২০১১ সালে ইভটিজারদের হাতে খুন ৭৪০

বীর বাঙালী
Published : 7 Jan 2012, 03:01 PM
Updated : 7 Jan 2012, 03:01 PM

যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্ততার শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছে ৪শ জন
যৌতুকের কারণে খুন ২৯৪, ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৫৬৭ জন

২০১১ সালটি বাংলাদেশের বেশ আতঙ্কের ও কলঙ্কের ছিল। কারণ এ বছরটিতে ইভটিজারদের হাতে শুধু ছাত্রী নয় তাদের সাথে বাবা-মাও খুন হয়েছে। ইভটিজিংয়ের অতিরিক্ত মাত্রার কারণে রাজধানীসহ দেশব্যাপী শত শত ছাত্রী, তরুণী ও গৃহবধূ উত্ত্যক্ত প্রতিরোধে গত এক বছর দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় বাঁধ্য হয়েছিলো সরকার। তারপরও ইভটিজিংয়ের কারণে আত্মাহুতি দিয়েছেন বিভিন্ন বয়সের ৪০০ জনের বেশি ছাত্রী, তরুণী ও গৃহবধূ। ৩৪ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৫ হাজার ৮৩৯ জন। হঠাৎ করে ইভটিজিং গত বছরের প্রথম দিকে সামাজিক ব্যধিতে পরিণত হয়। রাজধানীর বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে এ মহামারী। সামাজিক ব্যধি নয় ইভটিজিংকে সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে মহামারী বলেও মন্তব্য করা হয়।

ইভটিজারদের কবলে পড়ে আত্মহুতি দিয়ে লজ্জা নিবারণের পথ বেছে নিয়েছেন অনেক স্কুল ছাত্রী তরুণী ও নারী। এছাড়াও ইভটিজারদের প্রতিরোধে অনেক অভিভাবক, প্রতিবেশী, পথচারীসহ অন্তত ৫৫ জন হতাহত হবার খবর পাওয়া গেছে।

সুশীল সমাজের সূত্রগুলো জানায়, গত বছর জুড়ে শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বজুড়ে নেতৃত্ব থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের প্রাপ্তির সীমা ছিলো আকাশচুম্বি। এতোসব প্রাপ্তির পরও বন্ধ হয়নি নারীর প্রতি সহিংসতা। দেশজুড়ে ইভটিজিং, ধর্ষণ, হত্যা, হাত কেটে নেয়া, চোখ তুলে ফেলার মতো ঘটনা ছিল আলোচনার শীর্ষে। নারী উত্ত্যক্তকরণ বা যৌন হয়রানির মতো ইভটিজিংয়ের ঘটনা আলোচিত হয় ব্যাপকভাবে। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাপকহারে ইভটিজারদের প্রতিরোধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর তৎপরতার ফলে গত বছরের শেষ দিকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বন্ধ হয়ে যায়নি ইভটিজিং নামের মহামারী। পুলিশ এখনো বিশেষ করে মেয়েদের স্কুলের সামনে এবং মেয়েদের যাতায়াতের স্থানগুলোতে কড়া নজরদারি করছে। র‌্যাব ও পুলিশ সদরফতর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ইভটিজারদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান এবং নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১ সালে জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ইভটিজিং বা উত্ত্যক্ততার শিকার হয়েছেন ৮৯৯ জন স্কুল ছাত্রী, তরুণীসহ বিভিন্ন বয়সি নারী। এ সংখ্যা ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০০০ ছাড়িয়ে যাবে। খুন করা হয় ৭৪০ জনকে। ইভটিজারদের যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্ততার শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৪শ' জন। যৌতুকের কারণে খুন হন ২৯৪ জন। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫৬৭ জন। অর্থাৎ ২০১১ সালে ১০ মাসে ৩৪ ধরনের নির্যাতনে শিকার হয়েছে মোট ৫ হাজার ৮৩৯ জন বিভিন্ন বয়সের নারী। বছর শেষে এ সংখ্যা ৭০০০ এর কোটায় পৌঁছর আশংকা রয়েছে। পূর্ববর্তী বছরগুলোর হিসাবে এ ধারণা বা আশংকা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

মানবাধিকার সংগঠন 'অধিকার'-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৯৭ জন নারী এসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন। ৪৫৮ নারী যৌতুক সংশ্লিষ্ট কারণে নির্যাতিত, ৬৭৫ জন হন ধর্ষণের শিকার ও যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন ৬৮৪ জন নারী।

অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে আশংকাজনকহারে। শুধু রাজধানীতেই গতবছরে খুন হয় ১৬ জন গৃহকর্মী। এ ছাড়া শতাধিক নারী গৃহকর্মী খুনের তথ্য পাওয়া গেছে। বছরের মাঝামাঝি সময়ে নারী নির্যাতনের অন্যতম আলোচনায় ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক রুমানা মঞ্জুরের উপর স্বামীর বর্বরোচিত নির্যাতন ঘটনা। ৫ জুন মেধাবী এ শিকিার চোখ তুলে নেয়ার চেষ্টা করেন তার স্বামী হাসান সাঈদ। এতে চিরদিনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন রুমানা। এর পরিপ্েেরিত পুলিশ হাসান সাঈদকে গ্রেফতার করে। গত ৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসান সাঈদ আত্মহত্যা করেন বলে সংবাদে প্রকাশ। গত বছর ৪ ডিসেম্বর উচ্চ মাধ্যমিক পরীা দিতে আগ্রহ প্রকাশ করায় নরসিংদীর ভেলানগরের হাওয়া আক্তার জুঁইকে তার স্বামী রফিকুল ইসলাম চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হাতের পাঁচটি আঙ্গুল কেটে দেয়। তবে দমে যাননি হাওয়া আক্তার জুঁই। উচ্চমাধ্যমিক পরীার ফরম পূরণ করেছেন তিনি। পুলিশ রফিকুলকে গ্রেফতার করেছে।

বছরের শেষদিকে গত ১১ নভেম্বর যৌতুকের কারণে বিয়ের মাত্র ৫ ঘণ্টা পর নিজের বিয়ে ভেঙে দেন বরগুনার তরুণী ফরজানা ইয়াসমিন নিপা। যৌতুককে না বলে নারীসমাজসহ দেশবাসীর কাছে অনুপ্রেরণার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তিনি। সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে ফারজানাকে এজন্য সংবর্ধনাসহ 'সাহসী কন্যা' উপাধিতে ভূষিত করা হয়। সরকারি চাকরিরত যৌতুকলোভী স্বামী হিরণ চাকরি থেকে হন বরখাস্ত।

***
কামাল শাহরিয়ার