চলুন এক নজরে দেখি মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষনা পত্রটি

ম, সাহিদ
Published : 10 Dec 2011, 08:36 PM
Updated : 10 Dec 2011, 08:36 PM

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষনা পত্রটি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ বিষয়টি সম্পর্কে প্রতিটি মানুষের সাম্যক ধারণা থাকা একান্ত প্রয়োজন। এ বিষয়টি সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে আপনি কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘন করছেন কি না কিংবা আপনার উপর মানবাধিকার লঙ্ঘন জনিত কোন অন্যায় হচ্ছে কি না তা বুঝতে সুবিধা হয়। অনেক সময় আমরা অজান্তেই এই অপরাধে অপরাধি হচ্ছি আবার কখনও নিজের উপর হওয়া কোন অপ্রিতিকর ঘটনা টুকু মানবাধিকার লঙ্ঘনের আওতায় পড়ছে কি না তা বুঝতে এই বিষয়ে সবার একটি স্পষ্ট ধারণা থাকা একান্ত প্রয়োজন। আর সেই লক্ষে জাতিসংঘ কতৃক সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনা পত্রটি আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ প্রত্যেক ব্যাক্তি ওসমাজের প্রত্যেক অঙ্গ মানবিক অধিকারসমুহ এই সার্বজণীন ঘোষনা পত্রটি সর্বদা স্মরন রেখে শিক্ষাদান ও জ্ঞান প্রসারের মাধ্যমে এ সকল অধিকার ও স্বাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রগতিশীল ব্যাবস্থাদির দ্বারা সদস্য-রাষ্ট্র সমুহের জনগন ও তাদের অধীনস্থ অঞ্চল সমুহের অধিবাসীবৃন্দ উভয়ের মধ্যে ঐ গুলোর সর্বজনীন ও কার্যকর স্বীকৃতি ও মান্যতা অর্জনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাবে।

বন্ধনহীন অবস্থায় এবং সম-মর্যাদা ও অধিকারাদি নিয়ে সকল মানুষই জন্মগ্রহণ করে। বুদ্ধি ও বিবেক তাদের অর্পন করা হয়েছে;অত এব ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে তাদের একে অন্যের প্রতি আচরন করা উচিৎ।

যে কোন প্রকার পার্থক্য যথা: জাতি,গোত্র,বর্ণ,নারী-পুরুষ,ভাষা,ধর্ম,রাজনৈতিক বা অন্য মতবাদ,জাতীয় বা সামাজিক উৎপত্তি,সম্পত্তি,জন্ম বা অন্য মর্যাদা নির্বিশেষে প্রত্যেকেই ঘোষনা পত্রে উল্লিখিত সকল অধিকার ও স্বাধিকার স্বত্ববান। অধিকন্তু,কোন ব্যাক্তি যে দেশ বা অঞ্চলের অধিবাসি তা স্বাধীন,অছিভুক্ত এলাকা,অস্বায়ত্বশাসিত অথবা অন্য যে কোন প্রকার সীমিত সার্বভৌমেত্বের মধ্যে থাকুক না কেনো,তার রাজনৈতিক,সিমানাগত ও আন্তর্জাতিক মর্যাদার ভিত্তিতে কোন পার্থক্য করা চলবে না।

প্রত্যেকেরই জীবন-ধারন,স্বাধীনতা ও ব্যাক্তি নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে।

কাউকে দাস হিসাবে বা দাসত্বে রাখা চলবে না;সকল প্রকার দাস প্রথা ও দাস ব্যাবসা নিষিদ্ধ থাকবে।

কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর,অমানুষিক অথবা অবমাননাকর আচরন অথবা শাস্থি ভোগে বাধ্য করা চলবে না।

আইনের সমক্ষে প্রত্যেকেরই সর্বত্র ব্যাক্তি হিসাবে স্বীকৃতি লাভের অধিকার রয়েছে।

আইনের কাছে সকলেই সমান এবং কোনরূপ বৈষম্য ব্যাতিরিকে সকলেরই আইনের দ্বারা সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে। এই ঘোষনা পত্রের লঙ্ঘনজনিত বৈষম্য বা এরূপ বৈষম্যের উস্কানির বিরুদ্ধে সমভাবে রক্ষিত হওয়ার অধিকার সকলের আছে।

যে কার্যাদির ফলে শাসনতন্ত্র বা আইন কতৃক প্রদত্ত মৌল অধিকার সমুহ লঙ্ঘিত হয় সে সবের জন্য উপযুক্ত জাতীয় বিচার আদালত মারফত কার্যকর প্রতিকারের অধিকার প্রত্যেকের আছে।

কাউকে খেয়াল খুশি মত গ্রেফতার বা আটক করা যাবে না।

প্রত্যেকে তার অধিকার ও দায়িত্ব সমুহ এবং তার বিরুদ্ধে আনিত যে কোন ফৌজদারি অভিযোগ নিরুপনের জন্য পুর্ণ সমতার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার আদালতে ন্যায্যভাবে ও প্রকাশ্যে শুনানি লাভের অধিকার রয়েছে।

ক. কোন দন্ডযোগ্য অপরাধে অভিযোগে অভিযুক্ত হলে প্রত্যেকের আত্মপক্ষ সমর্থনের নিশ্চয়তা দেয় এমন গণ-আদালত কতৃক আইন অনুযায়ী দোষী সাব্যস্থ না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ বলে বিবেচিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।
খ.কাউকেই কোন কাজ বা ত্রটির জন্য দন্ডযোগ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্থ করা চলবে না,যদি সংঘটনকালে তা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দন্ডযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য না করা হয়ে থাকে;আবার দন্ডযোগ্য অপরাধ সংঘটনকালে যতটুকু শাস্তি প্রযোয্য ছিল তার চেয়ে অধিক শাস্তি প্রয়োগ চলবে না।

কাউকে তার ব্যাক্তিগত গোপনিয়তা,পরিবার,বসত বাড়ী বা চিঠি পত্রের ব্যাপারে খেয়াল খুশি মত হস্তক্ষেপ অথবা সম্মান ও সুনামের ওপর আক্রমন করা চলবে না।

ক. নিজ রাষ্ট্রের সিমানার মধ্যে চলাচল ও বসতি স্থাপনের অধিকার প্রত্যেকের আছে।
খ.প্রত্যেকেরই নিজ দেশসহ যে কোন দেশ ছেড়ে যাওয়ার এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের অধিকার রয়েছে।

ক. নির্যাতন এরানোর জন্য প্রত্যেকেরই অপর দেশসমুহে আশ্রয় প্রার্থনা ও আশ্রয় লাভের অধিকা রয়েছে।
খ.অরাজনৈতিক অপরাধসমুহ অথবা জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও মুলনিতি বিরোধী কার্যালাপ থেকে সত্যিকারভাবে উদ্ভুত নির্যাতনের ক্ষেত্রে এই অধিকার নাও পাওয়া যেতে পারে।

ক. প্রত্যেকেরই একটি জাতীয়তার অধিকার রয়েছে।
খ.কাউকেই যথেচ্ছাভাবে তার জাতিয়তা থেকে বঞ্চিত করা অথবা তাকে তার জাতীয়তা পরিবর্তনের অধিকার অস্বীকার করা চলবে না।

ক.পূর্ণ-বয়স্ক পুরুষ ও নারীদের জাতিগত , জাতীয়তা অথবা ধর্মের কারনে কোন সিমাবদ্ধতা ব্যাতিরেকে বিবাহ করা ও পরিবার গঠনের অধিকার রয়েছে। বিবাহের ব্যাপারে ,বিবাহিত অবস্থায় এবং বিবাহ বিচ্ছেদকালে তাদের সম-অধিকার রয়েছে।
খ.কেবল মাত্র বিবাহ ইচ্ছুক পাত্র পাত্রীর অবাধ ও পুর্ন সম্মতির দ্বারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে।
গ.পরিবার হচ্ছে সমাজের স্বাভাবিক ও মৌলিক একক গোষ্ঠী;সমাজ ও রাষ্ট্র কতৃক এর সংরক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।

ক. প্রত্যেকেরই একাকী এবং অপরের সহযোগীতায় সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকার রয়েছে।
খ.কাউকেই তার মস্পত্তি থেকে খেয়াল খুশি মত বঞ্চিত করা চলবে না।

প্রত্যেকেরই চিন্তা,বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। নিজ ধর্ম অথবা বিশ্বাস পরিবর্তনের স্বাধীনতা এবং একাই অথবা অপরের সাথে যোসাজেসে ও প্রকাশ্যে বা গোপনে নিজ ধর্ম বা বিশ্বাস শিক্ষাদান,প্রচার,উপাসনা ও পালনের মাধ্যমে প্রকাশ করার স্বাধীনতা এই অধিকারের আওতা ভুক্ত।

প্রত্যেকেরই মতামত প্রকাশের স্বাধীকার রয়েছে; বিনা হস্তক্ষেপে মতামত পোষন এবং যে কোন উপায়ে ও রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে তথ্য ও মতামত সন্ধান,গ্রহন ও গাত করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভূক্ত।

ক. প্রত্যেকেরই শান্তিপূর্নভাবে সম্মিলিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।
খ.কাউকেই কোন সংঘভুক্ত হতে বাধ্য করা যাবে না।

ক.প্রত্যক্ষভাবে অথবা অবাধে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজ দেশের সরকারে অংশগ্রহনের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।
খ.প্রত্যেকেরই নিজ দেশের সরকারি চাকরিতে সমান সুযোগ লাভের অধিকার রয়েছে।
গ.জনগনের ইচ্ছাই হবে সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি; এই ইচ্ছা সর্বজনীন ও সমান ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নৈমিত্তিকভাবে এবং প্রকৃত নির্বচন দ্বারা ব্যাক্ত হবে;গোপন ব্যালট অথবা অনুরুপ অবাধ ভোটদান পদ্ধতিতে এরুপ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

সমাজের সদস্য হিসাবে প্রত্যেকেরই সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার রয়েছে;প্রত্যেকেরই জাতীয় প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এবং রাষ্ট্রের সংগঠন ও সম্পদ অনুসারে তার মর্যাদা ও অবাধে ব্যাক্তিত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য অর্থনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সমুহ আদায় করতে পারবে।

ক.প্রত্যেকেরই কাজ করার,অবাধে চাকরি নির্বাচনের,কাজের জন্য ন্যায্য ও অনুকুল অবস্থা লাভের এবং বেকারত্ব থেকে রক্ষিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।
খ.প্রত্যেকেরই কোন বৈষম্য ভ্যাতিরিকে সমান কাজের জন্য সমান বেতন পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
গ.প্রত্যেক কর্মি তার নিজের ও পরিবারের মানবিক মর্যাদা রক্ষার নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম এমন ন্যায্য ও অনুকুলে পারিশ্রমিক এবং প্রয়োজনবোধে সেই সঙ্গে সামাজিক নিরাপত্তার জন্য অন্যান্য সুবিধা লাভের অধিকারী।
ঘ.প্রত্যেকেরই নিজ স্বার্থ রক্ষার্থে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন ও এতে যোগদানের অধিকার রয়েছে।

প্রত্যেকেরই বিশ্রাম ও অবসর বিনোদনের অধিকার রয়েছে। কাজের সময়ের যুক্তিসঙ্গত সীমা ও বেতনসহ নৈমিত্তিক ছুটি এ অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।

ক.নিজের ও নিজ পরিবারের স্বাস্থ্য ও কল্যানের নিমিত্তে পর্যাপ্ত জীবনমানের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে। খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান,চিকিৎসা ও প্রয়োজনিয় সামাজিক সেবামুলক কার্যাদির সুযোগ এবং বেকারত্ব,পীড়া,অক্ষমতা,বৈধব্য,বার্ধক্য অথবা অনিবার্য কারনে জীবন যাপনে অন্যান্য অপরাগতার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা এই অধিকারের অন্তর্ভূক্ত।
খ.মাতৃত্বকালে ও শৈশব অবস্থায় প্রত্যেকের বিশেষ যতœ ও সহায়তা লাভের অধিকার রয়েছে। জন্ম বৈবাহিক বন্ধনের ফলে,বৈবাহিক বন্ধনের বাইরে সকল শিশুই অভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা ভোগ করবে।

ক.প্রত্যেকেরই শিক্ষালাভের অধিকার রয়েছে। অন্ততপক্ষে প্রাথমিক ও মৌলিক পর্যায়ে শিক্ষা অবৈতনিক হবে। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামুলক হবে।কারিগরী ও বৃত্তিমুলক শিক্ষা সাধারনভাবে লভ্য থাকবে এবং উচ্চতর শিক্ষা মেধার ভিত্তিতে সকলের জন্য সমভাবে উম্মুক্ত থাকবে।
খ.ব্যাক্তিত্বের পুর্ন বিকাশ ও মানবিক অধিকার ও মৌলিক স্বাধিকার সমুহের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দৃঢ় করার উদ্দেশ্যে শিক্ষা পরিচালিত হবে। সমঝোতা,সহিঞ্চুতা ও সকল জাতি,বর্ন ও ধর্মীয় গোষ্ঠির মধ্যে বন্ধুত্ব ও উন্নায়ন এবং শান্তি রক্ষার্থে জাতিসংঘ কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি করবে।
গ.যে প্রকার শিক্ষা তাদের সন্তানদের দেওয়া হবে তা পূর্ব থেকে বেছে নেওয়ার অধিকার পিতামাতার রয়েছে।

ক. প্রত্যেকেরই গোষ্ঠিগত সাংস্কৃতিক জীবনে অবাধে অংশগ্রহন,শিল্পকলা চর্চা করা এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি ও এর সুফলসমুহের অংশীদার হওয়ার অধিকার রয়েছে।
খ.প্রত্যেকেরই বিজ্ঞান,সাহিত্য অথবা শিল্পকলা-ভিত্তিক সৃজনশীল কাজ থেকে উদ্ভুত নৈতিক ও বৈষয়িক স্বার্থ সমুহ রক্ষনের অধিকার রয়েছে।

প্রত্যেকেই এমন একটি সামাজিক ও আন্তর্জাতিক ব্যাবস্থার জন্য স্বত্ববান যেখানে এই ঘোষনাপত্রে উল্লিখিত অধিকার ও স্বাধীনতা সমুহ পূর্ণভাবে আদায় করা যেতে পারে।

ক.প্রত্যেকেরই সমাজের প্রতি কর্তব্যাদি রয়েছে কেবল যারা অন্তর্গত হয়েই তার ব্যাক্তিত্বেও অবাধ ও পূর্ণ বিকাশ সম্ভব।
খ.স্বীয় অধিকার ও স্বাধীনতা সমুহ প্রয়োগকালে প্রত্যেকেরই শুধু ঐ ধরনের সীমাবদ্ধতা থাকবে যা কেবল অপরের অধিকার ও স্বাধীনতা সমুহের যথার্থ স্বীকৃতি ও শ্রদ্ধা নিশ্চিত করতে পারে। এরুপ সীমাবদ্ধতা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে নৈতিকতা,গণশৃংখলা ও সাধারণ কল্যানের ন্যায্য প্রয়োজন সমুহ মেটানোর উদ্দেশ্যে আইনের দ্বারা নিরুপিত হবে।
গ.এই সকল অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগকালে কোন ক্ষেত্রেই জাতিসংঘের উদ্দেশ্য ও মূলনীতি লঙ্ঘন করা চলবে না।

এই ঘোষনার উল্লিখিত কোন বিষয়কে এরুপভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না যাতে মনে হয় যে,এই ঘোষনার অন্তভর্'ক্ত কোন অধিকার ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্যে কোন রাষ্ট্র,দল বা ব্যাক্তি বিশেষের আতœনিয়োগের অধিকার রয়েছে।

বিঃ দ্রঃ পরামর্শ কিংবা জিজ্ঞাসার জন্য ই-মেইল করুন : prp.info@undp.org