সৌদি আরবে হজ্ব পালনে ইচ্ছুক বাংলাদেশি ভাইদের বলছি: প্রতারক থেকে সাবধান!

সাইফ ভূঁইয়া
Published : 1 Oct 2011, 12:43 PM
Updated : 1 Oct 2011, 12:43 PM

সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে অনেকে এবছর পবিত্র হজ্ব পালনের নিয়ত করেছেন। অনেকে হয়ত ভাবেন সৌদি আরব থেকে হজ্ব করবে এটা অত্যন্ত সহজ আসলে বিষয়টি তত সহজ নয় নয়।
রাজধানী রিয়াদ থেকে মক্কা-মদিনার দূরত্ব প্রায় ১২০০ কিমি। হজ্ব ফ্লাইটে বাংলাদেশ থেকে বিমানে আসতে আনুমানিক ৫ ঘণ্টা লাগে আর রিয়াদ থেকে বাসে কমপক্ষে ১৪/১৫ ঘণ্টা। এদেশে হজ্ব আয়োজনকারী নির্ধারিত অনুমোদন প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আছে যে গুলোকে বলা হয় "হামলা"। এই হামলা মিনা,আরাফাত এ তাঁবু,খানাপিনা,এবং যাতায়াতের সকল দায়িত্ব নিয়ে থাকে। অনুমোদন প্রাপ্ত বা লাইসেন্স প্রাপ্ত ছাড়া যে কেউ হজ্ব এর আয়োজন করলে তা অবৈধ হিসাবে গণ্য করা হয়ে থাকে। যা হাজীদের জন্য মোটেও নিরাপদ নয়।

হামলা গুলো থেকে হজ্ব পালন করতে হলে আপনার যা যা প্রয়োজন তা হল:-
১) পাসপোর্ট এ ফটোকপি
২) আকামার ফটোকপি
৩) পাসপোর্ট সাইজ এর ছবি
৪) টিকা বা ভ্যাকসিন এর সনদ

এসব পাবার পর সংশ্লিষ্ট আয়োজক সৌদি সরকারের Interiror Ministry বা হজ্ব ইমিগ্রেশন অফিসে আবেদন জমা দেবে। আবেদন যাচাই বাছাই করার পর কর্তৃপক্ষ অনেক সময় লটারির মাধ্যমে নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রবাসীদের অনুমোদন দিয়ে থাকে। যাকে বলা হয় "তাসরিয়াহ" বা ভিসা। সেখানে আবেদন কারীর ছবি এবং বৃত্তান্ত লেখা থাকে। হজ্বের পুরোটা সময় লেমিনেটিং করে সাথে রাখতে হয়।
এই ভিসা ছাড়া মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা হলে বিভিন্ন চেক পোস্ট এ ধরা পরার সমূহ ঝুঁকি রয়েছে,যার ফলশ্রুতিতে জেল-জরিমানা উভয়-ই হতে পারে।

বিদ্যমান আইনে একজন হজ্ব পালনকারী ৫ বছরের আগে দ্বিতীয়বার আবেদন করতে পারবেনা। অনেকে ভাবতে পারেন এতসব কঠোরতা কেন! জবাবটা খুবই সহজ, হজ্ব মৌসুমে প্রবাসীরা মক্কা-মদিনা গিয়ে নানা অবৈধ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে,ফুটপাত দখল করে যত্রতত্র খাবারে দোকান দেয় যা মান সম্মত নয়। এসব খেলে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়ে আক্রান্তের সম্ভাবনা থাকে। তাছাড়া অনেকেই টাকা বাঁচাতে বাসে চড়ে মক্কা চলে যায় এবং ফুটপাতে ঘুমায়। পকেট কাটা সহ,চুরি এবং অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

কি ভাবে প্রতারিত হতে পারেন?

সৌদি আরের বিভিন্ন মসজিদের টয়লেট এর দেয়ালে, বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় হোটেলের সামনে দেখতে পাবেন বাংলা ভাষায় স্টিকার লাগানো আছে। "অমুক হজ্ব এজেন্সি,,বাংলাদেশী ভাইদের জন্য বিশেষ মুআল্লেম এর ব্যবস্থা,খানা-পিনা, তাঁবু এবং অন্য সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে! নূন্যতম ৫ জনের গ্রুপ হতে হবে, তাহলে বিশেষ ছাড় দেয়া হবে।" এই ৫জন একত্রে মফিজ হবেন না!

বাথহা নামক বাঙালি মার্কেটে একজন প্রতারক প্রতি বছর হাজীদের সাথে প্রতারণা করে আসছে বলে বাঙালিদের অভিযোগ। মিতালি হোটেলের দোতালায় কম্পিউটার কম্পোজের একটি ছোট্ট অফিসকে এরা হজ্বের মৌসুমে হজ্ব অফিস বানায়। হজ্বের পরপরই এক বছরের জন্য লাপাত্তা হয়ে যায়। ছোট্ট এই কুঠুরিতে কি হচ্ছে বাইরে থেকে বোঝার উপায় নাই। ওখানে বসে " কা" আদ্যক্ষরের এক বাঙালি আরও কয়েকজনের যোগ সাজোসে দিনের পর দিন তার প্রতারণা চালিয়ে আসছে সৌদি আরবে এরকম আরও কিছু ভুয়া অফিস আছে যারা হজ্ব যাত্রীদের টাকা পুরোটাই মেরে দিয়ে কেটে পড়ে। নোয়াখালীর জনৈক আব্দুল মান্নান আল-ফাতিহা নামক অফিস খুলে কয়েক বছর আগে হজ্ব ইচ্ছুকদের প্রায় দুই মিলিয়ন রিয়াল নিয়ে কেটে পড়েছিল।

যাহোক একদিন "কা" এর অফিসে গিয়েছিলাম। একটা টেবিল, কয়েকটা চেয়ার,একটা কম্পিউটার নিয়ে অফিস। কোন ট্রেড লাইসেন্স চোখে পড়ল না,,অমুক হজ্ব এজেন্সি! যদিও ট্রেড লাইসেন্স ঝুলানো এদেশে বাধ্যতামূলক! দেখলাম না। তার আসে পাশে নিজেদের কিছু লোক বসা। অপেক্ষমাণদের বসিয়ে রেখে গতবছর কি কি করেছেন তার ফিরিস্তি দিছেন,এক কথায় আগতদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে তারা ভুয়া নন।।

ভুক্ত-ভুগিদের কথাও শুনলাম।
এই অফিস সকল কাগজ পত্র জমা নিলেও কোন তাসীরাহ দেয়না । টাকাটা নিজেরাই মেরে দেয়।(কেননা তাসীরাহ এর জন্য আবেদন পত্রের সাথে আনুমানিক ৪০০ রিয়াল সরকারি ফী জমা করতে হয়)! সে বা তারা যা করে তা হল:-

একটা বা দুইটা বাস ভাড়া করে হাজীদের মুজদালিফা এলাকা অর্থাৎ মিনার বাইরে ফেলে রেখে চলে আসে। কখনো তারা রিয়াদ থেকে কার্পেট, তাঁবু নিয়ে যায় সেগুলো দিয়ে মিনার বাইরে তাঁবু খাটায়।
পানি এবং টয়লেটের ব্যবস্থা থাকেনা, খানা-পিনার ব্যবস্হা থাকেনা। যদিও হজ্জ উপলক্ষে সৌদি সরকার লাখ লাখ অস্থায়ী টয়লেট তৈরি করছে তবু এক রকম খোলা আকাশের নিচে, প্রচণ্ড গরমে হাজিরা চরম দুর্ভোগে পড়ে। হাতা-হাতি মারা-মারি হয় হাল্কা পাতলা। যেহেতু ইহরাম পরিধানের র ঝগড়া বিবাদ নিষিদ্ধ তাই হাজিরা নীরবে সয়ে যান।

আইআম-এ-তাশরীকের দিন গুলোতে মিনায় অবস্থান অত্যন্ত জরুরী তাই অনেকে দেশ থেকে আশা তাদের আত্মীয় স্বজন খুঁজে পেয়ে তাঁবু ছেড়ে চলে যায়।

হজ্ব পালন ইচ্ছুক ভাইদের বলছি একজন সামর্থ্যবান মুসলমান এর উপরই হজ্ব ফরয হয়ে থাকে। আপনার আর্থিক সমস্যা থাকলে হজ্ব করতে হবে এমন কোনও বিধান নেই। আর যদি হজ্ব করার নিয়ত করেই থাকেন তবে এদেশের সরকার অনুমোদিত কোনও হজ্ব এজেন্সি থেকে হজ্ব পালন করুন টাকা একটু বেশি যায় যাক।

মনে রাখবেন মিনায় রাত্রি যাপন হজ্বের আহকামের একটি। হানাফি মাজহাবের নির্ভরযোগ্য মতামত হল, আইয়ামে তাশরীকে মিনার বাইরে অবস্থান করা মাকরুহে তাহরীমি প্রতারকের হাত থেকে বাঁচুন,নিজে এবং আপনার চারপাশে যারা আছে তাদের সচেতন করুন।

আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা হজ্জব্রত পালন আপনার জন্য সহজ করুন। আমিন!