জঙ্গিদের দাওয়াতী কার্যক্রম চলে ফেসবুকে ও মিলন হয় ওয়াজ-মাহফিলে

ম, সাহিদ
Published : 2 Jan 2012, 05:31 PM
Updated : 2 Jan 2012, 05:31 PM

ফেসবুকে দাওয়াতি ও ওয়াজ মাহফিলে বৈঠকের কার্যক্রম চালাচ্ছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গিসংগঠন গুলোর সদস্যরা। কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা ইতিমধ্যে ইন্টারনেট ঘেটে জেএমবিম, হুজি, হিযবুত তাহরীর, আল্লাহর দল ও লস্কর-ই তৈয়বা সহ আরও একাধিক জঙ্গি সংগঠন তাদের কর্মী ও সদস্য সংগ্রহ করছে বলে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উদঘাটন করেছে। ওই সূত্রটি আরো বলেছে, আত্তগোপনে থাকা জঙ্গি সদস্যরা সাধারণ লোকজনের সঙ্গে মিশে হকার, যানবাহনের চালক গার্মেন্টস কর্মী সহ নানা পেশায় থেকে তারা তৎপরতা চালাচ্ছে। সারাদেশে এসব সংগঠনের প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশী প্রশিক্ষিত সদস্য চষে বেড়াচ্ছে। জেএমবি'র মজলিশে সুরার সদস্য শাহেদের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি বিশেষ টিম সারাদেশে প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত এসব জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের পাকরাও করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নানা কৌশলও ভেস্তে যাচ্ছে।

র‌্যাবের গোয়েন্দা উইংয়ের পরিচালক লেঃ কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফেসবুকের মাধ্যমে দাওয়াতী ও ওয়াজ মাহফিলের মাধ্যমে বৈঠকের কার্যক্রম চালাচ্ছে। আত্তগোপনে থাকা জঙ্গিদের ধরতে র‌্যাবের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। জঙ্গিরা যেমন নতুন কৌশলে এগুচ্ছে তেমনি পিছিয়ে নেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও। কিছু জঙ্গি মার্শাল আর্ট সহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। গত ১০ বছরের ব্যবধানে সরকার দেশের ৫টি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ করার পরও তাদের কে নিয়ন্ত্রনে আনা সম্ভব হচ্ছেনা। প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকা সহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নানা সংগঠনের জঙ্গী গ্রেফতার হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা। গোয়েন্দাদের কাছে আগাম তথ্য রয়েছে যে। সুযোগ পেলেই তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপর হামলা চালানোর পায়তারা করছে। বিশেষ করে জেএমজি, হুজি ও হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা এখনও বেপরোয়া। সংগঠনের শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার হলে পলাতক নেতারা দ্রুত এসে সংগঠনের কার্যক্রমের হাল ধরেন। তাছাড়া সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ কোন নেতা গ্রেফতার হলে বদলা নেয়ারও চেষ্টা চালায় তারা। জেএমবি'র আমীর মাওলা সাইদুর রহমান রহমান গ্রেফতার হওয়ার কিছুদিন পরই পুরান ঢাকা ও মীরপুরে পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে বদলা নেয়ার চেষ্টা করেছিল তার সহযোগিরা। বৃটিশ হাই কমিশনার আনোয়ারুল হক চৌধুরীকে লক্ষ্য করে জঙ্গিদের বোমা হামলায় কুমিল্লার মুরাদনগরের শরমাকান্দা গ্রামের পুলিশ সদস্য মিজানুর রহমান তার দায়িত্ব পালন কালে সিলেটে নিহত হন। আহত হন বেশ ক'জন পুলিশ সদস্য সহ কর্মকর্তা। এখন শীর্ষ জঙ্গিরা কর্মী সন্ধানের জন্য ইন্টারনেট ও বৈঠকের জন্য ওয়াজ মাহফিলকে বেছে নিয়েছেন। তারা ফেসবুকে তাদের কার্যক্রম ও সংগঠন সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দিয়ে নানা রকম লেখা লিখেছে। শীর্ষ জঙ্গি নেতা মাওলানা আবু সায়েম, মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান ও মাওলানা তাজ উদ্দিন সহ অন্তত এক ডজন জঙ্গি নেতা ইন্টারনেট ব্যবহার করে কর্মী ও সদস্য সংগ্রহ করছেন এবং ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিলের আড়ালে প্রকাশেই তারা আলোচনায় বসছেন বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছে। গোয়েন্দাদের কাছে আরও তথ্য রয়েছে ধৃত জেএমবির এহসার সদস্য কসাই ফারুক, আবুল হোসেন ও আবদুল গফ্ফার ইন্টারনেট ব্যবহারে পারদর্শী। জিজ্ঞাসাবাদে তারাও বিষয়টি স্বীকার করেছে।

সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধৃত তিন জঙ্গি জেএমবি ও হুজির কর্মকান্ড সম্পর্কে নানা রকম তথ্য দিয়েছে। কিভাবে সংগঠন চলছে এবং কারা বোমা-গ্রেনেড ও আগ্নোয়াস্ত্র তৈরী করছে এবং মাঠ পর্যায়ের যেসব সদস্য সক্রিয় আছে তাদের নাম ও প্রকাশ করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা গোয়েন্দাদের জানায় পুরুষ জঙ্গিদের পাশাপাশি মহিলা জঙ্গিদের বোমা ও গ্রেনেড তৈরী করার কলাকৌশল শেখানো হয়েছে। কুমিল্লার মিনা আক্তার, লতা, শারমিন, জোছনা ও বিলকিছ রাজশাহীর নুরজাহান, চুয়াডাঙ্গা মারজিয়া নিয়ন্ত্রনে রয়েছে একটি মহিলা ইউনিট। বিশেষ করে ঢাকা, চাপাইনবাবগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বগুড়া, টঙ্গী, গাজিপুর, ফরিদপুর ও মাদারীপুর সহ আরো কয়েকটি অঞ্চলে আত্তগোপনে থাকা জঙ্গিরা গার্মেন্টস সহ নানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে।

সূত্রগুলো আরও জানায়, জেএমবি'র কারাতে প্রশিক্ষন শাহেদের নেতৃত্বে ১৭সদস্যের একটি প্রশিক্ষিত টিম নতুন সদস্যদের প্রশিক্ষন দিচ্ছে। সংগঠনের অর্ধশত জঙ্গি কারাতে প্রশিক্ষক ব্লাকবেল্ট খেতাব পেয়েছে। তারা সহজেই শত্র" পক্ষকে মোকাবেলা করতে পারে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গ্রেফতার অভিযান চালালে প্রশিক্ষিত এই জঙ্গিরা কৌশলে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এসবি'র ও ডিজিএফআই এর পদস্থ কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের জন্য সৌদীআরব, কুয়েত ও পাকিস্তান সহ কয়েকটি দেশ থেকে প্রতিনিয়ত অর্থ আসছে।