একটি গানের ২৫ বছর

সাজিদুল হক
Published : 14 April 2018, 09:57 PM
Updated : 14 April 2018, 09:57 PM

সালটা ২০০০ হবে খুব সম্ভবত। আমি কোনো এক কারণে ঢাকায় এসেছি। এক সকালে আমাকে নিয়ে ঢাকার নিউ মার্কেট গেলেন আমার এক আত্মীয়া। একটি সিডি-ক্যাসেটের দোকানে ঢুকে দোকানিকে 'আমি বাংলায় গান গাই' গানটার সিডি দিতে বলা হলো। দোকানি একটি সিডি বের করে দিলেন।

ওই আত্মীয়া বললেন, "এটা কী দিলেন?"

দোকানি বললেন, "আপা, এটাই মূল শিল্পীর সিডি। শুনেন, ভালো লাগবে।"

ওই প্রথম প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের নাম জানলাম। এর আগে তাঁকে চিনতাম না। সিডিটা বাড়িতে এনে যখন প্লে করলাম, একটা নতুন জগৎ যেন খুলে গেল আমার সামনে।

বেসরকারি একটি টেলিভিশনে অন্য এক বাংলাদেশি শিল্পীর কণ্ঠে গানটি তখন জনপ্রিয় হলেও মূল গীতিকার, গায়কের কথা বেশিরভাগ লোক জানে না। প্রতুল মুখোপাধ্যায় বাংলাদেশে তাঁর আগেও পরিচিত ছিলেন, তবে খুব অল্প সংখ্যক মানুষের কাছে।

প্রথম শোনার পর আমার মনে হলো, 'বাংলায় গান গাই' এর প্রতিটা লাইন যেন মর্মে পৌঁছে যাচ্ছে। প্রত্যেক উচ্চারণ, গায়কি যেন বলে দিচ্ছে বাংলার প্রতি টানের কথা। বাংলাকে ধারণ না করলে মনে হয় ওটা আসে না।

আজ অন্য গানগুলো নিয়ে কথা বলবো না। পরে কখনও হবে।

প্রতুল মুখোপাধ্যায় যখন গাইছেন, "আমি বাংলায় ভাসি, বাংলায় হাসি, বাংলায় জেগে রই/আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে/ করি বাংলায় হাহাকার/ আমি সব দেখে শুনে ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার…", আমার মনে হলো আমিও ভাসছি, হাসছি, জেগে রইছি, হাহাকার করছি, ক্ষেপে গিয়ে চিৎকার করছি। আসলে তাই-ই করি, বাংলা আমার ভাষা; আমি বাঙালি। সেই সাথে একটা আক্ষেপও তৈরি হলো- কেন আরও আগে গানটা শুনিনি।

গানটি প্রতুল বাবুর কণ্ঠে গানটা যখন আমার বাবা প্রথম শুনলেন, তিনিও যেন কোথায় হারিয়ে গেলেন। বারবার ওই একটি গান প্লে করছি, আর আমরা বাবা-ছেলে শুনছি।

সেই থেকে প্রতুল মুখোপাধ্যায় আমার প্রিয় শিল্পীদের একজন। বাংলাদেশে কয়েকবার আসলেও তাঁর সাথে দেখা হয়নি। কিন্তু প্রচণ্ড একটা ইচ্ছা ছিলো দেখা করার।

কলকাতার এক সাংবাদিক মারফত তাঁর মোবাইল ফোনের নম্বর জোগাড় করে কয়েকবার কথাও বলেছি। প্রথম দেখা হলো ২০১৬ সালে নভেম্বর মাসে। তারপর থেকে ইন্টারনেটে নিয়মিত যোগাযোগ। আমি মেসেজ দেই, উনি উত্তর দেন। কত প্রশ্ন যে করি! উনি উত্তর দিতে ক্লান্ত বোধ করেন না।

হঠাৎ করেই মনে হলো 'বাংলায় গান গাই' সম্পর্কে কিছু জানি না। মনে হতেই প্রশ্ন। দিলেন উত্তর।

প্রতুল মুখোপাধ্যায় জানালেন, ১৪০০ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখে গানটি লেখা ও সুরারোপ। ১৪০১ সালের চৈত্র সংক্রান্তিতে প্রথম গানটি প্রচারিত হয়। এই ১৪২৫ সালে গানটির ২৫ বছর পূর্তি হলো।

https://www.youtube.com/watch?v=6JT7_EDzBOM

ধন্যবাদ সেই দোকানিকে, যিনি প্রথম প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের (জেঠু বলি)  সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। যতদিন বাংলা-বাঙালি থাকবে, ততদিন 'বাংলায় গান গাই' থাকবে। বাংলা গানের জয় হোক।