ট্র্যাফিক জ্যাম কি চলতেই থাকবে?

সাফায়েত আমীন
Published : 31 August 2012, 07:00 PM
Updated : 31 August 2012, 07:00 PM

টিভির চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে একটি চ্যানেলের উপর চোখ আটকে গেল। সেখানে লন্ডনের রাস্তার ট্রাফিক কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় তা দেখান হচ্ছিল। পুরো ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করা হয় কন্ট্রোল রুম নামক একটি কক্ষ থেকে যেখানে রয়েছে শত শত কম্পিউটার এবং আধুনিক সব যন্ত্রপাতি। সম্পূর্ণ ব্যবস্থাটি অত্যন্ত জটিল প্রযুক্তিনির্ভর এবং কার্যকর। এ পদ্ধতির মাধ্যমে কোন গাড়ির সাধ্য নেই তাদের দৃষ্টির বাইরে যাবার। আর রাস্তার নিচে সেন্সর বোর্ড স্থাপনের মাধ্যমে তারা আগে থেকেই যেকোনো ট্রাফিক জ্যাম হবার সম্ভবনা বুঝতে পারে এবং তার আগাম নিয়ন্ত্রণ ও করে থাকে । পুরো ব্যাপারটি দেখে খুব ভাল লাগলো কিন্তু আবার যখন নিজের দেশের চিন্তা করলাম তখন মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। প্রযুক্তির এ যুগেও আমাদের এখনো ট্রাফিক নির্দেশনার জন্য তাকিয়ে থাকতে হয় ট্রাফিক পুলিশের হাতের দিকে। বেচারা হয়তো একহাতে মাথার উপর ছাতি ধরেন আর এক হাতে কোন রকমে সিগন্যাল দেন। অনেক সময় দেখা যায় কোন কোন রাস্তায় কোন ট্রাফিক পুলিশই নেই। বেচারা হয়তো একটু পানি খেতে অথবা বিশ্রাম নিতে গিয়েছেন আর এই ফাঁকেই লেগে যায় বিশাল জট যা ছাড়াবার কোন উপায় নেই। অনেকেই বলে থাকেন আমাদের সড়ক গুলোর আয়তন কম তাই হয়তো ট্রাফিক জ্যাম লেগেই থাকে, কিন্তু আমার মনে হয় এর সাথে যুক্ত হয়েছে আমাদের চরম অবহেলা ও অনিয়ম যার ফলাফল আজকের এই ভয়ঙ্কর ট্রাফিক জ্যাম । কোন কারনে যদি একদিনের মধ্যেও ঢাকার রাস্তা দিগুণ প্রশস্ত করে দেয়া হতো এর পরেও জ্যাম এবং দুর্ঘটনা হয়তো লেগেই থাকবে শুধুমাত্র আমাদের অভ্যাসের কারনে। আমাদের মধ্যে খুব কম সংখ্যক লোকই আছে যারা দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য রাস্তা পারাপারের সময় ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করি। আর আমাদের ফুটপাথ তো এখন হকার এবং দোকানদারদের দখলে। পুলিশ কিছু বলে না কমিশন পায় বলে , আর আমরাও পথে যেতে যেতে বাজার শেষ করতে পারি দেখে প্রতিবাদ করি না। এর পাশাপাশি যার যার ইচ্ছামতো রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করে রাখেন। ট্রাফিক পুলিশরা এসব দেখেও অনেক সময় না দেখার ভান করে থাকেন, কারন কে জানে কোন ক্ষমতাশালী বিত্তবানের গাড়ি। শুধু শুধু ঝামেলায় আজকাল আর কে জড়াতে চায়!

পৃথিবীর ব্যস্ততম বিমানবন্দর হিথ্রোর দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো যে সেখানে প্রতিদিন শত শত বিমান উড্ডয়ন এবং অবতরনের জন্য মাত্র দুটি রানওয়ে আছে। যেখানে একটি রানওয়ে ব্যবহার করা হয় শুধুমাত্র উড্ডয়ন এবং অপরটি অবতরণের কাজে। একটি বিমানের সাথে অপর বিমানের উড্ডয়নের সময়কাল মাত্র ৪৫ সেকেন্ড । কিভাবে সময় এবং স্থানকে যথার্থ ভাবে কাজে লাগানো যায় তার আদর্শ হতে পারে এ বিমানবন্দরটি। বেশি দূর যেতে হবে না, পাশের দেশ ভারতের দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলেই দেখতে পাবো যে সেখানে জনসাধারনের চলাচলের জন্য ট্রেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। ভারতীয়দের নাচ গান অনুকরণ না করে আমরা কিন্তু তাদের এ ব্যাপারটি অনুকরণ করতে পারি।

সর্বশেষ উদাহরণটি আমাদের দেশের সম্মানিত নেতৃবৃন্দের জন্য। লন্ডনের প্রধানমন্ত্রী একটি জরুরি মিটিং এ অংশ গ্রহনের জন্য ব্যাক্তিগত গাড়িবহর রেখে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন এ করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছান, সাথে ছিল শুধুমাত্র একজন নিরাপত্তাকর্মী। অথচ আমাদের দেশের নেতারা যাতে দ্রুত চলাচল করতে পারে সেজন্য অনেক সময় রাস্তা বন্ধও করে দেয়া হয় এবং আমাদের জ্যাম এ বসে তাদের যাবার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এসব ব্যাপারগুলো যদি আমরা বদলাতে না পারি তবে হয়তো যানজট মুক্ত রাস্তা আমরা আর কখনই দেখতে পাবো না।