নেতৃত্ব সংকটে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাত্র রাজনীতি

স্বকৃত রহমান
Published : 23 Sept 2011, 05:08 AM
Updated : 23 Sept 2011, 05:08 AM

নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাত্র রাজনীতি । ছাত্র সংগঠংনগুলোর দীর্ঘদিন থেকে সম্মেলন না হওয়া ও নেতৃত্বে অছাত্র কুছাত্র থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে । ছাত্রদল, দুই ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, এমনকি কঠোর নিয়মতন্ত্রিকভাবে পরিচালিত ছাত্রশিবিরেও নিস্ক্রিয় অবস্থা বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা ছাত্রদলের সম্মেলন হয়নি সাত বছর। জেলা সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও রাজনীতিতে দীর্ঘদিন থেকে নিস্ক্রিয় । পৌর ছাত্রদলের কমিটি কয়েক মাস আগে করা হলেও সেখানে অছাত্রদের নিয়ে কমিটি ঘোষনা করায় কার্যত অচল হয়ে পড়েছে ছাত্রদল । জেলার ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে আহ্বায়ক কমিটি দিয়েই চলছে দীর্ঘদিন । অনেকের হামলা মামলার ভয়ে রাজনীতি থেকে দূরে থাকছেন। কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ন আহ্বায়ক হাসান বাবু জানান, শীঘ্রই কলেজ ও জেলা ছাত্রদলের সম্মেলন হবে । তবে কবে নাগাদ হতে পারে তা জানাতে পারেননি তিনি । কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালিত হয় অনিয়মিত । কলেজে দীর্ঘদিন থেকে ছাত্রলীগ কতৃক অবাঞ্চিত ঘোষনার পর কোন মিছিল মিটিং করতে পারে না ছাত্রদল।

অন্যদিকে, গত জুলাই মাসে ফাইজার রহমান কনককে সভাপতি ও জিয়াউর রহমান আরমানকে সাধারন সম্পাদক করে ছাত্রলীগের চার সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি ঘোষনা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ তিন মাসেও পূর্নাঙ্গ কমিটি ঘোষনা না করায় নেতা কর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি কলেজ ছাত্রলীগে কোন কমিটি না থাকায় নতুন কমিটিতে ঠায় পেতে অন্তর্দ্বন্দ্বে ব্যস্ত নেতারা। ছাত্রলীগের সদর উপজেলা ও শহর কমিটির নেতারাও দীর্ঘদিন থেকে নিস্ক্রীয়। অপরদিকে, একসময়ের প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ও জাসদ ছাত্রলীগ মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর বেশ কিছু ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুললেও সংগঠন দুটি বর্তমানে প্রায় নিস্ক্রিয় । ২০১০ সালের শুরুর দিকে বাস ভাড়া অর্ধেক করা, জেলায় আন্ত:নগর ট্রেন সার্ভিস ও সরকারি কলেজে মাস্টার্স কোর্স চালুসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলে সংগঠন দুটির জোট ছাত্র অধিকার রক্ষা কমিটি । সফল ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠাংগুলোতে শক্ত অবস্থান গড়ে তুললেও, বর্তমানে সংগঠন দুটি নেতৃতের সংকটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। ঐ সময়ের সর্বদলীয় ছাত্র অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সিয়াম সারোয়ার জামিল প্রায় এক বছর থেকে ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন বলে জানা গেছে। সংগঠনের নিয়মানুযায়ী প্রতিবছর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তিন বছর থেকে কোন সম্মেলন হয়নি জেলা ছাত্র ইউনিয়নের । সংগঠনের কলেজ কমিটিও প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। তবে শ্রীঘ্রই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জেলা কমিটির যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মুন।

অপরদিকে, জেলার অন্যতম প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠন জাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন থেকে অছাত্ররা থাকায় সাধারন ছাত্রদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কার্যত ক্যাডার বাহিনীতে পরিনত হয়েছে সংগঠনটি । এই সংগঠনটি নিয়ন্ত্রন করে একটি ঠিকাদার গোষ্ঠী। জেলা শাখার সভাপতি মাসুদ রানা চাকুরিজীবী ,সহ সভাপতি টুটুল হোসাইন ও রিমন রোহান উভয়েই এক সন্তানের জনক । সংঠনটির সরকারি কলেজ কমিটি এক সময় শক্তিশালি থাকলেও এখন কোন কমিটিই নেই ।

ভাল অবস্থায় নেই ছাত্র শিবিরও । চাঁপাইনবাবগঞ্জকে এক সময় শিবিরের ঘাটি বলা হলেও আওয়ামী প্রশাসনিক চাপে কোন কর্মসূচিই পালন করতে পারছে না সংগঠনটি । মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর দুই ছাত্রলীগ (আওয়ামী ও জাসদ) এবং ছাত্র ইউনিয়নের চাপে ক্যাম্পাস থেকে কার্যত বিতাড়িত হয়েছে সংগঠনটি । তবে গোপনে কার্যক্রম চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে । অন্যদিকে, সমাজতন্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্র ফেডারেশনের জেলা আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও কোন কার্যক্রম নেই ।