নানা জল্পনা কল্পনা আর নাটকিয়তা শেষে পদ্মার বুকে বিশ্ব ব্যাংক নোঙ্গর ফেলছে। একজন সাধারন বাঙ্গালী হিসাবে এই সংবাদ প্রাপ্তিতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে আমার কোন বাধা আছে বলে মনে করছি না। বিশ্ব ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের আগে ও পরে আমরা অনেক কিছুই শিখেছি আবার পাশাপাশি দেখেছি আমাদের সেই স্বভাবজাত দোষে দুষ্ট সব বিষয়ে রাজনৈতিক দল গুলির রাজনীতিতে ভরা নগ্ন বক্তব্যের কিছু মহড়া।
আকস্মিক পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নের অনাগ্রহ প্রকাশের সাথে সাথে বিশ্ব ব্যাংক স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছিল এই প্রকল্পের শুরুতেই তারা কিছু দুর্নিতির গন্ধ পেয়েছে যা তদন্তাধীন। কিন্তু আমাদের সরকার বাহাদুর খুব বড়গলায় হুংকার ছেড়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছিলেন দুর্নীতি প্রমানের। তার পরের এই দশটি মাস ধরেই সরকারী দল বনাম ইউনুস কিংবা বিরোধী দল+ইউনুস বনাম বিরোধীতার স্বার্থে সরকারের বিরোধীতা করে কিছু রাজনৈতিক ফায়দা তোলার হীন চেষ্টা।
সরকারী দল একেবারেই নির্ভেজাল ভাবেই একটি কথা জাতিকে বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্ট চালিয়েছেন বিশ্ব ব্যাংকের কান ভারি করেছেন ইউনূস আর এর পরিনামে দেশের আশা আকাংখার একটি স্বপ্ন দিবা স্বপ্নে রুপ নিয়েছে। এ বিষয়ক পক্ষে-বিপক্ষে প্রচুর লিখা ইন্টারনেট তথা নানা মাধ্যমেই আমরা সবাই কম বেশী পড়েছি। কেউ কেউ ইউনুসের নোবেল পাওয়া নিয়ে সরকাররের গাত্রদাহের বিবরন তুলে ধরার পাশাপাশি আবার ইউনুস সঙ্গীতের সুরের ছোঁয়ায় অতি আপ্লুত হতেও পিছপা হননি। আবার সরকারের সমর্থক কিছু লোক ইউনুসকে নিয়ে যখন যা মাথায় এসেছে এমনকি তাকে গরীবের রক্ত চোষা জানোয়ার আখ্যা দিতেও দ্বিধাবোধ করেননি।
বিশ্ব ব্যাংকের শর্তানুযায়ী সরকার পদক্ষেপ নিয়েছেন তাই বিশ্ব ব্যাংক আবার ফেরত এসছে এতে করে কি প্রমাণিত হল তা বলার চেয়ে এই সিদ্ধান্তের কারনে সরকারের ভাবমূর্তি কতটা নষ্ট হল সেটাই ভাবার বিষয়। যদি সরকারের কোন দুর্নীতি নাই থাকত শুধু মাত্র এই সেতুটি নির্বাচনী ওয়াদা রক্ষার জন্য বিশ্ব ব্যাংকের শর্ত পুরন করেছে মাত্র তা হলে সরকারের ভোট ব্যাংকের উন্নতির বদলে নিম্ন গতিই যথার্থ । কারন আর যাই হোক বিশ্ব ব্যাংকের শর্ত পূরনের জন্য সরকারকে যে সব বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তা একটি সরকারের দুর্নিতির প্রমাণ বৈ আর কিছু নয়। আর যদি সরকার খুব সহজভাবেই ভেবে নেন বিশ্ব ব্যাংকের ফিরে আসার সাথে সাথে আমাদের কিছু ভুল ত্রুটি সংশোধন করে আমরা আবার জনগনের কাঠগড়ায় নিষ্পাপ হয়ে দেখা দিয়েছি তবে তা হবে বোকার স্বর্গের রাজার জ্ঞানহীন মন্তব্য মাত্র। আর আজকের এই ঘোষনার সাথে সাথে সরকার দলীয় হোমড়া চোমরারা যদি এটাকে হাসিনার জয় আর ইউনুসের পরাজয় ভেবে দিবা স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েন তবে তা হবে আত্মঘাতি। কারন বিশ্ব ব্যাংক যদি ইউনুসের কথায় এই ঋণচুক্তি বাতিল করত তবে আর ফিরে আসত না যেমন আবার যদি ইউনুস সাহেব এ বিষয়ক দুর্নীতি হচ্ছে বলে বিশ্ব ব্যাংককে কোন তথ্য দিয়ে থাকেন তবে তা সরকারের জন্য অভিশাপ হলেও হতে পারে কিন্তু আপামর জনসাধারনের জন্য ছিল বিশাল উপকারী।
অত এবং সরকার তথা সরকারী দলের এমনকি আমাদের বিরোধী দলের সকলের উপলদ্ধির সময় এসছে, পাপ কোন দিন চাপা থাকে না। নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে পার পাওয়ার দিন এই ডিজিটাল যুগে ফুরিয়েছে। ইউনুস সাহেবের নোবেল প্রাইজ,গ্রামীন ব্যাংক ঐ সব এক সাথে গুলিয়ে তাকে হেয় করে যারা বিশ্ব ব্যাংকের প্রত্যাবর্তনকে ইউনুসের গালে চপেটাঘাত ভেবে ভুল বকছেন তাদের ভাবতেই হবে আমরা যা পেয়েছি তার বিনিময়ে কতটা হারিয়েছি।