ইন্টারনেটের অবাধ বিচরণ: আগ্রাসনের টুঁটি চেপে ধরার এখনই সময়

সাইফ ভূঁইয়া
Published : 24 Dec 2011, 06:59 PM
Updated : 24 Dec 2011, 06:59 PM

বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের আদালত ইন্টারনেটে বিশেষ করে ফেসবুক, গুগল, ইয়াহু এবং অন্যান্য সকল সাইট থেকে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টিকারী অপ-প্রচার, বিভ্রান্তি মূলক সকল পোস্ট মুছে দেয়ার আদেশ দিয়ে প্রায় ১২ কোটি ব্যবহারকারীর কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছে বলা হচ্ছে ভারত সরকার নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের দক্ষতা এবং সংঘবদ্ধ হবার ক্ষমতা দেখে এই প্রথম কিছুটা ভীত হয়ে পড়েছেন। উল্লেখ ভারত যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের পরেই ইন্টারনেট ব্যাবহারে শীর্ষ স্থানে আছে।

কোটি কোটি ব্যবহারকারীদের জন্য ইন্টারনেটের নির্দিষ্ট কোন নীতিমালা নেই ফলে যৌনতা,পর্ণ-গ্রাফি গোটা ভারতে ভয়াবহ থাবা বিস্তার করেছে। এছাড়াও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে একশ্রেণীর কট্টর হিন্দু সমালোচক এবং উস্কানি দাতাদের কারণে যে কোনো সময় বড় ধরনের সহিংসতা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

যদিও দেশটির নীতিনির্ধারক মহল দেশটিতে মধ্যপ্রাচ্যের নেয় আরব বসন্তের ভয় করছেন না। একজন ভারতীয় নাগরিকের সাথে আলাপ কালে জানা গেল যে, "ভারত সরকার ইন্টারনেট সহজ লভ্য করেছিলেন দুটি কারণে। প্রথমত সাইবার ক্রিমিনাল তথা সন্ত্রাসবাদ দমনে, সন্ত্রাসীদের খুব সহজে খুঁজে বের করতে। ভারতের সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে সেদেশের পুলিশ অনেক আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এছাড়াও চিহ্নিত কিছু অপরাধী, বিভিন্ন মৌলবাদী গোষ্ঠীকে সনাক্ত করতেও ইন্টারনেট অবাধ রেখেছিলেন।

যৌন বা পর্ণ সাইটগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিজিটরের আইপি এড্রেস সংগ্রহ করছে, তার কম্প্যুটারের নিরাপত্তা ছিদ্র ভেদ করে ঢুকে পরছে সিস্টেম এর ভেতরে। ফলে অপরাধী যেখানে বসেই অপরাধ সংঘটনের পরিকল্পনা করুক না কেন ধরা পড়ে যাচ্ছে।"

তাঁর মতে পাকিস্তানী অভিনেত্রী ভীনা মালিকের নগ্ন ছবি ভারতীয় মিডিয়ায় ফলাও করে ছাপার পর থেকেই সংখ্যালঘু মুসলমানরা ক্ষেপে উঠে। ফতোয়া ডট ওআরজি এবং একজন সাংবাদিক আদালতে মামলা করলে আদালত উপরিউক্ত রায় দেন।

আমাদের দেশে ইন্টারনেট অবাধ এবং উন্মুক্ত হওয়ার কারণে উঠতি বয়সের তরুণ এবং যুব সমাজ ক্রমশ অশ্লীলতার দিকে ঝুঁকে পড়ছে যৌন ছবি, যৌনতার অবাধ গতি বাংলাদেশে! সাইবার ক্যাফেগুলোতে ১৩-২৫ বছর বয়সীদের ভীড় ব সময়। কাফে মালিকরা হিস্টোরি ডিলিট তো করেন-ই না। তারা বেশ কিছু পর্ণ সাইট ফেভারিট/বুকমার্ক লিষ্টে সতনে রেখে দেন। ইন্টারনেটে ডেটিং সাইট, চলমান পতিতালয়, পর্ণ-মুভি খুবই সহজ লভ্য! ফলে দেশের তরুণ সমাজ এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।

এরা ইন্টারনেটের অপ-ব্যবহার করে অকালপক্ব হয়ে উঠছে। এডভেঞ্চারের নেশায় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের সাথে প্রেমের অভিনয় করে কিম্বা নানা ভাবে সখ্যতা তৈরি করছে। নানা ধরনের যৌন-উত্তেজক ড্রাগ খাবার বা পানীয়ের সাথে মিশিয়ে পান করিয়ে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। এসব ঘটনা গোপন ক্যামেরা, মুঠোফোনে ধারণ করে তা ইন্টারনেটে আপলোড করছে, (মান-সম্মানের ভয়ে ভিক-টিম গণ-ধর্ষণের কথাও গোপন রাখছে) ব্ল্যাক-মেইল করছে। এধরনের ঘটনায় আত্মহত্যার মত অকাল মৃত্যু ঘটছে। পর্ণ সিডিতে দেশ ছেয়ে গেছে।

সব কিছু ছাপিয়ে যেটা বেশি নজরে পরছে তা হলো, এসব ছেলে মেয়ে অনেকটাই উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ছে, নেশার প্রতি ঝুঁকে পড়ছে, পতিতালয় গমন, অনিরাপদ যৌন সম্ভোগে জড়িয়ে পড়ছে এতে যৌনরোগ তথা এইডস, হেপাটাইটিস এর মত ভয়াবহ সংক্রামক ব্যাধির বিস্তার ঘটছে।

ইন্টারনেটে অবাধ বিচরণ আমাদের কাম্য নয়। ধর্মীয়, মানবিক এবং নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করে ইন্টারনেটের আগ্রাসন রোধ কার সময় এসেছে। যৌনতা, নগ্নতা, পর্ণ-গাফি, সাইবার অপরাধ রোধে কার্যকর আইন চাই।

ছবি: ইন্টারনেট