উত্তম আর অধমের তফাৎ: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে হরতাল বনাম পুলিশের বুটের লাথি

সাইফ ভূঁইয়া
Published : 14 July 2011, 03:32 PM
Updated : 14 July 2011, 03:32 PM

সাম্প্রতিক কালে ৫ বারের নির্বাচিত বিরোধীদলের চীফ হুইপের উপর পুলিশের বর্বরোচিত হামলা,অকথ্য ভাষায় গালি, সংসদ সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত সংসদ ভবনের ভিতরে প্রবেশ করে তাঁর উপর হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি গোটা বিশ্বের কাছে কেমন হয়েছে তা বোধকরি নতুন করে ভাবতে হবেনা!

বিরোধীদলের কর্মসূচী বানচাল করতে বর্তমান বিরোধীদলের সময়ও একই ঘটনা ঘটেছিল। বর্ষীয়ান নেতা মোঃ নাসিম, মতিয়া চৌধুরী সহ অনেক নেতা কর্মী সেদিন নির্যাতিত হয়েছিল।

জনগণ "দিন বদলের পালা"কিম্বা ডিজিটাল বাংলাদেশ পাবার আশায় বর্তমান ক্ষমতাসীন দলকে সংসদে পাঠিয়েছে বিপুল ভোটে জয়যুক্ত করে।

জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারা, নির্বাচনে দেয়া ওয়াদা পালনে ব্যর্থ যে কোন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিকদল পরবর্তী নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় বরন করতে পারে, দুঃখ জনক হলেও ক্ষমতাসীন দলগুলো ক্ষমতায় আরোহণ করে কঠিন এই সত্যটি ভুলে যায়।

একজন ফারুকের উপর নির্যাতনের ঘটনাকে গায়ের জোরে উড়িয়ে দিতে চায়, মিডিয়ার বাড়াবাড়ি বলে নিজেদের গা বাঁচাতে চায় যা দুঃখজনক তাঁরা বিরোধীদলে থাকতে তাঁদের সাথে কি কি নির্যাতন হয়েছে তা বলে গা বাঁচানোর অপচেষ্টা চালায়।

আমরা সাধারণ জনতা মনে করি বিরোধীদল ক্ষমতায় থাকতে এসব করেছে বলেই আপনারা আজ ক্ষমতায়।

পুরনো সেই উক্তিটির কথা মনে করিয়ে দিতে চাই," কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড়ে দিয়েছে পা'য় তাই বলে কুকুর কামড়ানো মানুষের শোভা পায়?"

আজকের বিরোধীদল একজন পুলিশ অফিসার কোহিনূর এর জন্ম দিয়ে সেদিন যেমন ধিকৃত হয়েছিল ক্ষমতাসীন জোট সরকার এক-ই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে প্রতিশোধের ষোল কলা পূর্ণ করলে উত্তম আর অধমের তফাৎটা কোথায় তা আমাদের মাথায় আসেনা।

আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা,পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ,অসম্মান,অবিশ্বাস এতোটাই বেড়েছে যে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড দেখে আমরা হতবাক।

এই সন্দেহ আর অবিশ্বাস নিয়ে তো আর জাতীয় নির্বাচনের মত এত বড় একটা নির্বাচন কোন দলীয় সরকারের অধীনে হতে পারেনা।

জামায়াতকে বাদ দিয়ে স্বাধীনতার সকল শক্তির-ই উচিত জাতীয় এই ইস্যুটিতে ঐকমত্য প্রকাশ করা।

আমরা বড় দলগুলোকে পেশী-শক্তি,স্বজনপ্রীতি আর দলীয় লোকদের নিয়ে নির্বাচন করলে কি পাব?? সংঘাত,হানাহানি।

আর তাই বলি দেশের স্বার্থে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন,একজন নাগরিক হিসেবে এটা আমাদের মৌলিক অধিকার।

যদিও বাংলাদেশ সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রবেশ করেছে ১৯৯০ সালে কিন্তু সুস্থ ধারার গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চায় সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ আমাদের দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে মাননীয় প্রধান বিচারপতি পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে মতামত দিলেও সরকারীদল সুপ্রিমকোর্টের রায়ের বাধ্যবাধকতা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে জাতীয় সংসদে ৫ম সংশোধনী কেন পাশ করালেন এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা তাঁরা দেননি। সরকারীদল হিসেবে জনগণের প্রতি তাঁদের জবাবদিহিতার ভার তাঁদের উপর বর্তায়।

আগামী দুটি নির্বাচন মানে আরও ১০টি বছর আমাদের হাতে আছে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের দূরত্বের অবসান, উষ্ণতা, কিম্বা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইস্যুতেই মতানৈক্য হবার সম্ভাবনা এখনো তিরোহিত হয়ে যায়নি।

১৯৯৬ সালের মত পাতানো (তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামীলীগের আন্দোলনের কারণে তড়িঘড়ি করে আয়োজিত) নির্বাচনেরও কোন প্রয়োজনীয়তা ছিলনা।

এ অবস্থার উত্তরণ চাই,চাই পরস্পর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা,জনগণের রাজনীতি,আমাদের অর্থনীতি, জাতীয় উন্নয়ন, বিনিয়োগ, উৎপাদন সব স্থবির হয়ে আছে।

এমতাবস্থায় আমরা চাই সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে আপনারা (রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ) সহনশীল হোন, গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ব্রতী হোন, সাধারণ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান।
উন্নয়নের কর্মসূচী দিন।