এ বছর পবিত্র হজ্ব ব্রত পালনে ইচছুক: জেনে নিন-২

সাইফ ভূঁইয়া
Published : 27 May 2011, 12:28 PM
Updated : 27 May 2011, 12:28 PM

হোটেল থেকে বেরুবার আগে পবিত্র হয়ে নিন,অজু সেরে নিন ;যদিও পুরো মক্কাশরিফ জুড়ে অসংখ্য টয়লেট রয়েছে,মাটির নিচে কিংবা ওপরে খুঁজে পেতে কিছু সময়ের অপচয় তো হবেই! হজ্বের সময় যানজট মারাত্মক আকার ধারণ করে। প্রচুর হাঁটার জন্য প্রস্তুতি রাখুন, সেই সাথে কয়েক জোড়া আরামদায়ক স্লিপার সাথে রাখুন। যদি হারিয়ে যান (হারাবেন তো অবশ্যই),সর্বত্রই খুঁজে পাবেন 'হজ্জ সহায়তা বুথ'। তারা আপনাকে হোটেল, তাঁবু, জমারাত, মসজিদ খুঁজে পেতে সহায়তা করবে।

হজ্ব ও ওমরাহের সময় যদি কোনও জিনিস কোথাও ফেলে যান, ওটা কিন্তু আর খুঁজবেন না। বরং আপনার জিনিসপত্র লাগেজ বক্স এ ভালোভাবে রাখুন। নিজের অর্থকড়ি ঠিকমতো রাখা অথবা মানুষের সাথে লেনদেনের বেলায় সাবধান হোন। পকেটমার হতে পারে যে কোনও সময়।(বাংলাদেশী,পাকিস্তানীরা ছাড়াও আফ্রিকান কেলো গুলু থেকে দুরে থাকবেন।) ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও জিনিসপত্র রক্ষায় নিজেই সচেতন থাকুন। হারাম শরীফে(কাবা'য়) প্রবেশের সময় নিরাপত্তা পুলিশ দ্বারা তল্লাশির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।কোন পুলিশ ও অফিসারদের সাথে অযথা তর্কবিতর্কে জড়াবেন না। ক্যাম্পে (মিনায়) অবস্থানের অনুমতিপত্র সাথে রাখুন।

ধারনা করা হচ্ছে আরাফাত ময়দানে এ বছরও প্রচণ্ড গরম থাকবে তাই প্রচুর পানি বা প্রচুর তরল পানীয় পান করুন। সবসময় নিজের সাথে পানি রাখুন। এনার্জি ড্রিঙ্ক, নানা রঙ বে-রঙের পানীয় ও শক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ইয়োগার্ট, দুধ ফল এবং ফলের রস শরীরে দ্রুত ও দরকারি পুষ্টি যোগায়। এসব বেশি বেশি খাবেন।

নিশ্চিত থাকবেন যে প্রত্যেকটি আহ্কাম পালনে আপনি সঠিক জায়গায় অবস্থান করছেন। আরাফাত থেকে মুযদালিফায় ফিরে খোলা আকাশের নিচে রাত্রি যাপন করতে হয় ; অনেকে আরাফাতের সীমানায় থেকে যান। এটি মনে রাখা খুবই জরুরি। হজ্বের আহ্কাম ভুল করা যাবে না। আবার অনেকে আগেভাগে মিনা'য় চলে যান তাদের তাবুতে ; এ ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত দুর্বল, বয়স্ক ছাড়া কারও মিনায় অবস্হান করা ঠিক নয়।
মনে রাখবেন যুলহজ্জ্ব এর ৮ তারিখ আপনাকে অবশ্যই মিনায় রাত কাটাতে হবে। ৯ তারিখ মাগরেব পর্যন্ত আরাফাত ময়দানে। চেষ্টা করবেন মসজিদে নীমেরা'র কাছাকাছি অবস্হান করে খুতবাহ্ শুনতে।

মাগরেব এর পর আরাফাত এর সীমানা পেরিয়ে মুযদালিফায় খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন।

১০ তারিখ জমারাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করার পর মাথা মুণ্ডন করতে পারেন। মনে রাখবেন শুধুমাত্র সৌদি সরকারের অনুমোদন প্রাপ্ত ক্ষৌরকারদের কাছে কাজটি করাবেন। আশপাশে অনেক পাকিস্তানি কিংবা মিশরীয় ক্ষৌরকার তুলনামূলক সস্তায় কাজটি করবে। কিন্তু যেহেতু তারা ডিজপোসেবল ক্ষুর-কাঁচি ব্যবহার করে না তাই নানান সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।

আপনার ভাগ্য সহায়তা করলে মিনায় জমারাতের ১/২ কিলোমিটারের মধ্যে তাঁবু পেয়ে যেতে পারেন।(বেসরকারি হজ্ব আয়োজনকারী সংস্থাগুলো নিজেদের মুনাফার কথা-ই বেশী ভাবেন। মিনায় তাঁবু জমারাতের যত নিকটে হবে তার ভাড়াও তত বেশী,ধরে নিন আপনাকে তারা সেবা দানের জন্য চ্যারিটি খোলেননি)আমি ২০০৬ এ বাংলাদেশ থেকে বেসরকারি ব্যবস্হাপনায় হজ্বে এসেছিলাম। তখন দেখেছি বাংলাদেশীদের তাঁবু মিনার একেবারে শেষ মাথায়।ধরে নিন পায়ে হেঁটে আপনাকে অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে।

সঙ্গে ছাতা রাখবেন(ছাতা পেয়েও যাবেন বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানী বিনামূল্যে ছাতা বিতরন করে থাকে), বিশেষ করে রেমী (শয়তান কে কঙ্কর মারা) করার সময়। মহিলা, শিশু, দুর্বল, অসুস্থ এবং বৃদ্ধ লোকদের জন্য রেমী করতে যাওয়া উচিত নয়। যে কোন সক্ষম লোক অন্যের(প্রতিনিধি)হয়ে রেমী করতে পারেন। যদি আপনার কিছু পড়ে যায় বা আপনার স্লিপার হারিয়ে যায় তবে নিচু হয়ে তুলতে যাবেন না। আপনি দ্রুত পদদলিত হয়ে যেতে পারেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে অতীতে অধিকাংশ মৃত্যুই রেমী করার সময় ঘটেছে। যদিও জমারাত বিশাল বড় করা হয়েছে। আগের মতো মৃত্যুর ঝুঁকি থাকছে না ; তবুও সাবধান থাকবেন। দূর থেকে আপনি জমারাতে পাথর মারতে চেষ্টা করবেন না। এতে অন্য হাজির গায়ে সে পাথর লাগতে পারে।

(হাজিদের যাতায়াতের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ইতিমধ্যে মক্কা,মিনা,মুযদালিফা,আরাফাত এ বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্হা থাকছে এবছর,যদিও জিসিসি দেশের হজ্ব যাত্রী এবং সৌদি নাগরিকরা-ই শুধু এতে চলাফেরার সুযোগ পাবেন,ধারনা করা হচ্ছে এতে করে যানজট অনেক কমে যাবে।)

আইয়ামে তাশরিক এর দিনগুলোতে অনেকে কঙ্কর নিক্ষেপ করার পর বেশি বেশি ছওয়াব এর আশায় মক্কা শরিফে চলে যান, সেখানে নামাজ আদায় করেন। মনে রাখবেন আপনি যেখানেই থাকুন না কেন মিনায় এসে আপনাকে রাত কাটাতে হবে।

এ বছর কোরবানির জন্য ৪১০ সৌদি রিয়াল ধার্য করা হয়েছে। পশু কোরবানি দেয়া অনেক পরিশ্রমের কাজ। তাই কোরবানির টাকা ব্যাংক এ জমা করুন। অবশ্য আপনার মোয়াল্লেমগণ আপনাদের নির্ধারিত টাকা জমা নেবে, পশু জবাই করবে এবং আপনাদের মিনায় তা খাওয়াবে। এবং কোরবানির দিন থেকে আপনার খাবারের মেনুতে গরু/খাসি যোগ হবে।

যাদের ডায়াবেটিক আছে তাঁরা শাক-সবজীর কথা ভুলে যাবেন এটাও গ্যারান্টেড!

(চলবে)