পাঁচ টাকার মুড়ি…নির্ঘুম একটি রাত..কিছু উপলদ্ধি…

ম, সাহিদ
Published : 25 May 2011, 06:05 AM
Updated : 25 May 2011, 06:05 AM

সমুদ্রে ৩ নম্বর বিপদ সংকেত এর পরে বাড়তে বাড়তে আরও উপরে যেতে পারে,এর প্রভাবে উপকুলের কাছাকাছি প্রতিটি জেলায় দমকা হাওয়ার সাথে ঝড়ো বৃষ্টি। মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে প্রকৃতির ইচ্ছামাফিক এই খেলার নিয়ন্ত্রক একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই বলতে পারেন এর রুটিন। তবে ঠান্ডা আবহাওয়ার মৃদু শৈত্য প্রবাহ এ যেন এক আলাদা অনুভব। আমার কাছে এর শৈল্পিক ও নান্দনিক বেশ কিছু উপাদান ধরা পড়লেও উপকুলের কাছাকাছি জেলাগুলির কাচা অথবা শক্ত মজবুত গাঁথুনির নিরাপদ আশ্রয় যাদের নেই (এই সব এলাকাগুলোতে তাদের সংখ্যা নিতান্তই কম নয়) তাদের মনে কিন্তু ভিন্ন চিন্তা এই বুঝি শেষ আশ্রয় স্থলটি বাতাসের তোরে পড়ে গেল। আর যে কৃষক এখনও ক্ষেতের পাকা ধানগুলি কেটে বাড়িতে এনে এর একটি বিধি ব্যাবস্থা না করতে পারা কৃষক পরিবারটির চিন্তার যেন শেষ নেই। গ্রাম্য পরিবেশের একটি বাড়িতে এই রকম একটি দিনে আজ আটকা পড়ে এর বাস্তব রুপ দেখতে দেখতে সত্যিই অজান্তেই মন বলে এই তো আমার শ্যামল বাংলা যা এতদিন পড়েছি কবিতায়,গানে আর গল্প উপন্যাসে। যে ঘরটিতে রাত কাটাতে হচ্ছে তা টিন কাঠের সমন্নয়ে একটি বাগানবাড়ি,ঢাকায় বসবাসরত কোন এক শিল্পপতির অবকাশ যাপনের জন্য একটি মনোরম পরিবেশে স্থাপিত। এই এলাকার পার্শ্ববর্তী এক গ্রামে এসে ফেরার পথে বৃষ্টির কবলে পড়ে সামান্য আশ্রয় নিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজেকে বহন করা ত্রিচক্র যানটি সামান্য ত্রুটির অজুহাতে আমাকে এক অকুল পাথারে রেখে পালিয়েছে তা ঘূণাক্ষরেও বুঝতে পারিনি। যাই হোক বাড়ির কেয়ার টেকার বা বর্তমান এই কুটিরের হর্তাকর্তা শফু মিয়া নিতান্তই দয়াপরবশ হয়ে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই এমন শর্তে এক রাতের জন্য রাত্রিযাপনের অনুমতি দিয়ে কৃতার্থ করে যথার্থই ঋণী করলেন আমাকে। হাতের হারিকেন টেবিলে রেখে নিজ বাসস্থানের পথে রওয়ানা হওয়া শফু মিয়া মৃদু আলয় আমার পানে তাকিয়ে হয়ত একটু মায়া লেগে গেল,আর নিমিষেই তার মনুষ্যত্ববোধ লক্ষ্য করা গেল তার কথায়। ভারি কণ্ঠে জানালেন বেশ কিছুদূরে একটি গ্রাম্য চায়ের দোকানের অস্তিত্বের কথা,যেখানে চায়ের সাথে খাওয়ার মত বিস্কুট,মুড়ি ও বিড়ি পাওয়া যেতে পারে যদিও কোন নিশ্চয়তা নেই তথাপি চেষ্টা করা যেতে পারে। পকেট হতে টাকা দিতে দিতে বললাম যা পান তাই নিয়ে আসুন আর একটু ভদ্রতা করে বললাম বেশী কষ্ট হলে যাওয়ার দরকার নেই,আমার ভদ্রতার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বাইরের অন্ধকারে নিমিষেই হারিয়ে গেলেন শফু মিয়া। মিনিট ত্রিশের মধ্যেই ফিরে এলেন হাতে পাঁচ টাকার শুকনো মুড়ির একটি ঠোঙ্গা সাথে একটি মশা তাড়াবার বাশ মানে একটি লম্বা লাঠির মত বস্তু যাকে গ্রামের সবাই কয়েল বলেই ডাকে। লাঠির মাথায় মানে নতুন দেখা কয়েলের অগ্রভাগে আগুন ধরিয়ে মশা থেকে সুরক্ষার সুবন্দোবস্ত করে নিজ গন্তব্যের পথে চলে গেলেন সফু মিয়া। হারিকেনের মৃদু আলোয় আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মনে হল একটি রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেবার যথেষ্ট উপাদান আমার সাথে আছে আর তাই দেরী না করে প্রথমেই ল্যাপটপটি চালু করে দেখলাম চার্জ যা আছে তাতে রাতের সিংহ ভাগ কাটিয়ে দেওয়া যাবে অনায়াসে। আর তাই রাত কাটাতে নেটের যে সব যায়গা গুলিতে আমার অবাধ বিচরন সেই সব সাইটের প্রতিটির দরজায় কড়া নাড়তে নাড়তে শেষ পর্যন্ত প্রিয় ব্লগে এই লেখার শুরু করার আগে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেক গুলি পোস্ট ও মন্তব্য পড়লাম। অনেক গুলি পোস্টে মন্তব্য করতে গিয়েও কোনো জানি কোনো পোস্টে মন্তব্য করতে একেবারেই মন চাইল না। মাঝখানে বৃষ্টিটা কিছুটা দমন ধরেছিল কিন্তু এখন আবার ঝমঝমিয়ে টিনের চালে গড়িয়ে পড়ার অদ্ভুত শব্দে চকিত নয়নে মাঝ রাতে ঘরের জানালা খুলে তাকিয়ে বাইরের পৃথিবীটা সত্যিই একেবারে নতুন করে আবিস্কার করলাম। বাইরে বেশ অন্ধকার তারপরও আবছা আলোয় সবুজ পৃথিবীটা যেন বৃষ্টির নন্দিত ছন্দে নৃত্যের তালে তাল মিলিয়ে দুলছে আর এক অচেনা ভাষায় সঙ্গীতের সুর তোলে মন ভালো করার গান গাইছে। হঠাৎ করে মনে হল এত সুন্দর বাংলার রুপ হয়ত এরকম ভাবে এমন পরিবেশে এই বাংলার প্রতিটা মানুষের দেখা হয়ে ওঠে নাই তবে আমার বিশ্বাস বেশিরভাগ মানুষেরই এই রূপের স্নিগ্ধ পরশে আবেশিত হওয়ার অভিক্ততা রয়েছে । আর তা যদি ঠিক হয় তবে ওরা কারা এই বাংলার এত মোহনীয় রুপ যাদের আকৃষ্ট করে না,এই সবুজ শ্যামল বাংলার স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের দিকে খেয়াল না করে ভিন দেশী মতবাদের প্রতি আকৃষ্টতায় মগ্ন মানুষ গুলিকে একবার এই বাংলার হৃদয়ে প্রবেশ করে তার অন্তর্নিহিত রুপ দেখার আহ্বান করছি। আর তখন দেখবেন এই বাংলা আপনার আমার প্রিয় মাতৃভূমি কতনা সুন্দর সুন্দর উপহার আপনাদের দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আসুন আমরা সেই মহামূল্যবান উপহার গুলির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে একটি ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পথে দেশকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করি। দলের বিভাজন থাকতেই পারে তাই বলে দেশের অস্তিত্বের প্রশ্নে একমত না হওয়ার পিছনে কোন কারন আছে বলে অন্তত আমার মনে হয় না। আজ যারা নতুন প্রজন্মের তাদের অনেকেই বুঝে না বুঝে স্বাধীনতার পক্ষে বিপক্ষে নানা যুক্তি তুলে তর্কে জরিয়ে পড়ছি আর অজান্তেই প্রতিনিয়ত এই দেশ মাতৃকার প্রতি অবিচার করে চলছি। এই অবিচার থেকে বাংলা মুক্তি চায়…