স্বপ্নের ফেরিওয়ালা মলম বেপারিদের না জানা কথা

ম, সাহিদ
Published : 6 Feb 2012, 06:03 PM
Updated : 6 Feb 2012, 06:03 PM

আমরা বাঙ্গালীদের খুব সহজে কাবু করে আয়ত্বে এনে নিজ স্বার্থ হাসিল করার সব চাইতে সহজ পদ্ধতি হল স্বপ্নের কল্পকাহিনি নির্ভর একটি ছোট্র নসিহত করা। আর এ রকমের স্বপ্ন ভরা নসিহত দ্বারা আমাদের সিড়ি করে হয়েছে অনেক রাজনিতি যা চলছে এখনও। তবে আশা ভঙ্গ হয়ে আবারও আমরা স্বপ্নের হাতছানির মরিহিকার পিছনে দৌড়াই আর আবারও ভুল করি। কিন্তু এই সব স্বপ্নের নাটকের রচয়িতাদের প্রথম থেকেই আমাদের সরকার বাহাদুরের কাছ হতে থাকে না কোন নিয়ন্ত্রন। সর্ব শান্ত হয়ে পথে বসা সাধারন জনগনের হাহাকরে যখন বিদির্ন আকাশ বাতাস ভারি হয়ে পরে তখন থাকে না আর কিছুই করার। আজকে সংসদের এক প্রশ্নের জবাবে বানিজ্য মন্ত্রী জানান এমএলএম ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে আইন হচ্ছে:

তা হলে চলুন আজকে দেশের একটি বড় মলম ব্য্সায়ী (এম এল এম) কোম্পানি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি।
গত ডিসেম্বর মাসে দেশের প্রায় সব পত্র পত্রিকায় ডেসটিনি ২০০০ লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রফিকুল আমিন লাখ লাখ টাকা খরচ করে সকল মহলের জ্ঞাতার্থে শীর্ষক একটি বিজ্ঞাপন প্রচার করেছেন, যার নতুন করে এই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ব্যাপক সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। এই বিজ্ঞাপন প্রচারের পেছনের কারণ হলো, ডেসটিনি ২০০০লিঃ এর ভয়াভহ গন প্রতারনার বিষয়ে দেশের প্রভাবশালী ইংরেজী সাপ্তাহিক রিটজ-এর ধারাবাহিক প্রতিবেদন এবং ৯ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ''ডেসটিনিরি বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও আইন বহির্ভূত লেনদেনের অনুসন্ধানে নামছে দুদক'' শীর্ষক প্রতিবেদন। উক্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, সাবেক বানিজ্য মন্ত্রী লেঃ কর্নেল ফারুক খানের নির্দেশে ডেসটিনির অবৈধ কার্যকলাপ খতিয়ে দেখছে বানিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্নীতি দমন কমিশন। এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে ডেসটিনি ২০০০ লিঃ প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে মোঃ রফিকুল আমিন দাবি করেন, তদন্ত সংশ্লিষ্ট কোন মন্ত্রণালয় বা সংস্থা এখন পর্যন্ত তাদের কাছে কোন কৈফিয়ত চান নি।

আসলে, ডেসটিনির অবৈধ কার্যকলাপ এবং গন প্রতারনা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে বা সংস্থার কোন কৈফিয়ত তলবের প্রয়োজনই নেই। ডেসটিনি ২০০০ লিঃ এবং এর সহযোগি প্রতারনা প্রকল্পগুলোর গন প্রতারনার কিছু তথ্য তুলে ধরা হলোঃ

১. ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিঃ, ডেসটিনির ওয়েব সাইটে দাবি করা হচ্ছে যে, এটি নাকি ফাইনান্সিয়াল ইনষ্টিটিউশন (Financial Institution) বা ব্যাংক হিসাবে পরিচালিত হবার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার থেকে গত ২৩এপ্রিল ২০০৫ তারিখে নিবন্ধিত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর ১০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি অবৈধ ব্যাংকিং কার্য্যক্রম পরিচালনা করছে। মাসিক ৯শতাংশ হারে উচ্চ সুধ আদায় করে এই প্রতিষ্ঠান ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি স্থায়ী আমানতও গ্রহণ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রানালয়ের আইন অনুযায়ী এসব শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অবৈধ ব্যাংকের কার্যক্রম সারাদেশে পরিচালনার মাধ্যমে পক্ষান্তরে ডেসটিনির কর্তৃপক্ষ দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি চূড়ান্ত অবজ্ঞা প্রদর্শন ও প্রকাশ্যে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে। শোনা যায় ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির বিরুদ্ধে যাতে কোন ব্যবস্থা না নেয়া হয় সে লক্ষ্যে মোঃ রফিকুল আমিন নাকি অর্থমন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরে তাদের নিজস্ব এজেন্ট নিয়োগ করে রেখেছেন। এছাড়াও সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল হারুন অর রশিদ সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সাথে তার সম্পৃক্ততার সুযোগে ডেসটিনির পক্ষে নিয়মিত তদবীর করে যাচ্ছে। সম্প্র্রতি ডেসটিনির মালিক মোঃ রফিকুল আমিন এবং জেনারেল হারুন ব্যাংকের অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ''ডেসটিনি ব্যাংক লিঃ'' নামক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স চেয়েছেন।

২. এই মাল্টি লেভেল কোম্পানীর অন্যতম প্রকল্প ''ডেসটিনি ট্রি প্লান্টেশন লিঃ'' দেশের অন্তত ৪৮লাখ মানুষের কাছে ভুয়া বৃক্ষরোপন প্রকল্পের কাল্পনিক গাছ বিক্রি করে ইতিমধ্যে ৬০-৬৫ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ডেসটিনির ওয়েব সাইটে দাবি করা হয়েছে যে, ইতোমধ্যে বাকি ৬২৯৩ একর জমিতে ৯৪ লাখ গাছ রোপন করা হয়ে গেছে। এবং এই চলতি ২০১২ সালের মধ্যে নাকি ৬ কোটি গাছ রোপন সম্পন্ন হবে। প্রথমত, ডেসটিনির মালিকানায় ৬২৯৩ একর জমি নেই এবং বনায়ন বিশেষজ্ঞদের মতে ৯৪লাখ বৃক্ষ রোপনের জন্য ৬২৯৩একর জমি মোটেও যথেষ্ট নয়। তাদের মতে, এটি একটি ভুয়া প্রকল্প যার মাধ্যমে ডেসটিনি সাধারণ মানুষের বোকা বানিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চতুর রফিকুল আমিন এই ভুয়া প্রকল্পের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব দিয়েছে সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল হারুন কে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সংগৃহিত সিংহভাগ অর্থ ইতিমধ্যে বিদেশ পাচার হয়ে গেছে। এই অর্থ পাচারের সাথে জড়িত ডেসটিনির কথিত '' High Official'' বা উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। বিদেশী নাগরিক Noelg.Carey, যার পরিচয় ডেসটিনির ওয়েব সাইটে দেয়া আছে ''বৈদিশিক পরিচালক হিসাবে। প্রতি মাসে এই বিদেশী নাগরিক কে ডেসটিনি মোটা অংকের মাসহারা দিচ্ছে, যার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোন অনুমোদন নেয়া হয়নি। ডেসটিনির এই বৃক্ষরোপন প্রকল্প মূলত একটি ভয়ংকর গন প্রতারনার ফাঁদ। যার মাধ্যমে ইতোমধ্যে সাধারণ মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। রাজধানীর মালিবাগ মোড়ে অবস্থিত ''হোসাফ টাওয়ার'' নামক বহুতল বানিজ্যিক ভবনে ডেসটিনির কয়েকশ এজেন্ট মোটা কমিশনের লোভে সাধারণ মানুষের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অস্থিত্বহীন গাছ বিক্রি করছে প্রকাশ্যেই। সঠিক তদন্তে এসব সহজেই প্রমানিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

৩. ডেসটিনি ২০০০ লিঃ এর সহযোগি প্রতিষ্ঠান ''বৈশাখী টেলিভিশন'' প্রতিমাসেই স্যাটেলাইট ট্রান্সপন্ডার ভাড়া বাবদ সিঙ্গাপুরে ৩৫হাজার মার্কিন ডলার পাঠায়, যার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোন অনুমতি নেয়া হয়নি। বৈশাখী টেলিভিশন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। এ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠান ৩৭৮০হাজার মার্কিন ডলার বিদেশে পাঠিয়েছে, যার কোন অনুমোদন নেই। দেশের প্রচলিত আইনে, এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

৪. ডেসটিনির আরেক ভুয়া প্রকল্পের নাম ''বেস্ট এয়ার'' যেটির শেয়ার বিক্রি মাধ্যমে ইতিমধ্যেই প্রায় ৩০০কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক এ মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানী ডেসটিনি ২০০০ লিঃ। সাধারণ মানুষকে বলা হচ্ছে এটি নাকি দেশের অন্যতম র্শীর্ষ বেসরকারী বিমান কোম্পানী। কিন্তু বাস্তবে ঢাকার বাড্ডা এলাকায় একটি অফিস কক্ষ ছাড়া এটির আর কোন অস্তিত্ব নেই। বেষ্ট এয়ার এর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল ২৮ডিসেম্বর ২০১১ থেকে নাকি তাদের কোম্পানীর উড়োজাহাজ আকাশে উড়বে। কিন্তু বাস্তবে এসব কেবলই লোক ঠকানোর মিথ্যা প্রচারনা ছাড়া আর কিছুইনা।

বর্তমানে ডেসটিনি ২০০০ লিঃ এর নাম পাল্টে রাখা হয়েছে, ''ডেসটিনি গ্রুপ''
মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে ডেসটিনি ৩কোটি টাকা দান করেছে। কয়েকজন রাজনীতি নেতাকেও নিয়মিত মাসহারা দিচ্ছেন। কারণ একটাই বিপদ থেকে রক্ষা ডেসটিনির ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের ছবি দেয়া থাকলেও, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তারিকুল হুদা সরকারের ছবি নেই। এখানে দেখুন,

আরেক জায়গায় ডেসটিনির হাই অফিসিয়ালদের ছবি আছে, যেখানে জনৈক নোয়েল জি কেরী (Noel G. Carey) এর নাম থাকলেও ছবি নেই কারণ কি ? এখানে দেখুন

ডেসটিনির অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ফিরিস্তি-
Destiny-Hitachi industries লিমিটেড. destiny medical college and hospital destiny media and publications united. destiny Environment saving energy limited. Configure engineers and construction Company limited. destiny Builders limited. destiny tee limited. destiny life insurance company limited. according to register of joint stop companies in bangladesh. no such company is registered with them. in other words. it is a fake enterprise of destiny2000 group) Configure housing limited. Bondhishahi cold storage limited. talebarta limited (according to register of join stop companies in bangladesh. no such company is registered with them. in other words. it is a fake enterprise destiny2000 group) D2K Express limited. Destiny transit limited।

অবশেষে, ডেসটিনির ওয়েবসাইটের নিচেই দেখবেন একটা ডিজিটাল ঘড়ি উল্টো দিকে চলছে। বলা হচ্ছে ৫০০দিনের মধ্যেই নাকি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন করবে। ডেসটিনির মালিক রফিকুল আমিন যিনি কানাডার নাগরিক এবং এর পরিচালকদের অধিকাংশেরই এখন বিদেশে বাড়ি, গাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিনছেন। কারণ ২০১২-২০১৪ সালের মধ্যে ডেসটিনি হবে হাওয়া-হাওয়া আর বিনিয়োগকারীদের মাথায় পড়বে বাজ। এরকম মন্তব্য অভিজ্ঞ মহলের এখনও সময় আছে এসব প্রতারকদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার। সরকার যদি এখনই ডেসটিনি ২০০০ সহ অন্যান্য মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানীর বিষয়ে খোজ খবর নেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তাহলে নিশ্চয় কয়েক লাখ মানুষ চুড়ান্ত প্রতারনার হাত থেকে বেচে যাবে।