রোজার মাস। সেহরি খেতে একটু আগেই জেগেছেন ৬৫ বছরের এক মা হালিমা বেগম স্বামী: মতিউর রহমান। তাঁর ২ সন্তান সৌদি আরবে থাকে। লেবার। রোজার মাসে সে দেশে রাতে ডিউটি তাই ছেলেরা এসময় মাকে ফোন করে। মা আজ জেগেছেন অজু করে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বেন, সেহরি খাবেন। পাশাপাশি বাড়িতে থাকেন সোহরাব মোল্লা। তাঁর বাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন কয়েকজন চোর দেয়াল টপকে তাঁর বাড়িতে ঢুকছে, তিনি চেঁচালেন,"তোমরা জাগো! তোমাদের বাড়িতে চোর ঢুকেছে।"
আর যায় কোথা আশে-পাশের মানুষ এসে ঘটনাস্থল থেকে এক চোরকে ধরে ফেলল। বাকিরা গেল পালিয়ে। খানিকটা উত্তম-মধ্যম দিয়ে চোরকে পুলিশে সোপর্দ করা হল, নাম রিঙ্কু,বাবা ইউনুস মিয়া একজন মাদক ব্যবসায়ী। পুলিশের সাথে পুরনো সখ্যতা! ইউনুস মিয়ার ছেলে দিন পনের পরই জামিনে বেরিয়ে এলো! ঘটনা এখানে শেষ হলে ভালো হত। সে দোষী কি নির্দোষ সেটা আদালতে প্রমাণ হত।
বাস্তবে ঘটে ভিন্ন কিছু।
রিঙ্কু এবং তার কুকর্মের সাথী হীরা মাঝি সহ চারজন ধারালো অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে বসলো ওই বুড়ি-মা'র উপর।
"তোর এতো সাহস,আমাদের পুলিশে দিয়েছিলি"! এলোপাতারি দায়ের কোপে একটি পা প্রায় বিচ্ছিন্ন, মাথায় বড় রকমের আঘাত পান তিনি।
ঘটনাটি ঘটেছিল ঢাকা-৩ আসনের শ্রীনগর থানার বাগরা গ্রামে। বাগরা গ্রামের সেই বুড়ি-মা'কে নেয়া হয়েছিল জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালে সেখানে তারা ভর্তি করেনি শুধু পায়ে ব্যান্ডেজ করে, মাথায় ব্যান্ডেজ করে ছেড়ে দেয়।
মুমূর্ষু ওই মা কে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকাল হাসপাতালে সেখানে ৮/৯ দিন উপযুক্ত কোন চিকিৎসা-ই তিনি পাননি। ডাঃ এ,আর খানের পরামর্শে তাঁকে স্থানান্তর করা হয় মহা খালিস্হ মেট্রোপলিটন ক্লিনিকে। ডাক্তাররা তার মাথার আঘাতের অপারেশন, সিটি স্ক্যান এর জন্য প্রায় ৯০ হাজার টাকা দাবি করে বসেন। রোগীর পেছনে প্রতিদিন খরচ হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার টাকা! এতো টাকা খরচ করার সামর্থ্য গরীব ঐ পরিবারটির আদৌ নেই।
আর শ্রীনগর থানা পুলিশ কি করছে আসুন দেখি:- থানায় প্রথমে তারা মামলা নেননি,মামলা করতে "মেডিকেল সার্টিফিকেট লাগবে" সাফ কথা। ৮ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে সার্টিফিকেট যোগাড় করার পর পুলিশ ৩২৬ ধারায় আসামীদের নামে মামা গ্রহণ করেছে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সাক্ষীদের সাক্ষ্য রেকর্ড করেছে। এই ঘটনায় ৩০৭/৪৪৮ ধারা সংযুক্ত থাকা অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই থকার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে পুলিশ আসামীদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
পুলিশ যতবার আসামী ধরতে আসে ততবার মামুর বাড়ির আবদার করে বসে! আর সন্ত্রাসীরা? তারা এখনো পরিবারটিকে হুমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নিতে না হয় বাবাকেও একই দশা করবে! সাথে যোগ দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি আসামীদের জামিনের বিরোধিতা না করার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করবেন। রোগীর আত্মীয় স্বজনের অভিযোগ চেয়ারম্যান আজ পর্যন্ত একটিবার আহতকে দেখতেও আসেন নি।
মেট্রোপলিটন হাসপাতালের ৪র্থ তলায় থাকা আহতের মাথার খুলি ভিতর দিকে দেবে গেছে এবং রক্ত জাট বেধে আছে তাই সার্জনরা এতো টাকা দাবী করছেন বলে জানা গেছে।
ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করলেও স্থানীয় সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, কিম্বা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে কোন রকমের মানবিক সহায়তা দেয়া হয়নি।
হতভাগা সেই মায়ের চিকিৎসার টাকা কোথা থেকে যোগাড় করবে? আসামীরা সদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের ভয়ে কেউ মামলায় সাক্ষ্য দিবে কি-না সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
অশ্রু সজল সেই ছেলেটির চোখে হাজার প্রশ্ন, তার মায়ের কি অপরাধ ছিল? তার ফেল ফেল চোখের দৃষ্টির সামনে আমার মাথা নত হয়ে আসে। মা তুমি ভালো হয়ে যাও,,আমি তোমার এক অধম সন্তান,,আমিও সৌদি বসে তোমার জন্য কিছু করতে পারছিনা।