পাবলিক বাসে অসহ্য গরম। টিপ টিপ বৃষ্টি। মানুষে টুইটম্বুর বাস। ফার্মগেট থেকে মিরপুর। অফিস শেষে তাই তিল ধারণের ঠাই নাই বাসে। বাসের একদম সামনের দিকে থাকা এক যাত্রী তার এবং তার এক সঙ্গী, যে একদম পেছনে বসেছে, দুই জনের ভাড়া দিয়েছে কন্ডাক্টরকে। কন্ডাক্টর আবার পেছনের সঙ্গীর কাছ থেকেও ভাড়া নিয়েছে। নামার সময় জানার পর কন্ডাক্টরের কাছ থেকে ভাড়া ফেরত চাওয়ায় শুরু হয় দুই পক্ষের কথা কাটাকাটি। কন্ডাক্টর অস্বীকার করে ভাড়া ফেরত দিতে। এ নিয়ে শুরু হয় দুই পক্ষের ঝগড়া। পেছনের সঙ্গী বেশ বলশালী সুঠামদেহী যুবক। এক পর্যায়ে কন্ডাক্টরকে কষে দিল দুই থাপ্পর। রুগ্নদেহের কন্ডাক্টর প্রতিউত্তরে থাপ্পর ফেরত দিতে পারলো না ঠিক, তবে কটকটে চাহুনিতে হুঙ্কার দিয়ে যেসব শব্দ নিঃসৃত করলো তাতে আঘাতকারী যদি একটু মাথা ঠাণ্ডা রেখে ভাবেন, তাতে তার রাতের ঘুম হারাম হবে এ কথা নিশ্চিত।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রী ছাউনি থেকে তালতলা রাস্তা মেট্রোরেলের জন্য কাটা। যাতায়াত করা মুশকিল। তার ওপর আবহাওয়া খারাপ, কাদায় একাকার। কোথায় গর্ত বোঝা বড় দায়। তাই বাসের গতি অনেক ধীর, গাড়ি চলছে এক সারিতে। দীর্ঘ জ্যামের কারণে কিছু গাড়ী উল্টো রাস্তায় চলে গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস, ট্রাক, রিক্সা, সিএনজি, মোটরসাইকেল কি নেই নিয়ম ভাঙ্গার দলে! যারা সোজা পথের যাত্রী তারা বরং উল্টোপথে গাড়ী যেতে দেখে নিজ নিজ বাস ড্রাইভারদের অগা-মগা বলে গালাগাল দেয়া শুরু করে দিয়েছে। এমন সময় ঘটলো বিপত্তি। উল্টো পথে যাওয়ার কারণে সামনের কোন গাড়ি চলছে না। বাঁশি বাজাতে বাজেতে হাতে ওয়্যারলেস নিয়ে ছুটে এলেন একদল লোক। রিক্সাওয়ালাদের থাপ্পড় হাকানো থেকে শুরু, মাঝে সিএনজি ওয়ালাদের কাগজ দেখানোর ডর ভয়, জোর করে দরজা খুলে পিকআপ-ট্রাক-প্রাইভেট ওয়ালাদের ভয় দেখানো, সব শেষে গাড়ি আবারো পেছনে পাঠিয়ে দেয়া। কিছু সময়ের মধ্যেই রাস্তার গাড়ি চলতে শুরু করলো।
অপরাধ বাসের কন্ডাক্টর, উল্টোপথে আসা ড্রাইভাররা সবাই করেছে। কিন্তু গায়ে হাত তোলার অধিকার আপনাদের কে দিল? কেউ অপরাধ করলে আপনি আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। আপনার কাছ থেকে টাকা বেশি নিলে আপনি তাকে বোঝাতে পারেন। আপনার গায়ে শক্তি বেশি, আপনার আইন প্রয়োগের ক্ষমতা আছে ঠিক। কিন্তু অন্যের গায়ে হাত তোলার অধিকার আপনার নেই। অন্যকে মেরেছেন মানে আপনি নিজেও আইন নিজের হাতে তুলে আরেকটি অন্যায় করলেন। অন্যায় দিয়ে একটি অন্যায় ঠেকানো যায় না। ওই রিক্সাওয়ালার অসহায় অগ্নিদৃষ্টির উত্তাপ আপনাকে পুড়িয়ে দিতে পারে। সে উত্তাপ আপনাকে স্পর্শ না করুক, এই কামনা।
সাজিদ রাজু
সংবাদকর্মী