বিডিনিউজ ব্লগের সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য এবং মনো-সামাজিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুরক্ষায় একাত্মতা প্রকাশ করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
গত ১৯ জানুয়ারী, ২০১৩ গাজিপুরের কালিয়াকৈরে একজন মনো-সামাজিক প্রতিবন্ধী নারীকে উশৃঙ্খল জনতা পিটিয়ে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ডের সময় কেউ ছবি তুলছিল আর কেউ ভিডিও করছিল। আর সবাই এর মজা নিচ্ছিল। এই ঘটনায় পুলিশ ছিল নিরব। তাদের সামনে এই হত্যাকাণ্ড ঘটলেও তারা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে কেস না করে অজ্ঞাতনামা প্রায় ৪০০ ব্যক্তির নামে কেস করা হয়। এর একদিন পরই সেই গাজিপুরের কোনাবাড়িতে আরো দুই মনো-সামাজিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে হত্যা করার হয়। এদের মাঝে একজন পুরুষ এবং একজন নারীকে। নারী প্রতিবন্ধীকে পুরিয়ে হত্যা করা হয় আর পুরুষ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে হত্যা করা হয় শ্বাসনালী কেটে ফেলে। শ্বাসনালী কেটে হত্যা করার সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি যখন কাতরাচ্ছিলেন তখন উপস্থিত জনতা হাততালি দিয়ে মজা নিতে থাকে।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই এই ভাবে মনো-সামাজিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাগল, ছেলেধরা ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে হত্যা করা হচ্ছে যাকে সামাজিক ভাবেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই হত্যাকাণ্ডকে কেউ খারাপ চোখে দেখে না। এটা আমাদের সমাজের ক্ষত ছারা আর কিছু না।
এই অমানবিক, বর্বর, অসভ্য কাজের বিরুদ্ধাচারণ করে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম আগামী কাল, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৩ বিকাল তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানব বন্ধনের আয়োজন করেছে। উক্ত মানব বন্ধন থেকে প্রতিবন্ধী বিশেষ করে মনো-সামাজিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উপর এহেন বর্বর আচরণ প্রতিরোধে সরকারের পদক্ষেপ, ঘটে যাওয়া ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি এবং মনো-সামাজিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের দাবিতে এক মানব বন্ধনের আয়োজন করা হয়েছে।
এই মানব বন্ধনে সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করছি। এই মানব বন্ধনে সবাই আমরা নিজ নিজ ব্যানার সহ উপস্থিত হওয়ার আহ্বান করছি। আশা করি অন্যান্য জাতীয় ইস্যুতে এই ব্লগের ব্লগাররা যেভাবে সারা প্রদান করে সেই ভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের এই ইস্যুতেও সারা প্রদান করবেন এবং আমাদের প্রতিবাদকে শক্তিশালী করবেন।
***
ফিচার ছবি: নতুনবার্তা ডটকম থেকে সংগৃহিত, ২৩ জানুয়ারি ২০১৩
আইরিন সুলতানা বলেছেনঃ
যে নাগরিকেরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয়ে থাকে, তারাই বাঁশ/লাঠি হাতে অপর (সাধারণ) নাগরিকের উপর কী করে চড়াও হয়!!! বিশ্বজিতের হত্যাদৃশ্য দেখে যেমন শিউরে উঠতে হয়েছিল, এই নিরাপরাধ নাগরিক নারীর উপর উন্মক্ত আক্রমণ দেখেও স্তব্ধ হতে হয়েছিল। এক সাথে তিন-চারকে তরুণ-যুবককে ক্রমাগত বেধবড় পিটাতে দেখা যায়। লাথি দিতে দেখা যায়। আরও অবাক কাণ্ড একদম কাছেই দাঁড়িয়ে আছে স্থানীয় জনতা !!!!!!!!!!
মহিলাটি প্রতিবন্ধী নাকি আসলেই ছেলেধরা ছিল, এটা কখনই মুখ্য নয় এমন অবস্থায়… এই বিশৃংখলাকারীরা আসলে কারা যারা এভাবে আইন তুলে নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিচ্ছে???
টিভি খবরে এদের চেহারা দেখা গেছে… প্রতিটি চেহারা চিহ্নিত করা হোক। টিভি খবরের ক্লিপস আছে আপনার কাছে?? ওদের চেহারার স্ক্রিনশট নিয়ে দাগান্বিত করে উত্তোলিত হোক কালকের প্রতিবাদে …
বি.দ্র: শুক্র/শনিবার হলে আসাটা সহজ নয়। জানেনই তো ভার্চুয়্যাল জগতে কি-বোর্ডে সহমর্মিতা দেখা সহজ, কিন্তু মাঠ পর্যায় রয়ে যায় তুলনামূলক লোক শূণ্য!!!
তারপরও সচেতন ব্লগার, সচেতন নাগরিকেরা এগিয়ে আসুন এই প্রতিবাদে …
সগীর হোসাইন খান বলেছেনঃ
আইরিন আপু।
যে ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কথা বলছি তারা আসলে যুগ যুগ ধরে সমাজের দ্বারা নিগৃহিত এবং সমাজে তাদের প্রতি অত্যাচার স্বীকৃত। আমি যাদের কথা বলছি তাদের সমাজ পাগল বলে। এই পাগলদের যখন ছোট ছোট শিশুরা পাথর নিক্ষেপ করে তখন বড়রা কিন্তু দূরে দাঁড়িয়ে মজা দেখে। যার ফলে শিশুরা ছোট থেকেই তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা শিখে। আর বড় হয়ে তাদেরকে সাপ পেটানোর মত করে পিটিয়ে মারে। সমাজ এদের বাতিল মনে করে। তাই যুগ যুগ ধরেই এমনটা চলে আসছে।
প্রথম থেকে যারা নারীকে আঘাত করছিল তারা খালি হাতে চর-থাপ্পর লাথি দিয়েছে। কিন্তু যারা কাঠ, লাঠি নিয়ে আঘাত করেছে দুঃখজনক হলেও সত্য তারা সবাই ৯ম/১০ম শ্রেণীর ছাত্র। তাদের আঘাতেই প্রতিবন্ধী নারীটির মৃত্যু হয়েছে। সরেজমিনে আমাদের যে সংগঠনগুলো দেখে এসেছে তাদের মন্তব্য এমনই। তাই এই ছোট/বাচ্চা/১৮ বছরের নিচের ছেলেদের কিভাবে দোষী হিসেবে তুলে ধরি??? এখানে মূল্যবোধ বিবেককে বাঁধা দেয়।
এই ব্লগ থেকে যদি একজনও হাজির হয় সেক্ষেত্রেও আমি মনে করবো আমার এই লিখনি সফল হয়েছে।
জিনিয়া বলেছেনঃ
সগির ভাই, আমাদের মধ্যে কী কেউ আর মানুষ নন!!আমরা কী সবাই অনুভূতিহীন, বিবেকহিন না-মানুষে পরিণত হচ্ছি দিন দিন? কিভাবে মানুষ হয়ে মানুষের উপর এভাবে আক্রমণ হয়!!কেন জনসম্মুখে মানুষকে এভাবে হত্যা করা হয়!!দেশে কী কোনও আইন কানুন এখন নেই?
মন ভীষণ খারাপ লাগছে।প্রতিবন্ধীদের অধিকার আদায়ের জন্য শুধু প্রতিবন্ধী এবং তাদের পরিবার নয়..আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।আমি যদি আপনাদের কোনও রকম কাজে আসতে পারি, আমাকে জানাবেন অবশ্যই।
বিডিব্লগের ব্লগারদের কাছে আমি অনুরোধ করছি, আপনারা যারা দেশে আছেন, আশেপাশে আছেন, এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করুন। প্লিজ।
@ব্লগটিম, পোস্টটিকে টপ নিউজ এ রাখার জন্য অনুরোধ করছি।
সগীর হোসাইন খান বলেছেনঃ
“প্রতিবন্ধীদের অধিকার আদায়ের জন্য শুধু প্রতিবন্ধী এবং তাদের পরিবার নয়..আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে”
আপনার এই বক্তব্যটি খুবই ভাল লেগেছে। এই ভাবে আমরা সবাই সবার প্রয়োজেনে এগিয়ে আসলে অবশ্যই দেশে সব ধরনের মানুষের সমস্যাই কমে আসবে।
আশা করছি ব্লগ থেকে সবাই সচেন হবে এবং এই ধরনের কাজে অংশগ্রহণ না করে প্রতিরোধে এগিয়ে আসবে।
সগীর হোসাইন খান বলেছেনঃ
পোস্টটিকে টপ নিউজ এ রাখার জন্য ব্লগ টিমকে ধন্যবাদ। আমরা আজ সারাদিন বিভিন্ন টিমকে ফোন দিয়েছি এবং আমাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করার জন্য আহ্বান করেছি। সবার মাঝেই এই বিষয় নিয়ে বেশ সারা ফেলতে দেখেছি। আশা করি কাল আমরা প্রায় ২-৩ শ মানুষ একত্র হয়ে মনো-সামাজিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পক্ষে কথা বলতে পারবো এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানবাধিকার নিয়ে দাবি করতে পারবো।
এস দেওয়ান বলেছেনঃ
আমাদের দেশের দরিদ্র প্রতিবন্ধীরা ভিক্ষে করে খায় যেটা জাতির জন্য বড়ই লজ্জার । ভিক্ষুক প্রতিবন্ধীদের জন্য সারকারি ব্যবস্থাপনায় প্রতিষ্ঠান থাকা দরকার । ধনীদের কাছ থেকে ফান্ড নিয়ে ভিক্ষুক প্রতিবন্ধীদের ভরণপোষণ করা খুব একটা কঠিন কাজ হওয়ার কথা নয় ।
সগীর হোসাইন খান বলেছেনঃ
সরকার চাইলে কোন কাজই কঠিন না। কিন্তু কোন কাজই সরকার চায় না যদি না তাতে তাদের ফায়দা না থাকে। আর আমাদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ভিক্ষুকদের টাকা মেরে দিয়ে এই পথ অনেক আগেই রুদ্ধ করে দিয়েছেন।
জুলফিকার জুবায়ের বলেছেনঃ
এদের দেহগুলো পুরোপুরি মানুষের, বুদ্ধিও মানুষের, কিন্তু মনটা নিকৃষ্টতম জানোয়ারের। এরা পরিপূর্ণ মানুষ দেহের সম্পূর্ণ জানোয়ার। পশুরা শুধু নিজেকে রক্ষার জন্য আক্রমণ করে, কিন্তু এরা মানুষ হত্যা করে নারীর ও ধর্মনাশ করে শুধুমাত্র পৈশাচিক আনন্দ পাবার জন্য ।
ফাঁসী মানবতা পরিপন্থী, কিন্তু এদের ফাঁসিতে ঝুলে মারতে দেখলে মানব মন চরম শান্তি পায়।
সগীর হোসাইন খান বলেছেনঃ
আগে দরকার সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড। এই চিন্তা আমাদের সমাজের অনেক গভীরে গেথে আছে। তাই সহজেই এগুলোকে উপরে ফেলা যাবে না।
আমাদের দেশে অনেক আগে থেকেই পাগল মানুষদের উপহাসের পাত্র হিসেবে গণ্য করা হয়। তাদের দিকে পাথর ছুরে মারলে ছোটদের কাজে বড়রাও বেশ আনন্দ উপভোগ করে। এটা সমাজের একটি ক্ষত। চিকিৎসা করতে হবে তাই অনেক ভিতর থেকে।
হাসান মসফিক বলেছেনঃ
এই জাতীয় খবরগুলো শুনে এবং পড়ার পর প্রতিবার’ই নিজেকে যেন প্রশ্ন করি – আমরাই কি মানুষ?
শুভেচ্ছা, আপনাকে।
সগীর হোসাইন খান বলেছেনঃ
হ্যাঁ আমরা মানুষ। তবে আমাদের মাঝে মনুষত্যের বিকাশ এখনো পূর্ণতা পায়নি।