছর জুড়ে সারাদেশে এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এইডিস মশা নিধনের সব উদ্যোগই যেন থমকে গেছে। মৌসুম বদল হতে হতে  নগরবাসী যে আবারো ভয়াবহ সঙ্কটে পড়বে না তার নিশ্চয়তা কে দেবে?

গত বছর ডিসেম্বরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মশক নিধনে নতুন যন্ত্রপাতি কিনেছিল। ওই সময় কেনা মিস্ট ব্লোয়ার এবং ভেহিকেল মাউন্টেড ফগার মেশিন ব্যবহার করে এই করপোরেশনের আওতায় থাকা এলাকার বাসিন্দারা মশার কামড় ও ডেঙ্গু আতঙ্ক থেকে মুক্ত আছেন, এমন খবর শিরোনাম হতে দেখার অপেক্ষায় আছি।

ডেঙ্গুর ঝুঁকি যে শুধু নির্দিষ্ট কয়েক মাস থাকবে তা নয়। ফলে এর প্রস্তুতিটা সারা বছর নিতে হবে। ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র-কাউন্সিলর নির্বাচনের সময় মশক নিধনের কথা ছিল ভোটের প্রচার-প্রচারণায়; কিন্তু  সিটি করপোরেশন মশক নিধনের  অভিযান পরিচালনা করছে না অনেকদিন ধরেই।

নতুন মেয়র দুজন শপথ নিয়েছেন ২৭ ফেব্রুয়ারি। আর এরপর মশক নিধন করে নাগরিকদের কষ্ট লাঘবে দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র-কাউন্সিলদের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দায়িত্ব গ্রহণ করে এবার দুই মেয়রই  মশক নিধনে নিজ নিজ সিটি করপোরেশনে মাঠে নামবেন বলে আশা করছি।