কী করবে পাঁচে-আমারে ডাকে দশে…!

ম, সাহিদ
Published : 19 Sept 2012, 08:12 PM
Updated : 19 Sept 2012, 08:12 PM

গায়ের বধু বিশ্বাস করে এক লোককে একটি গরু বর্গা দিয়েছে এবং চুক্তি মোতাবেক গরুটি মোটা তাজা হলে বর্তমান মুল্যের অতিরিক্ত টাকা দুজনেই সমানভাগে ভাগ করে নেবেন। তো এই ঘটনার একমাত্র সাক্ষী এক ব্যাক্তি দুজনের মধ্যবর্তী এক পরশী। গরু যখন মোটা তাজা হয়ে ওঠেছে তখন গরুর মালিক এটি বিক্রি করে দেওয়ার কথা বলতেই বর্গা গরু পালক অস্বীকার করে বসল এই গরু সে বর্গা নিয়েছে। গরুর মালিক সালিশ ডাকাল এবং এক মাত্র সাক্ষী সেই পরশীকে খুব বিনয়ের সাথে যথাসময়ে সালিশে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করল এবং সাথে পাঁচটি টাকাও দিয়ে আসলো।অন্যদিকে বর্গা গরু পালকও এই সাক্ষীকে সালিশে না থাকার জন্য দশ টাকা ঘোষ দিল এবং বলে দিল দয়া করে তুমি সালিশে না গেলেই আমার বিশেষ উপকার হয়। যথা সময়ে সালিশ বসল এবং গরু মালিক যথোপযুক্ত সাক্ষী উপস্থাপন করতে না পারায় গরুর মালিকানা হারাল। তো কিছুক্ষণ পরে গরুর মালিক বাড়ির পথে আসার পথে দেখতে পেল তার সাক্ষি একটু দুরেই হেটে যাচ্ছে তখন তাকে শুধাইল ভাই পাঁচটি টাকাও নিলা কিন্তু সালিশে আসলা না কারনটা কি? সাক্ষী ব্যাক্তিটি হাটছে আর বলছে কি করবে তোমার পাঁচে আমারে ডাকে দশে।

চলতি পথে গ্রামের চা দোকানে চা খেতে সল্পসময়ের যাত্রা বিরতিতে বসেছি,পাশে বসা এক বৃদ্ধ কৃষক আরেক কৃষকের কাছে জানতে চাইল ধান বিক্রি করেছে কি? অপর কৃষক আক্ষেপের সহিত জানাইল ধানের যে দাম তাতে উৎপাদন খরচ ওঠবেতো নাই বরং কিছু ঘাটতি থাকবে। আরেক কৃষক এক রকম হুংকার ছেড়েই বলল এই সরকার দেশটাকে সব দিকেই শেষ করে দিচ্ছে এখন ধরেছে কৃষকদের। চা খেতে খেতে তাদের কথা গুলি শুনছিলাম এ ধরনের কথা অনেকই শুনি গ্রামে-গঞ্জে কিন্তু আজকের এই কথাগুলির মাঝে কেন জানি একটু অবাকই হলাম। আমরা প্রতিনিয়ত বলে বেড়াই আমাদের মাঝে পরিবর্তন আসছে,শিক্ষার হার বাড়ছে আস্তে আস্তে আমরা প্রযুক্তিময় বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে অভ্যস্থ্য হয়ে ওঠছি।এই কিছুদিন আগেও মোবাইল নামক যন্ত্রটি সাধারন মানুষের কাছে ছিল অবাক বিস্ময় আর এখন একজন সাধারন রিক্সা ড্রাইভার শুধু মোবাইল ফোনের ব্যাবহারই নয় সাথে এক মোবাইল হতে অন্য মোবাইলে কি ভাবে বিনা খরচে গান,ছবি,ভিডিও আনা নেওয়া করা যায় সে ব্যপারেও অভিজ্ঞ।

বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। আমরা যতটা প্রযুক্তিগত ভাবে এগিয়ে চলেছি ঠিক ততটাই নিজেদের গুটিয়ে ফেলছি শর্টকার্ট নামক পরনির্ভরশীলতায়। আগের দিনে বিয়ে কিংবা যে কোন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রনকারী স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে নিমন্ত্রন করতেন। এখন মোবাইল কিংবা ই-মেইলের মাধ্যমে নিমন্ত্রন করা হচ্ছে এতে করে সময় এবং অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে ঠিক তবে হৃদ্রতা নামক ভদ্রতা হ্রাস পাচ্ছে খুব দ্রুত। আর ঠিক একই রকম ভাবে আমরা শুধু মাত্র নিজেদের কথা চিন্তা করার প্রবনতা থেকে অন্যের কথা চিন্তা করার সময় খুজে পেতে বড় কষ্ট হয়।মুখে মুখে-চলনে বলনে যতই আধুনিক হইনা কেন ভিতরে আসলে ততটাই সেকেলে রয়ে যাচ্ছি। চিন্তা চেতনার দরজা খুলে মুক্ত আকাশ দেখার বদলে দড়জা-জানালায় খিল আটকে বন্ধ ঘরে আবদ্ধ হয়ে পড়ছি।

সরকারী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ধানের মুল্যের কারনে চালের দাম একটি সহনীয় পর্যায়ে আছে,অন্য দিকে চালের দাম বাড়লে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী বা বাজার বিশ্লেষকরা এর দায় সরকারের ঘাড়ে চাপাতে এতটুকুনও সময় নেন না। আবার ধানের দাম কম হলে কৃষক সরকারের চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধারে নামেন কোমড় বেধে এবং খুব সহজেই বলে দেন আর তো মাত্র কয়েকটি দিন আইস এবার ভোটের জন্য।কৃষকের উৎপাদন ব্যায় কমানোর লক্ষ্যে সরকার নানা স্তরে ভর্তুকি প্রদানের ব্যবস্থা আছে তবে তা কতটা সার্বজনীন এ বিষয়ে আছে নানা মতপার্থক্য। কতজন কৃষক সত্যিকার অর্থে ভর্তুকি পায় আর পেলেও তা উৎপাদন ব্যায় কমানোর ক্ষেত্রে কতটা সহায়ক এটা অন্তত বুঝার জন্য অর্থনীতিবিদ হওয়ার প্রয়োজন নাই। একজন সেচ পাম্পের মালিক পল্লী বিদ্যুতের লাইন নেওয়ার পর শুধু মাত্র বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ নয় যদি কোন কারনে তার লাইনের জন্য প্রদত্ত ট্রান্সফরমারটি চুরি কিংবা কোন কারনে নষ্ট হয়ে যায় এর দায় ভার সেই পাম্প মালিকের কাধে বর্তায় আর ঠিক পর্যায়ক্রমে এ টাকা ভাগ হয়ে প্রতিটি কৃষকের ঘারে গিয়ে পরে। এই একটি কারনের জন্য যে অতিরিক্ত উৎপাদন খরচ বাড়ল এটা কি সরকারের এসি রুমে বসা হিসাব নিকাশ করুয়াদের হিসাবের মাঝে আসে?

যাই হোক, অপ্রাসঙ্গিক নানা কথার মাঝে খেই হারিয়ে ফেলি। টিভিতে টক শো গুলির দিকে তাকিয়ে থাকতে আর শুনতে শুনতে মাথা ভো-ভো করে। ভাবি আমাদের দেশটা বুদ্ধিজীবী নামক রত্নের তো অভাব নেই কিন্তু তারপরও আমাদের দেশটা এত পিছিয়ে পড়ছে কেন? আসলে পিছিয়ে পড়ছি না আমরা পিছিয়ে থাকতে ভালবাসি,আমরা পিছিয়ে রাখতে ভালবাসি,কেননা একটি জাতি যতটা পিছিয়ে থাকবে ততটাই বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধর কদর বাড়বে। রাত আছে বলেই তো দিনের সুর্যের আলোর দাম আছে। কি করবে আমার পাঁচে ঘুরে ফিরে তাকিয়ে থাকি আমি দশে।