দেখে এলাম সেই গ্রাম

রফিকুল ইসলাম সাগর
Published : 12 June 2012, 06:03 PM
Updated : 12 June 2012, 06:03 PM

এক বন্ধুর সাথে গিয়েছিলাম হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানা জিরুন্ডা গ্রামে। সেখানে বন্ধুর বাড়ি। জিরুন্ডা গ্রামে যাওয়ার জন্য প্রথমে ঢাকা থেকে বাসে করে বি-বাড়ীয়া নামলাম। সেখান থেকে ৪০০ টাকায় একটি সি এন জি অটোরিক্সা ভাড়া করে ফান্দাক গেলাম। যেতে যেতে রাত ৯ টা বেজে গিয়েছিল । ফান্দাক থেকে রাতে হাটা শুরু করলাম। ফান্দাক সেই এলাকার সব চেয়ে বড় বাজার। জিরুন্ডা গ্রামে গাড়ি চলাচলের জন্য কোনও রাস্তা নেই, তাই হেটে যাওয়া ছাড়া আর কোনও বিকল্প উপায় ছিল না। রাতের বেলা হেটে যেতে ভালই লাগছিল। কিন্তূ একটু ভয় পাচ্ছিলাম কারণ রাতের বেলা পথে মানুষের চলাচল নেই। ঝি ঝি পোকা আর বেঙ ডাকছিল। প্রায় ৩ কিলোমিটার হেটে যাওয়ার পর লক্ষ করলাম আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বন্ধুর দু'ভাই পথে দাড়িয়ে আছে। তাদের দেখে ভয় কিছুটা কমলো। আরও এক কিলোমিটার হাটার পর বন্ধুর বাড়ি পৌঁছালাম। মধ্য পথে দুইটি বড় বড় বাশের সাকো পার হতে হয়েছিল। সাকো গুলোও চলাচলের জন্য বিপজ্জনক। ক্লান্ত শরীর নিয়ে রাতে ঘুমিয়ে পরেছিলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠলাম অনেক দেরি করে। বিছানা ছেড়ে বের হতে ইচ্ছে করছিল না। সকালের নাস্তা করলাম নানা রকমের পিঠা দিয়ে। সেই গ্রামে মেহমানদের নাকি সকালে পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করানো হয়। নাস্তা খেয়ে ঘুরতে বেড় হয়ে গেলাম,লক্ষ করলাম গ্রামটিতে গাড়ি চলাচলের কোনও রাস্তা নেই। যে রাস্তা আছে তাতে সাইকেল ঠিক মতো চালানো যায় না। শুধূ জিরুন্ডা নয় মানপুর, সন্তুস পুর,কৃষ্ণ পুর,রাধা নগর আশে পাশের এই চারটি গ্রামে বহু বছর ধরে কোনও রাস্তা নির্মান হয়নি। সব মিলিয়ে প্রায় ৮ কিলোমিটার পথ। প্রতিদিন প্রায় ২২,০০০ হাজার মানুষের চলাচল। পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে ক'টি ব্রিজ নির্মানের কাজ। এদিক থেকে ওদিক হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়ালাম।

আমার জীবনের এক নতুন অভিজ্ঞতা। মানুষের মুখে শুনতাম অজপাড়া গ্রাম। আজ স্ব-চক্ষে দেখলাম অজপাড়া গ্রাম কেমন। সব কিছুই অন্য রকম,অন্য সব গ্রামের মতো না। যেদিক দিয়ে যাই সবাই তাকিয়ে থাকে,বাড়ির উঠানে দাড়িয়ে সবাই কী যেন বলাবলি করে। এই গ্রামের মানুষ আধুনিক সব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থার কোনো উন্নতি নেই সেখানে মানুষ সুযোগ সুবিধা পাবে কী করে। এছাড়া প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের কিছুই পাওয়া যায় না। জিরুন্দা গ্রামের মানুষ প্রতিদিন বামৈ আশে বাজার করতে এবং কেনাকাটা করতে ও অন্য কোথাও যেতে হলে বামৈ থেকে গাড়িতে উঠতে হয়। বামৈ থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য একটি মাত্র বাস। সকালে বাসটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এবং আবার বামৈ ফিরে আশে। বামৈ যেতে হলে হেটে যাওয়া ছাড়া বিকল্প কোনও ব্যবস্থা নেই। কয়েকটি রিক্সা চলাচল করলেও বেশির ভাগ পথ রিক্সা থেকে নেমে হেটে যেতে হয়। মাটির রাস্তায় বিশাল বড় বড় গর্ত। কোথাও কোথাও মাটি সরে গিয়েছে। গ্রামটির সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছি তাই এত এত পথ হাঁটার পরেও খারাপ লাগেনি। আছে কিছু পুরনো দিনের মন্দির ও নদী। সব গুলো নদী তখন শুকিয়ে গিয়েছিল। জানতে পেরেছি এখানকার প্রধান সৌন্দর্য বর্ষার সময়। এই গ্রামের মানুষ গুলো খুব ভালো তারা খুব সহজ সরল। এই গ্রামে এসে বুঝলাম দেশে এখনো ভালো মানুষ আছে। তাদের কথা-বার্তা আচার-আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাদের ছেড়ে আসতে ইচ্ছা করছিল না। বাড়ি ফিরে আসার সময় চোখের কোনে জল চলে এসেছিল। জিরুন্ডা গ্রামে অনেক কিছুই নেই কিন্তূ আছে মানুষের জন্য মানুষের মায়া,ভালোবাসা,আন্তরিকতা।

পূর্বে প্রকাশিত………..