ব্যাচেলরের ঠিকানা কোথায়?

সাইফুল বিন আ. কালাম
Published : 27 August 2016, 07:28 PM
Updated : 27 August 2016, 07:28 PM

বাসাভাড়া পাওয়াটা ব্যাচেলরদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জের বিষয়। যেখানেই যাবেন, ব্যাচেলর বললেই মুখের উপর দরজা বন্ধ বা ফোনে লেইন কেটে দেওয়া যেন নিত্য ঘটনা। ভালো টাকা দিয়েও ব্যাচেলররা ভালো বাসা পাইনা। যেখানে ফ্যামেলি ভাড়া হয় না কেবল সেখানেই ব্যাচেলরের স্থান।

সদ্য এক বাসায় উঠেছি, বাড়িওয়ালা আমাদের ব্যাচেলর জেনেও ভাড়া দিয়েছে। বিল্ডিং এর ৪র্থ তলায় থাকি আমরা। অত্যন্ত সাবধানে, সুন্দরমত থাকার জন্য বলে দেওয়া হয়েছে কারণ বাকী সব ফ্যামিলি বাসা। কেউ যাতে কমপ্লিন না করে। আমরা ৭/৮ জন সবায় শিক্ষিত ও ভদ্র ফ্যামিলির সন্তান তাই কোন সময় কারো দ্বারা কোন রকম উশৃঙ্খল আচরণ হয়নি। দেশব্যাপী যখন জঙ্গী তৎপরতার বিরোদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে, তখন বাড়ীওয়ালা আমাদের চলে যেতে নোটিশ দিয়েছে কোন কারণ ছাড়ায়। কারণ একটাই আমরা ব্যাচেলর। বন্ধুদের কাছে আমার প্রশ্ন; এক্ষেত্রে আমরা কোন আইনি সহায়তা পেতে পারি কিনা? বিনা কারণে আমাদের বের করে দেওয়ার পূর্ণ ইখতিয়ার বাড়ীওয়ালা রাখে কিনা?

আপনারা জানেন, আজকের ব্যাচেলররাই আগামীকালের জামাই। বাড়ীওয়ালারা বাড়ী বাড়ী ভাড়া দিতে বিবাহিতদের পছন্দ করলেও নিজের মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সময় ঠিকই ব্যাচেলর পাত্র খুঁজেন। ব্যাচেলররা যদি বাড়ী ভাড়াই না পায়, তাহলে তারা কীভাবে পড়ালেখা করে বা চাকরি করে নিজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আপনার মেয়ের দায়িত্ব বুঝে নিবে। আপনার মেয়ের দায়িত্ব নেওয়ার জন্যই তো ব্যাচেলরদের এই সংগ্রাম।

এখন অনকেই বলবেন; বিয়ে কের নিলেই তো পারো, সব ঝামেলা শেষ। আমি বলব; সেটাও আর পারি কোথায়? আজকের সমাজ ব্যাবস্থা বিয়েটাকে অনেক কঠিন করে রেখেছে। দু'পক্ষকেই অনেক কিছু দেওয়া-নেওয়ার হিসেব করতে হয়। ছেলের চাকরি, ব্যাংক-ব্যালেন্স, বাড়ী, গাড়ী কী আছে। দেন-মোহর মিনিমাম ২০ লাক হতে হবে। এত বেশি কেন জিজ্ঞেস করলে বলে; "এমনে ধরা আরকি, এগুলোতো আর তোমাকে পরিশোধ করতে হচ্ছে না।" এবার ছেলের পক্ষ নির্লজ্জের মত বলবে- ২০ লাক টাকা তো দেন-মোহর ধরলেন, আপনারা ছেলেকে কী কী দিবেন? আরো বলবে; 'এগুলো তো আজকাল বলতে হয় না, এমনিতেই দেই।' ছেলের দোলাভাই বলবে – 'আমি আবার একটু ঠান্ডা খেতে খুব পছন্দ করি, আমি আসব তারপর তোমাদের ফ্রিজ খুলে একটু ঠান্ডা খাব তাই একটা ফ্রিজ দিবা আর কি! আরো বলবে, তোমাদের মেয়ে থাকবে কোথায়, জিনিসপত্র কোথায় রাখবে, রান্নাবান্না কীভাবে করবে তাই তোমাদের মেয়ের যাতে সমস্যা না হয় সবকিছু ঠিকঠাক দিয়ে দিবে আর কি, এগুলো তো আর এখন বলতে হয় না, তারপরেও একটু মনে করে দিলাম!

এই যে দরকষাকষি সিস্টেম, এ থেকে বের হতে না পারলে আমাদের সমাজ দিন দিন কলুষিত হতে থাকবে। আপনার মেয়ে পাবে টাকাওয়ালা বুড়ো জামাই আর বয়সের তফাৎ বা মনের মিল না হওয়ার কারণে আপনার মেয়েও তার ইয়াং ব্যাচেলর বন্ধুর সাথে প্রেম চালিয়ে যাবে বা নতুন করে পরকীয়া শুরু করবে। পরকীয়ার সিস্টেম শেখার জন্য তো ভারতীয় সিরিয়াল আছেই। কারণ আপনিই ভেবে দেখেন, আপনার মেয়ে যখন তার স্বামীর সাথে একটু রোমান্স বা ফানি মোডে থাকতে চাইবে, বুড়ো জামাই তখন টাকা-পয়সা বা অন্য কিছু নিয়ে ভাববে। আপনার মেয়ে চাইবে ওর সাথে একসাথে বসে টিভিতে একটি সিনেমা দেখতে, তখন বুড়ো জামাই নাক ডাকতে ডাকতে ঘুমিয়ে পড়বে। আরো কত কি……………..

এই যে আমরা মাঝে মাঝে শুনতে পাই; তিন সন্তানের জননী আরেক জনের সাথে পালিয়ে গেছে! এতে সবায় মেয়েটি ও ছেলেটিকে ছি!ছি! করলেও সাইফুল বিন আ. কালাম ছেলে-মেয়ের বাবা-মাকে বেশি দোষ দিবে। কারণ এই যে; টাকা বা ধন সম্পদের লোভে পড়ে মেয়েকে বৃদ্ধ বা মেয়ের অপছন্দনীয় জামাই দিয়েছেন, মেয়ের পছন্দ-অপছন্দের তোয়াক্কা না করেই আপনি টাকা-পয়সা ও চাকচিক্য দেখেই মেয়ের বিয়ে দিলেন। তাহলে ঘটনা এমনই ঘটার সম্ভাবনা আছে। আবার ছেলের মা-বাবাকে দোষ দিব এ জন্য যে, তারা সঠিক সময়ে ছেলের বিয়ের কথা ভাবেন নি বা ছেলেকে সঠিক আদর্শে মানুষ করেন নি।

বিয়ের আগে প্রেম-ভালবাসা করা সব বাবা-মা রা অপছন্দ করলেও ছেলে-মেয়েরা কিন্তু ঠিকই এ বিষয়ে আগ্রহী বা সময়ের অপেক্ষায় থাকে। কারণ আপনি আপনার সন্তানদের নিয়ে বা পরিবারের সবায়কে নিয়েই প্রেমের নাটক বা সিনেমা দেখতেছেন। রোমান্টিক সিনগুলো মনোযোগী হয়ে দেখতেছেন। আর ছেলে-মেয়েদের তো সেল ফোন কিনে দিয়েছেনই যেখানে তারা অবাধে যা ইচ্ছা তাই দেখতেছে। তাহলে এর একটি প্রভাব আপনার মধ্যে না পড়লেও ছেলেমেয়েদের কাছে ঠিকই পড়ছে। সময়মত আপনার ছেলে-মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে তাদের হাতে মোবাইল ও ইন্টারনেট ধরিয়ে দিয়েছেন। আর তারা এসবের যতেচ্ছা অপব্যবহার করেই যাচ্ছে দিনের পর দিন যার খবর আপনারা রাখেন না বা রাখার দরকারও মনে করেন না। অনেকে তো এও বলে; এই বয়সে তারা একটু আধটু এগুলো তো করবেই! অনেকে অনেক কিছু জেনেও না জানার ভান করেন। আপনার মেয়ে কলেজে প্রতিদিন কেন যায়, কখন কলেজে প্রবেশ করে, কখন বের হয়, কলেজ বন্ধের দিনেও যায় কেন, বিশেষ বিশেষ প্রোগ্রামে কি করে, কলেজ ট্যুরে কার সাথে যায়, প্রতিদিন কোচিং-এ যায় নাকি অন্য কোথও যায় তার খবর কি আপনি রাখেন? সন্তান আপনার, নজরদারীও আপনাকেই করতে হবে। আমাদের চারপাশে অনেক ছেলেরা তাদের বিভিন্ন মেয়ে বন্ধুর সাথে ফোনে কথা বলে, চ্যাটিং করে আবার ডেটিংও যায়। তারা কারা? আপনার মেয়ের সাথেই তারা এগুলো করে। তাই আপনার মেয়েকে পাহারা দিন, তাহলে ছেলেরা এমনিতেই ভাল হয়ে যাবে। ছেলেরা না হয় বাইরে থাকে, কিন্তু আপনার মেয়ে তো ঘরেই থাকে। তাহলে তারা কীভাবে আপনাকে ফাঁকি দিয়ে ফোনে কথা বলছে বা চ্যাটিং করছে? কারণ আপনি অসচেতন! অনেক কিছু দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। এগুলোকে আল্লাহর রাসূল (স.) বলেছেন দইয়ুস যারা বেহেস্তে যাবেন না।

তাই আসুন, সবায় সচেতন হোন। বিয়েকে সহজ করুন আর বিয়ে পূর্ববর্তী প্রেমেকে চিরতরে না বলুন। প্রেম বিবাহ পরবর্তী একটি বিষয়, এটিকে বিয়ের আগে নিয়ে আসেল যা হয় তার একটি উদাহারণ হচ্ছে…

আমরা জানি, বৈদ্যুতিক তারগুলো একসাথে দু'টি করে থাকে যার একটিকে বলে পজিটিব ও অন্যটি নেগেটিভ। আমাদের সমাজেও মানুষ দু'ভাবে থাকে যার একজন ছেলে অন্যজন মেয়ে। এ তারগুলো যাতে পরষ্পর লেগে না যায় তাই তারগুলোকে একটি রাবারের পদার্থ দিয়ে মোড়ানো হয়েছে। কারণ এগুলো একটি আরেকটির সাথে স্পর্শ হলে বৈদুৎতিক শট বা বৈদুৎতিক বিপর্যয় হয়। আমাদের ছেলে মেয়েরাও পরষ্পর অবাধ মেলামেশা করলে সামাজিক বিপর্যয় হয় যার কারণে পরষ্পর পর্দা করতে বলা হয়েছে। আবার বৈদুৎতিক তারগুলো কিন্তু ঠিকই একজাইগায় গিয়ে মিলিত হয়ে কখনো আলো জ্বালায়, কখনো ফেন ঘোরায় বা অন্য কোন উপকারী সার্ভিস দেয়। আমাদের ছেলে-মেয়েরাও বিয়ের মাধ্যমে মিলিত হলে সুন্দর পরিবার গঠন হয় এবং সমাজ হয় কলুষ মুক্ত। ছেলে-মেয়েদের যদি পরষ্পর ভাল লাগে, তাহলে নিজেদের অভিভাককে দিয়ে প্রস্তাব পাঠান আর অভিভাবকদেরও ছেলে বা মেয়ের আর্থিক স্ট্যাটাস না দেখে অন্য সব ঠিক থাকলে বিয়ে দিয়ে দিন। বিয়ে মানেই তো থেমে যাওয়া নয়। পড়ালেখা চালিয়ে যান, একজন আরেকজনকে সহযোগিতা করেন। পড়ালেখা যতদিন না শেষ না হয় আপাতত সন্তান নেওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন। তাহলেই দেশ ও জাতি আরো দ্রুত এগিয়ে যাবে।

মানুষের ভবিষৎ কেউ জানে না। আপনি আজকে যাবে ধনি দেখে মেয়ে বিয়ে দিলেন সে কালকে গরিবও হয়ে যেতে পারে। আবার যাকে গরিব মনে করে অবহেলা করলেন সেই একদিন দেশ নায়ক হতে পারে। কারণ ভাগ্য কারো হাতে নয়, এটা ঈশ্বর প্রদত্ত, যখন যে কাউকেই ফেভার করতে পারে।

তাই আসুন আমরা ব্যাচলরদের ভালবাসি। ভাল বাসা দিয়ে তাদের প্রচেষ্ঠাকে আরো এগিয়ে নিতে সাহাজ্য করি।

ফেইসবুকে আমি: https://www.facebook.com/saiful.islam.developer