বৃহত্তর কুমিল্লায় কৃষি ব্যাংকের লোকবল সংকটে গ্রাহকসেবা বিঘ্নিত

ম, সাহিদ
Published : 4 Jan 2012, 12:13 PM
Updated : 4 Jan 2012, 12:13 PM

কৃষি ব্যাংকে লোকবল সংকটের কারণে বৃহত্তর কুমিল্লার গ্রাহকদের প্রতনিয়তই সীমাহীন চরম দুর্ভোগ বেড়েছে। লোকবল সংকটের কারনে কৃষি ব্যাংকের অনেক শাখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমানে কুমিল্লাতেই রয়েছে ৬৯২ পদ শূন্য এরই সাথে গত ২৬ বছর ধরে কৃষি ব্যাংকে কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ বন্ধ রয়েছে।

কর্মকর্তা কর্মচারীর অভাবে কৃষি ঋণ বিতরন ও আদায় কার্যক্রম দারুনভাবে ব্যহত হচ্ছে। এতে বছরের পর বছর ব্যাংকের দায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। কুমিল্লায় অনাদায়ী কৃষি ঋনের পরিমান ১১শ ১৬ কোটি টাকায় দাড়িয়েছে। ১৯৫২ সালে শুরু হয় কৃষি ব্যাংকের যাত্রা। তখন এই ব্যাংকটির নাম ছিল কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক অব পাকিস্তান। স্বাধীনতার পর এর নতুন করে নামকরন করা হয় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, তবে দেশের উত্তর বঙ্গেঁ কৃষি ব্যাংকের নাম এখনও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক রয়ে গেছে। মূলত কৃষিক্ষেত্রে অবদান এবং ব্যাপক উন্নয়ন করার লক্ষ্য নিয়ে এই ব্যাংকের যাত্রা। কর্মকর্তা কর্মচারী সকল শূন্য পদে লোক নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। ১৯৮৫ সালের পর সারা দেশে ব্যাংকের দুই শতাধিক নতুন শাখা স্থাপিত হয়েছে। দেশের মোট কৃষি ঋণের শতকরা ৮০ ভাগ বিতরন ও আদায় করে থাকে কৃষি ব্যাংক। ১৯৮৯ সালে নিম্নমান সহকারী ও সহকারী ক্যাশিয়ারের শূন্যপদে সামান্য কিছু লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তারপর থেকেই এই ব্যাংকের সকল শূন্যপদে কর্মচারী কর্মকর্তা নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শতকরা ২৫ ভাগ অবসরে চলে গেছেন। চলতি ২০১২ সালের মধ্যে অবসরে চলে যাবেন শতকরা ৫০ ভাগ কর্মকর্তা কর্মচারী। নতুন লোক নিয়োগ করা না হলে ২০১৫ সালে কৃষি ব্যাংক লোকবল শূন্য হয়ে পড়বে।

ব্যাংকটির কুমিল্লা অঞ্চলের জিএম ফিরোজ খান জানান, এ বছর ব্যাংকার্স রিক্রটমেন্টর মাধ্যমে ১২ জন অফিসার কুমিল্লায় নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। তার মধ্যে ১০ জনই দ্বিগুন বেতনে প্রইভেট ব্যাংকে চলে গেছেন। কৃষি ব্যাংক কুমিল্লার আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১০-১১ অর্থ বছরে তাদের ঋন বিতরন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ সময় বিতরন হয়েছে ৪০৭ কোট ১১ লাখ টাকা। চলতি অর্থ বছর এই ঋন বিতরনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, লোকবলের অভাবে তারা ঋন বিতরন এবং আদায়ে সফলতা আনতে পারছেন না ফলে বছরের পর বছর ব্যাংকের অনাদায়ী ঋনের পরিমান ক্রমশঃ বাড়ছে। গত অর্থবছর শেষে (৩০সিসেম্বর ২০১১ ইং) কুমিল্লা জিএম কার্যালয়ের অনাদায়ী ঋনের পরিমান দাড়িয়েছে ১১শ১৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা। যার মধ্যে শ্রেনীকৃত ঋনের পরিমান ৫৫৩ কোটির ১১লাখ টাকা। বর্তমানে সাড়া দেশে কৃষি ব্যাংকের ৯৭৪ টি শাখা রয়েছে। তার মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে শাখার সংখ্যা ৫৭৪ টি আর উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে ২৫০ টি।

কুমিল্লায় একটি বিভাগীর কার্যালয়, একটি বিভাগীয় নিরীক্ষা কার্যালয় পাঁচটি মূখ্য আঞ্চলিক কার্যালয়, দুইটি আঞ্চলিক কার্যালয়, আটটি আঞ্চলিক মূখ্য কার্যালয় এবং ১৫৪ টি শাখা রয়েছে। কুমিল্লা, ব্রাক্ষ্মন বাড়ীয়া, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়খালী, লক্ষীপুর জেলা কুমিল্লার বিভাগীয় কার্যালয়ের আওতাধীন। কুমিল্লা বিভাগীয় কার্যালয় সুত্র জানায়, ৬ জেলায় কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তার মোট পদ সংখ্যা-৮০৪ জন। কর্মচারীর মোট পদ সংখ্যা একহাজার ৩৫ জন। তার মধ্যে কর্মকর্তার ৩০৫ এবং কর্মচারীর ৩৮৫ টি পদ শূন্য রয়েছে। শাখা পর্যায়ে অনেক ব্যাংকের দরজা খোলার ও লোক নেই। তাই অনুমোদিত নতুন শাখাও খুলতে পারছি না। এক প্রশ্নের জবাবে প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে কখন নতুন শাখা খুলতে পারব তাও বলতে পারছিনা বলে জানান ব্যাংকের কুমিল্লা জিএম (মহাব্যবস্থাপক) মোঃ ফিরোজ খান।

কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার আড্ডা, খোসবাস এবং সদর দক্ষিন উপজেলার বাগমারা ও আলীশ্বরে কৃষি ব্যাংকের ৪ টি নতুন শাখা খোলার লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ৮ মাসের ও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এখনো নতুন শাখাগুলো না খোলার কারনে কৃষকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এ এলাকার কৃষকরা।এ দিকে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের শাখা গুলিতে খোজ নিয়ে দেখা গেছে একই বিশৃংখল অবস্থা। এই অবস্থার উন্নায়নে এবং প্রান্তিক কৃষকদের যথাযথ সহায়তা প্রদান সহ ঋন প্রাপ্তি ও আদায়ে গতিশিলতা আনতে হলে অতি শিগ্রই লোকবল নিয়োগ সহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে এর সাথে শংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন মহলের আশু হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছেন ভুক্তভোগি কৃষক ও কৃষির সাথে শংশ্লিষ্ট সকল মহল।