ধর্ষণ নিয়ে নসিহতের রকমফের

সাকিব জামাল
Published : 27 March 2018, 01:10 PM
Updated : 27 March 2018, 01:10 PM

অনেকেই ধর্ষিতাদের অহরহ নানা দোষত্রুটি খুঁজে পান। আসলে আপনারা যারা কেবলই ধর্ষিতাদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়ান, নানা নসিহত করেন – তারা নিশ্চিত ভুল পথে হাঁটছেন! কিছু প্রশ্ন এবং উত্তরে বিষয়টি পরিষ্কার হবে বলে লেখার গতিপথ সেভাবে আগানোর চেষ্টা করছি।

যদি কোনো ধর্ষক বলে – "ঐ নারীর পোশাক এবং চলাফেরা খোলামেলা-উগ্র ছিলো, তাই তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে " ধর্ষকের এই উত্তর আপনি মেনে নিবেন? তাকে অপরাধ থেকে বেকসুর খালাস দেবার জন্য ওকালতি করবেন?  যদি মেনে না নেন তবে তার পোশাক বা চলাফেরা সত্যিকার অর্থে ধর্ষণের জন্য কতোটুকু দায়ি হলো?

আসলে দায়ি ধর্ষকের লালসা, কামনা-বাসনা, নৈতিকতার অধ:পতন। আর যদি ধর্ষকের ঐ উত্তর আপনি মেনে নেন তবে আপনারও ধর্ষণকামী মন – আপনি সাধু হন আর চোর যা-ই হন।

এখন আরেকটি প্রশ্ন – বোরকা পড়া মেয়ে  কি ধর্ষিত হয়নি?  হয়েছে। তাই এক্ষেত্রেও বলা যায় ধর্ষক পোশাক দেখেনা, বোঝেনা- দেখে নারীর দেহ, বোঝে ধর্ষণ।

রাতে-দিনে উভয় সময়ে নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি?  হয়েছে । চলাফেরার সময় কতটুকু দায়ি হলো তাহলে? নির্জন রাতে-দিনে নারী ধর্ষিত হয়। একা নারী ধর্ষিত হয়, সঙ্গীসহ নারী ধর্ষিত হয়!

যে কোনো বয়সের নারী ধর্ষিত হয় কি না? হচ্ছে! শিশু, কিশোরী, যুবতী, বৃদ্ধা – ধর্ষক সুযোগ পেলে কাউকে রেহাই দেয় না।

যে কোনো জায়গায় নারী ধর্ষণের শিকার হতে পারে?  হ্যাঁ, ঘরে বাইরে পথে-ঘাটে সব জায়গাই আমরা ধর্ষণের শিকার হতে নারীকে দেখেছি। স্কুলের বারান্দায়ও দেখেছি, অন্য ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ছাত্রী ধর্ষণের খবর আমরা পত্রিকায় দেখেছি।

শীতকালে পোশাকের স্তুপে ঢাকা নারীও ধর্ষিত হয় ! গরমকালের হালকা পোশাকের নারীও ধর্ষিত হয় ।

এখন আসি নসিহতের রকমফেরে! আমি চাই ধর্ষণ বন্ধ হোক, আপনিও তাই চান । কিন্তু নসিহত করতে গিয়ে আমরা বিতর্কে জড়িয়ে যাই। কেন? চাওয়াতো একই! তবে কেন বক্তব্যে অসহিষ্ণুতা? কারণ, একজন মনে করি ইনি যেভাবে বলছেন তা ঠিক নয় – বোধহয় নারীদের একটু সুবিধা দেয়া হলো! আরেকজন ভাবেন – এই বুঝি নারীদের শতভাগ অধিকার কেড়ে নেয়া হলো!

সাধারণত ধর্ষণের বক্তব্য বা ওয়াজ দুটোতেই প্রাধান্য পায় পোশাক! সত্য কথা হলো – পোশাক বিতর্ক নয়, ধর্ষণ নিয়ে বিতর্ক হোক বা হওয়া উচিত। শালীনতা সব সময়ই উত্তম – কথা, যুক্তি, পোশাক সবক্ষেত্রেই শালীনতা আছে। চিন্তার শুদ্ধতা আছে। নির্মোহ ভাবে ভাবনার ব্যাপারটিও আছে।

সুতরাং, মূল বিষয় হলো মানসিকতার পরিবর্তন। সব ধরনের নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি। তাই আসুন- ধর্ষণমুক্ত সমাজ গড়তে আমরা ধর্ষকদের নসিহত করি!