কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইলেন কামাল মজুমদার

বীর বাঙালী
Published : 4 Jan 2012, 03:26 PM
Updated : 4 Jan 2012, 03:26 PM

বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভি'র সাংবাদিক অপর্ণা সিংহকে মারপিটের একদিন পর সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করার পাশাপাশি ''অনাকাঙ্কিত এ ঘটনার জন্য সাংবাদিক বন্ধুদের কাছে ক্ষমা'' চাইলেন কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি।

রাজধানীর একটি আসন থেকে নির্বাচিত এ সরকার দলীয় সংসদ সদস্য বলেন, ''আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা মিথ্যা ও সাজানো। আমি তাদেরকে মারিনি। রাগের মাথায় শুধু হাত দিয়ে বুম ও ক্যামেরা সরিয়ে দিয়েছি।''

বুধবার বিকেলে মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

মঙ্গলবারের ঘটনার বিষয়ে তিনি 'সাংবাদিকদের অবহিত করার জন্য' এই সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় প্রতিষ্ঠানটির প্রিন্সিপাল ফরহাদ হোসেন, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য একেএম দেলোয়ার হোসেন, মাহমুদূর রহমান, সুলতানা সিদ্দিকী, সাইদ আহমেদ টিপু, শামসুল আলমসহ স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকা ও সংসদ সদস্য মজুমদারের সঙ্গী শতাধিক যুবক উপস্থিত ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি সংবাদকর্মীদের প্রতি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ''আমি না, বরং তারা ক্লাস চলাকালে ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে শিক্ষক ও কর্মচারীরা তাদের বাঁধা দেয়। এসময় উভয় পক্ষের মাঝে ধস্তাধস্তি হয়। অথচ আমাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জড়ানো হয়েছে এ ঘটনায়।''

তিনি বলেন, ''বেসরকারি চ্যানেলটি তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে আমার ম্যানেজিং কমিটিকে সন্ত্রাসী বাণীয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের মোবাইলে ধারণ কৃত ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। আপনারা চাইলে তা দেখতে পারেন।'' তবে ফুটেজ দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি।

এদিকে বুধবার দুপুরে অপর্ণা সিংহসহ সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ গণমাধ্যম কর্মীদের মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। মানবন্ধন কর্মসূচীতে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিধানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া এবং সরকারের কাছে সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের শাস্তির জোর দাবি জানান।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এ মানববন্ধনে বক্তারা সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কামাল আহমেদ মজুমদারকে মোকাবেলা করারও আহবান জানান।

তার কড়া সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, 'একজন সংসদ সদস্য হয়ে এভাবে তিনি (কামাল আহমেদ মজুমদার) একজন সংবাদ কর্মীর (অপর্ণা সিংহ) ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তার নিন্দা জানাবার ভাষা আমাদের নেই। এ ঘটনা স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করবে।'

জাতীয় প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি সৈয়দ আবদাল আহমদ বলেন, 'পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে একজন জনপ্রতিনিধির হাতে সাংবাদিক লাঞ্ছিত ও নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক। এটা স্বাধীন ও মুক্ত সাংবাদিকতার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করবে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আহত সাংবাদিক অপর্ণা সিংহের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। এই ঘটনার প্রতিবাদে সকল সাংবাদিককে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে থাকার আহবান জানাচ্ছি।

ডেইলি স্টার পত্রিকার মেট্রো এডিটর আব্দুল জলিল বলেন, 'একজন সংসদ সদস্য হয়ে এভাবে তিনি একজন সংবাদ কর্মীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তার নিন্দা জানাবার ভাষা আমাদের নেই। সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদারকে মোকাবেলা করতে হবে। কামাল আহমেদ মজুমদারের অতীত কর্মকাণ্ড সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।'

কামাল আহমেদ মজুমদারের শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, 'তিনি যে আচরণ করেছেন সেই আচরণের জন্য সরকারের কাছে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানাই।'

ঢাকা রিপোর্টার্র্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, 'তিনি সাংসদ হোন আর যেই হোন অপরাধ যদি করে থাকেন তাহলে তার শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।'

ক্যামেরা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের নেতা হারুনুর রশীদ বলেন, 'কেবল এ ঘটনাই নয়, প্রতিনিয়তই কোন না কোনভাবে সাংবাদিকরা নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। দু'দিন আগেও এক সাংবাদিকের ওপর গাড়ি তুলে দেওয়া হয়েছে। তাই সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আমাদের আবেদন সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিধানে তারা যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়।'

আরটিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক (সিএনই) লুৎফর রহমান বলেন, 'আমরা সাংবাদিকরা মুক্তভাবে কাজ করতে চাই। এতে সহযোগিতা করা সরকার ও জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব। কিন্তু সেই জনপ্রতিনিধিরাই যদি সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনে এভাবে বাঁধা সৃষ্টি করে তাহলে মুক্ত সাংবাদিকতা ব্যহত হবে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।'

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউ সেক্রেটারি সাজ্জাদ আলম খান তপু, দৈনিক সমকালের চিফ রিপোর্টার শাহেদ চৌধুরী, বাংলাবাজার পত্রিকার চিফ রিপোর্টার মশিউর রহমানসহ টিভি, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার বিক্ষুব্ধ সংবাদ কর্মীরা।