পাশ্চাত্য সংস্কৃতির মরণ ছোবল, মানবতার অপমৃত্যু

সাজিদ রাজু
Published : 7 August 2012, 05:20 AM
Updated : 7 August 2012, 05:20 AM

ঘটনাঃ এক
২২ জুলাই,২০১১। নরওয়ের রাজধানী অসলোর সরকারি ভবন বোমার শব্দে হঠাৎ কেঁপে ওঠে। ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় চারদিক। রাস্তায় ভেঙ্গে পড়ে ভবনের কাঁচ ও ইট-পাথর-সুরকি। মারা যায় ৮ জন। বোমার আঘাতে আহত হয় আরো বেশ কয়েক জন। ঘটনাস্থলে সাথে সাথেই আসে পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।

এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গুলির শব্দে আবারো অশান্ত হয়ে ওঠে শান্তির দেশ নরওয়ের দ্বীপ অঞ্চল উটোয়া। রাজধানী অসলো থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার দূরে চালানো হয় নির্বিচার গুলি। সেখানে চলছিল ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী জেনস স্টোলেনবার্গ এর রাজনৈতিক দল লেবার পার্টির যুব সম্মেলন। গুলিতে মারা যায় ৬৯ জন, গুরুতর আহত হয় শতাধিক।

এই দুটো ঘটনারই জনক অ্যান্ডার্স বেরিং ব্রেইভিক নামের ৩৩ বছর বয়সী এক যুবক। প্রথমে অসলোতে এবং পরে সেখান থেকে গাড়ী চালিয়ে উটোয়া দ্বীপে গিয়ে হামলা চালান তিনি। পুলিশী অভিযানে আটকের পর আদালতে বিচার চলছে ব্রেইভিকের। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন হতে পারে ব্রেইভিকের।

ঘটনাঃ দুই
২০ এপ্রিল ২০১২, যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের অরোরা শহর। সন্ধ্যায় দিনের কোলাহল কেবল থামতে শুরু করেছে। ডেনভারের ব্যস্ত মানুষজন ফিরে এসেছে ঘরে প্রিয়জনের কাছে। সেখানকার একটি সিনেমা হলে কয়েক'শ দর্শনার্থী উপভোগ করছিল ব্যাটম্যান সিরিজের শেষ ছবি দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস। হল ভর্তি দর্শকদের মাঝে হঠাৎ লাফিয়ে পড়ে হাজির হয় ওই সিরিজের জনপ্রিয় চরিত্র 'দ্য জোকার' এর পোশাক পরা এক যুবক। ২৪ বছর বয়সী জেমস ইভান হোমস। সবাইকে চমকে দিতে নয় বরং সেখানে এসেই তার হাতে থাকা বন্দুক দিয়ে গুলি চালায় হোমস। মুহুর্তেই পুরো সিনেমা হলে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। গুলিতে মারা যায় ১২ জন । আহত হয় আরো ৫৮ জন।

গুলি চালানোর পর ঘাতক হোমস তার বাড়ীতে অবস্থান নেয়। তবে বাড়ীর চার দিকে পেতে রাখে বিশেষ ধরনের বোমা। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে। বর্তমানে আদালতে তারও বিচার চলছে। অভিযোগ প্রমানিত হলে মৃত্যদণ্ড হতে পারে হোমসেরও।

অ্যান্ডার্স বেরিং ব্রেইভিকের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
অ্যান্ডার্স বেরিং ব্রেইভিকের জন্ম নরওয়ের অসলোতে ১৯৭৯ সালে। বাবা ছিলেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিক। ব্রেইভিক বেড়ে উঠেছেন একাকীত্বের মধ্য দিয়ে। বাবার সাথে মায়ের ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর তিনি দুজনের সাথেই যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। তার মা আরেকটি বিয়ে করেন। তখন থেকেই নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতেন ব্রেইভিক। থাকতেন একা একা। তার বন্ধুর সংখ্যাও ছিল খু্বই কম।

প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টানদের একটি উগ্রপন্থী দলে নাম লেখান কৈশোরেই। এর পর ১৫ বছর বয়সে সেই দল ত্যাগ করলেও পরবর্তীতে যোগাযোগ হয় আরো বেশ কয়েকটি উগ্রপন্থী দলের সাথে। বিশেষ করে সদস্য হন যুক্তরাজ্য ভিত্তিক উগ্রপন্থী মুসলিম বিদ্বেষী দল ইংলিশ ডিফেন্স লিগ-ইডিএল এবং স্টপ দ্য ইসলামিফিকেশন ইন ইউরোপ নামের দুটি দলের। সেই সময় থেকেই নরওয়েতে মুসলিম ইমিগ্রেশনের বিরুদ্ধে তিনি নেন কঠোর অবস্থান। নরওয়ের বহু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিরুদ্ধেও আন্দোলনে অংশ নেন তিনি।

তবে তার এই আন্দোলনের কাজে ভাটা পড়ে, টিনএজের শেষ সময়ে এসে পাকিস্তানি এক মুসলিম তরুণীর সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর। সেই তরুণীর সাথে তার ঘনিষ্ঠতাও তৈরি হয়। তার প্রতি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু ওই তরুণীর আগ্রহ ছিল তার সমবয়সী মুসলিম তরুণদের প্রতি। বান্ধবীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে না পেরে এক পর্যায়ে মুসলিম বিদ্বেষ আবারো মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে তার মনে। সেই সাথে যোগ হয় পূর্বের বিভিন্ন সময়ে মুসলিম বিদ্বেষী সংগঠনের সাথে যোগ দিয়ে নানা কর্মকাণ্ডের অনুপ্রেরণা।

একই সাথে তিনি প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে পড়েন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী জেনস স্টোলেনবার্গের রাজনৈতিক দল লেবার পার্টির প্রতিও। কেননা লেবার পার্টির রাজনৈতিক অবস্থান ইউরোপে বহু সংস্কৃতিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পক্ষে। তাই সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী স্টোলেনবার্গকে হত্যার। আর উটোয়া দ্বীপের যুবসমাবেশকে বেছে নেন প্রতিশোধের প্রধান লক্ষ্য হিসেবে।
হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর এসব ঘটনার দায়িত্ব নির্দ্বিধায় স্বীকার করেন ব্রেইভিক। ঘটনার জন্য অনুতপ্ত না হয়ে বরং শাস্তি দাবি করেন তিনি। সুযোগ পেলে আবারো এমন হামলা চালানোর ব্যাপারেও প্রতিজ্ঞা করেন তিনি। তবে মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের পর ব্রেইভিক যে রাজনৈতিক মতবাদ অনুসরণ করে বলে উল্লেখ করেছে এবং ইউরোপে মুসলিম নিধন ও বিরোধী দলের ওপর প্রতিশোধ নেয়ার কথা বলেছে, তা হচ্ছে তার কাজের আত্মপক্ষ সমর্থনের একটি যুক্তি। এই যুক্তির বাইরেও তার বেড়ে ওঠা এবং বাল্যকালের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের দিকে দৃষ্টি দিতে চান তারা।

জেমস ইভান হোমস এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
আধুনিক মার্কিন তরুণ জেমস ইভান হোমস। হোমসের জন্ম ১৩ ডিসেম্বর ১৯৮৭। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী তিনি। ২০১০ সালে স্নাতক শেষ করে নাম লিখিয়েছেন উচ্চ শিক্ষিতদের দলে। স্কুলে থাকা কালীন সমাজের পিছিয়ে পড়া, অর্থ কষ্টে দিন যাপন করা দরিদ্রদের জন্য তার মন কাঁদতো। স্কুল থেকে ঝড়ে পড়া শিশুদের নিয়ে কাজও করেছেন তিনি। স্নাতক শেষ করে ঘটনার মাত্র ৬ মাস আগে ভাবতে থাকেন থিয়েটার ও সিনেমা নিয়ে। বিস্তর গবেষণা শুরু করেন হোমস। একটি মুভি থিয়েটার গড়ে তোলারও পরিকল্পনা শুরু করেন তিনি। সেই সাথে সিনেমার আলোচিত চরিত্রগুলো তাকে বেশ আকর্ষণ করে। মজার ব্যাপার হলো, সিনেমার সেই চরিত্রগুলোর মতো নিজেকে তৈরি করতে থাকেন তিনি। শুধু ব্যবহারেই নয়, প্রস্তুতি নিতে থাকেন একেবারে সাজপোশাক ও প্রপসসহ। সংগ্রহ করা শুরু করেন নানা ধরনের ডকুমেন্টারি ও অস্ত্রশস্ত্র। সংগ্রহ করেন সেনা বাহিনীর ব্যবহার করা এআর-ফিফটিন রাইফেলও। ঘটনার দিন ওই রাইফেল দিয়েই তিনি গুলি চালিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে অরোরার পুলিশ প্রধান ড্যান অটোস। আটকের পর হোমস পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি তার অ্যাপার্টমেন্ট ঘিরে রেখেছিলেন নানা বিস্ফোরক দ্রব্য ও বোমা দিয়ে, যাতে অন্য কেউ সেখানে ঢুকতে না পারে।

বিশ্লেষণ
পশ্চিমা বিশ্বের এসব ঘটনা নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অনুমোদন প্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানী ও ফরেনসিক কনসালটেন্ট ড. মাইকেল নুচিটেলি ও দক্ষিণ আফ্রিকার চার্ল ডি সৌজা অন্যতম। গবেষণার জন্য তারা সামনে রেখেছেন অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত জেয়ার্ড লাফনার ও নরওয়েতে গণহত্যায় জড়িত ব্রেইভিকের ঘটনা। অ্যান্ডার্স বেইরিং ব্রেইভিক ও জেমস ইভান হোমস এর ঘটনা দুটোকে একই যোগসূত্রে বিশ্লষণ করেছেন এই বিশ্লষকরা। কেননা এই দুটো ঘটনার নায়ক দুজনের মধ্যে বেশ বিছু মিল দেখতে পাওয়া যায়। যেমনঃ

১. এই দুটো অপরাধের বাইরে দুজনেরই নেই কোন অতীত কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ইতিহাস।
২. পুলিশী অভিযানে আটকের আগে দুজনকেই বেশ স্বাভাবিক দেখা গেছে।
৩. গ্রেফতারের পর দুজনই প্রাথমিক ভাবে অপরাধ স্বীকার করেছেন।
৪. দুজনই অপরাধ সংঘটনের পর নিজের বাড়ীতে অবস্থান নিয়েছেন।
৫. দুজনেই প্রায় সমবয়সী।
৬. দুজনই অবিবাহিত
৭. দুজনই শিক্ষা-দীক্ষায় প্রায় কাছাকাছি মানের।

নানা উপসর্গ বিশ্লেষণ করে এবং আরো কিছু সাধারণ মানদণ্ড বিবেচনা করে এসব ঘটনার জন্য বেশ কিছু কারণের ব্যাপারে এক মত হয়েছেন সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা। তারা পশ্চিমা উদ্যাম সংস্কৃতি, মুল্যবোধের অবক্ষয়, পারিবারিক ভাঙ্গন ও পারিবারিক সম্পর্কের শিথিলতা এবং আগ্নেয়াস্ত্রের সহজ প্রাপ্যতাকে মোটামুটিভাবে দায়ি করেছেন।

১. উদ্যাম ও উগ্র সংস্কৃতির প্রভাবঃ
নানা মাত্রিক সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও এ ধরনের সামাজিক বিপর্যয়ের পেছনে তাদের উদ্যাম সংস্কৃতিকে দায়ী করেছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা। তাদের চলচ্চিত্রে সহিংসতার দৃশ্য দেখানো হয় খুবই সাধারণভাবে। আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার শিশু ও কিশোর মনে ফেলে মারাত্মক ছাপ। হলিউডি এসব ছবিতে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হত্যা ও ধর্ষণ দৃশ্য শিশু-কিশোরদের আগ্রাসী ও হিংসাত্মক করে তোলে। তরুণ সমাজ হারিয়ে ফেলে স্বাভাবিক হৃদয়ের কোমলতা। এসব সামাজিক অনাচারে জড়িয়ে পড়তে উৎসাহী হয়ে ওঠে।

এর পাশাপাশি পাশ্চাত্য নাটক-সিনেমায় প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ের গভীর সম্পর্কের ব্যাপারগুলো তুলে ধরা হয় খোলামেলাভাবে। নর-নারীর আদিম সম্পর্কের দৃশ্যগুলো যুব সমাজকে আগ্রহী করে তোলে অবাধ যৌনাচারে। এর প্রভাবেই অনেক সময় নিজের পছন্দের বাইরে কোন ঘটনা ঘটলে তা মেনে নিতে পারে না তরুণ মন। সে সময় সিনেমেটিক কায়দায় অপরাধ সংঘটিত করে অবলীলায়।

ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে শিশুরা হিংস্রতা দেখে, তাদের ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে শেখার ক্ষেত্রে এবং সীমিত সামাজিক দক্ষতা যেমন অন্যের সাথে মেলামেশার ক্ষেত্রে। তারা নিজেরাও হতে পারে হিংস্র এবং করার সম্ভাবনা বেড়ে যায় ঝুঁকিপূর্ণ ও অপরাধী আচরণের। দেখা যেতে পারে বিষন্নতা বা তীব্র দুশ্চিন্তায় ভোগা। শিশুদের জীবনের প্রথম দিকের সময়গুলোতে তারা হয় অরক্ষিত ও অসহায়।

২. পারিবারিক বন্ধনের শিথীলতা ও বাবা-মার সম্পর্কের সংকটঃ
পাশ্চাত্যের পারিবারিক বন্ধন হয় খুবই দুর্বল। এর কারণ, সেখানে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি বা একক পরিবারের প্রাধান্য। সেখানে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ ও পরিবারির ভাঙ্গন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবার টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে তাদের মধ্যে দেখা যায়না বিশেষ যত্ন বা শ্রদ্ধার সম্পর্ক। সামাজিক সহনশীলতা একেবারে শূণ্যের কোঠায়। অনেক সময় পরিবারের ছোট্ট শিশুটিকে বড় হতে হয় বাবা-মার সংস্পর্শহীন কোন শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে। এছাড়া পরিবারে ঠাঁই হয়না বয়োজেষ্ঠ্যদের। দিন পার করতে হয় কোন বৃদ্ধাশ্রমে। পারিবারিক জীবনের এমন পরিস্থিতি পশ্চিমা সমাজকে ফেলে দিয়েছে এক ধরনের অস্থিরতায়।

ইউনিভার্সিটি অব নটরডেম এর রিসার্স এ সাইকোলজিস্ট ই. মার্ক কামিংস বলেন, ' What we show is that children's emotional security is affected by the relationship between the parents —-not just the child's relationship to the parent.' অর্থাৎ শিশুর মানবিক বিকাশ বাবা-মা'র সাথে সন্তানের সম্পর্কের অবণতির কারণে যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার চেয়েও সমান ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই বাবা-মা'র নিজেদের ভিতরকার দ্বন্দ্ব-সংঘাতের কারণেও।

কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. গর্ডন হ্যারল্ড বলেন, 'Arguing in front of children can cause them serious damage' অর্থাৎ শিশুর সামনে ঘটা বাবা-মার মধ্যকার কলহ বিবাদ তাদের মানসিক ভাবে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেয়।

৩. নিয়ন্ত্রণহীন তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে অনিয়ন্ত্রিত তথ্যপ্রযুক্তির সংস্পর্শ। এক জরিপে উঠে এসেছে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত করবার চাঞ্চল্যকর পরিসংখ্যান। বর্তমানে প্রায় দুশো ৬৭ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে যারা এর মাধ্যমে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে। আর এসব অপরাধে তারা সহায়তা নিচ্ছে প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবনের। উৎসাহ পাচ্ছেন সাইবার হামলা, সাইবার অপরাধ, সাইবার হ্যাকিং মতো ব্যাপারে এবং একেক জন হয় উঠছেন সাইবার প্রিডেটর হিসেবে।

৪. আগ্নেয়াস্ত্রের সহজপ্রাপ্যতা
আগ্নেয়াস্ত্রের সহজপ্রাপ্যতাকে এসব সামাজিক অপরাধ ও অপরাধ প্রবণতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। এসব আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতার বিষয়টি বিবেচনা করে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন তারা। সাম্প্রতিক একটি জরিপের ফলাফল সমাজ বিজ্ঞানীদের এই উদ্বেগকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে সম্প্রতি এই জরিপ পরিচালনা করে মানুষ ও গণমাধ্যম নিয়ে গবেষণাকারী বেসরকারি সংস্থা পিউ রিসার্স সেন্টার জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিনি নিজস্ব আগ্নেয়াস্ত্র রাখার ব্যাপারে আগ্রহ হয়ে উঠেছে। শতকরা ৪৯ জন মার্কিনি নিজস্ব আগ্নেয়াস্ত্র রাখা জরুরী বলে মত দিয়েছে। জরিপের তথ্য মতে শতকরা ৮০ জন মার্কিনি আগ্নেয়াস্ত্র বহন করে এবং এই সংখ্যা প্রায় ২৭ কোটি।

ন্যাশনাল ইনজুরি প্রিভেনশন এন্ড কন্ট্রোল সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, শুধু মাত্র ২০০৯ হত্যা, আত্মহত্যা ও অসাবধানতাবশত গুলি চালিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ৩১ হাজার মার্কিনি। গড়ে এই হার প্রতিদিন ৮৫ জন এবং ঘণ্টায় ৩ জনেরও বেশি। আর মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এর জরিপে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। তাদের মতে, ২০১০ সালেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত ১২ হাজার হত্যা কাণ্ডের মধ্যে প্রায় ৯ হাজার হত্যাকাণ্ড হয়েছে নিজস্ব আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা।

সাজিদ রাজু
বার্তাকক্ষ সম্পাদক
সময় টেলিভিশন।