সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল
যানজট কমাতে একের পর এক পরিকল্পনা নেওয়া হলেও আশানুরূপ ফল এখনও এখনও চোখে পড়ছে না। ফলে সীমাহীন যানজট যন্ত্রণা নিয়ে চলতে হচ্ছে ঢাকাবাসীকে ।
যানজট কমানোর একটি কার্যকর পন্থা ছিল ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত বাস টার্মিনালগুলোকে বিকেন্দ্রীকরণ। অর্থাৎ এগুলোকে রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রীয় ও ব্যস্ত স্থান থেকে কিছুটা বাইরের দিকে সরিয়ে নেওয়া।
রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোর অবস্থান ঢাকার প্রাণকেন্দ্র, জনবহুল এবং মূল শহরের মধ্যেই। ঢাকার অন্যতম চারটি বাস টার্মিনাল হল সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, গাবতলী বাস টার্মিনাল ও মহাখালী বাস টার্মিনাল, গুলিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালটি।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল দক্ষিণ ঢাকা সিটি করপোরেশনের সায়েদাবাদ এলাকায় অবস্থিত। এখান থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা অঞ্চলে গাড়ি চলাচলা করে। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালকে যদি সায়েদাবাদ থেকে স্থানান্তর করে চিটাগং রোডের শনির আখরা এবং পোস্তাগোলার পরে কোনো জায়গায় দুটো আলাদা বাসস্ট্যান্ড করে দেওয়া সম্ভব হয় তবে এসব গাড়িগুলোকে আর মূল ঢাকায় প্রবেশ করতে হবে না। ফলে যাত্রাবাড়ি থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত দীর্ঘরাস্তা এবং আশেপাশের রাস্তায় এই টার্মিনালটির কারণে সৃষ্ট যানজটের তীব্রতা হ্রাস পাবে অনেকাংশে।
গাবতলী বাস টার্মিনালও একটি জনাকীর্ণ এবং আন্তঃজেলা যাত্রীবাসে পরিপূর্ণ একটি বাস টার্মিনাল। রংপুর, পাবনা, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর ইত্যাদি অঞ্চলে যাতায়াতকারী পরিবহনগুলোর বাস টার্মিনাল এটি। সুতরাং গাবতলী বাস টার্মিনালকে যদি এখান থেকে স্থানান্তর করে আমিন বাজারের কাছে নেওয়া যেতে পারে, তবে এসব বাসগুলোকে গাবতলী-শ্যামলী এসব এলাকায় প্রবেশ করতে হবে না। ফলে মিরপুর, গাবতলীসহ আশেপাশের রুটে যানজট বহুলাংশে হ্রাস পাবে।
রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত একটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল হচ্ছে মহাখালি বাস টার্মিনাল। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইল, শেরপুর, নেত্রকোনা ইত্যাদি অঞ্চলে গাড়ি চলাচল করে। এই বাস টার্মিনালকে যদি এখান থেকে স্থানান্তর করে বিশ্বরোড বাস স্ট্যান্ডের কাছে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে মহাখালী, বনানী এসব রুটসহ সংযোগকারী অনেক রাস্তায় যানজট কমে আসবে।
গুলিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালটি থেকে প্রায় দেশের সব জায়গায় গাড়ি যাতায়াত করে থাকে। বলতে গেলে এটি সারা ঢাকা শহরেই যানজট সৃষ্টিতে কমবেশি ভূমিকা রাখে। যে কারণে এ বাস টার্মিনালটির বিকেন্দ্রীকরণ বেশি জরুরি। এটি ঢাকার মূল অঞ্চল থেকে সরিয়ে বাবুবাজার ব্রিজ পেরিয়ে কেরানিগঞ্জের কোনো অঞ্চলে একটি জায়গা করে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া, দেশের যেসব অঞ্চলে এখান থেকে বাসগুলো চলাচল করে তার জন্য মূল ঢাকার বাইরে ভিন্ন ভিন্ন ছোট বাসস্ট্যান্ড নির্ধারণ করে দিতে হবে । এটি করা সম্ভব হলে গুলিস্থান, পল্টন, শাহবাগসহ আশেপাশের দীর্ঘ যানজট বেশ কমে আসবে বলে মনে করছি।
এসব বড় বড় এই বাস টার্মিনালগুলো বিকেন্দ্রীকরণ করতে পারলে আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসগুলোকে ঢাকার মধ্যে প্রবেশ করতে হবে না। ফলে যানজট কমে আসবে নিশ্চিত। ঢাকার ভিতরে বাস সার্ভিসের গতি বেড়ে যাবে এবং নতুন বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের পৌঁছাতেও বেগ পেতে হবে না।
তবে এ কাজটি করতে গেলে বাস মালিক সমিতি বা শ্রমিকশ্রেণি থেকে বিরোধীতা আসতে পারে। এটি স্বাভাবিকও। এখানে তাদের আশ্বস্ত করতে হবে এটি কোনো উচ্ছেদ অভিযান নয়, বরং যানজট কমাতে বাস টার্মিনালগুলোকে স্থানান্তর করা।
ভুক্তভোগী নাগরিক হিসেবে বাস টার্মিনালগুলো রাজধানীর বাইরে স্থানান্তর করার বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জরুরি ভিত্তিতে ভেবে দেখার এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি ।