অবশেষে হেলাল উদ্দিন পাশ করেছে…

ম, সাহিদ
Published : 8 May 2012, 03:53 PM
Updated : 8 May 2012, 03:53 PM

মানুষের ইচ্ছা শক্তির কাছে বিফলতার পরাজয় নতুন নয়। ইচ্ছা শক্তির কাছে শত প্রতিকুলতা সত্বেও মানুষ ছিনিয়ে জয় করে এনেছে তার কাঙ্খিত বিজয় এমন উপমা দেয়া যাবে শত-সহস্র।তাই যে কোন সফলতার পেছনে থাকে মানুষের নিজ প্রত্যয় আর সেই দৃঢ় প্রতিজ্ঞাই তাকে নিয়ে যায় তাকে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে। আজ আপনাদের সামনে এক দরিদ্র পরিবারের এক প্রত্যয়ী যুবককে পরিচয় করিয়ে দেব,,,আসুন হেলালের সাফল্য কাহিনীটি জানি।

মুরাদনগর উপজেলার পালাসুতা হাজি মফিজ উদ্দিন নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পরীক্ষা জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ সন্তানের জনক ঔষধ বিক্রেতা তৌফিক আহাম্মদ হেলাল। গত সোমবার দুপুরে ফলাফল পেয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে হইচই শুরু হলেও মাদ্রাসায় উপস্থিত ছিলনা হেলাল। সে তখন মুরাদনগরের দারোরা বাজারের ঔষধ ফার্মেসিতে ঔষধ বিক্রি করছিল। মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই এর কাছে হেলাল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের আনন্দ উল্লাসে বহু খোঁজাখুঁজি করেও হেলালের দেখা মিলল না। বাজারের মধ্যে দোকান থাকায় হেলাল ফলাফল জানতে মাদ্রাসায় আসতে পারেনি। নিজেকে অংশ গ্রহন করাতে পারেনি সাফল্যের আনন্দ উল্লাসে। মাদ্রাসায় হেলালকে না পেয়ে বাজারের নিউ সুফিয়া মেডিকেল হলে গিয়ে দেখা গেল জীবনের এমন আনন্দঘন মুহুর্তে ৩ সন্তানের জনক ঔষধ বিক্রেতা তৌফিক আহাম্মদ হেলাল বেচা কেনায় ব্যস্ত। তখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হল কেমন আছেন হেলাল? বিনম্র ভাবে সে জানাল ভাল আছি,আপনি ভাল আছেন? হ্যাঁ, আপনি এ প্লাস পেয়েছেন। একথা শুনেই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল সে, তার পর কিছুটা ধাতস্থ হয়ে জানাল যে অভাব জয় করে সাফল্যের কাহিনী। হেলাল জানায়, মুরাদনগর উপজেলার কেয়টগ্রামে তাদের বসত। দরিদ্র পরিবারের বাবা একজন কৃষক । পাঁচ ভাই লেখা পড়া করে। বাবা আব্দুল গফুর সংসার চালাতে পেরে উঠেন না। তাই সংসারের হাল ধরতে ১৯৯২ সালে দারোরা দীনেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়মিত এসএসসি পরীক্ষার্থী থাকা সত্বেও স্কুল ছেড়ে সে বছরেই হেলাল কর্মের উদ্দেশ্যে সদুর প্রবাসে বাহরাইনে যান। প্রবাসী কর্মেও হেলাল অদম্য পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে দেশে এসে হেলাল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে হেলাল ২ কন্যা ও ১ ছেলে সন্তানের জনক। তার বড় মেয়ে মারুফা আক্তার স্মৃতি বর্তমানে দারোরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। সংসার ও কর্মের ফাঁকে ফাঁকে পড়াশুনা করে সে এবারের দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে। হেলাল জানায়, সে ভবিষ্যতে একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে মা-বাবা ভাইবোনদের মুখে হাসি ফোটাতে চায়।

ছবিঃ নিজ